শিক্ষাবার্তা ডেস্ক, ঢাকাঃ ‘আড়াই মাসেও বেতন হয়নি ৩৭ হাজার শিক্ষকের’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ব্যর্থতা না হলেও দায়িত্বহীনতার পরিচায়ক।
শিক্ষকদের যে বেতন তা দিয়ে সংসার চালানো দুঃসাধ্যই বটে। বিজ্ঞপ্তির প্রায় দেড় বছর পর নিয়োগ পেয়েছেন প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিকের ৩৭ হাজার শিক্ষক। যোগদান করার আড়াই মাসেও তাদের বেতন ছাড় করতে পারেনি মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে বেতন না হওয়ায় ঈদ বোনাস ও বৈশাখী ভাতাও আটকে গেছে তাদের।
ঈদের আগে বৈশাখী ভাতা এবং ঈদ বোনাস ছাড়ের তোড়জোড় চলছে। শেষ পর্যন্ত এটিও সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে শিক্ষকরা। এজন্য মন্ত্রণালয়-অধিদপ্তর পরস্পরকে দোষারোপ করছে।
৩ এপ্রিল অধিদপ্তর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে সাত ধরনের তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে জেলায় সদ্য যোগ দেয়া শিক্ষক সংখ্যা, গত ঈদুল আজহায় কতজন শিক্ষক উৎসব ভাতা পেয়েছেন, শিক্ষা ভাতাপ্রাপ্ত শিক্ষকদের প্রকৃত সংখ্যাসহ সাত ধরনের তথ্য চাওয়া হয়েছে। ১৫ দিনে এসব তথ্য হালনাগাদ করা সম্ভব নয়।
এত অল্প সময়ে এত তথ্য সংগ্রহ করে আদৌ উৎসব ভাতা দেয়া সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে শিক্ষকরাও সন্দিহান। তাদের অনেকেই বলছেন, ঈদের আগে এ ভাতা না পেলে পরে তা পাওয়ার নজির নেই।
মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হলো প্রত্যেকেই বিজয়ের কৃতিত্ব নিতে চায়, ব্যর্থতার দায় নয়। এ ক্ষেত্রেও ব্যত্যয় ঘটেনি। অধিদপ্তর বলছে, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কিছু তথ্য চাওয়া হয়। সে তথ্য সরবরাহ না করায় অর্থ মন্ত্রণালয় বেতন-ভাতা ছাড় করেনি। মন্ত্রণালয় বলছে, অধিদপ্তরের তথ্যে গরমিল পাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। বারবার তথ্য চাওয়ার পরও অধিদপ্তর সেসব তথ্য দিতে পারেনি। সে জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সম্ভব হয়নি।
নতুন যোগ দেয়া শিক্ষকরা বেতন-ভাতা না পেয়ে মানবেতর দিন যাপন করছেন। একজন শিক্ষকের ভাষ্যে তা সহজেই অনুমেয়। কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার এক শিক্ষক বলেন, চাকরিতে যোগ দিলাম আড়াই মাস। এখন পর্যন্ত বেতন হয়নি। সামনে ঈদ। এখন ঈদ বোনাসও না পেলে সংসারে মুখ দেখাব কীভাবে! এমন বক্তব্য মানবিক বোধসম্পন্ন একজন মানুষের হƒদয় ছুঁয়ে যাবে। চাকরিতে প্রবেশকালীন একজন প্রাথমিক শিক্ষেকের বেতন আহামরি কিছু নয়। এ সময়েই তারা তিক্ত অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। একজন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন, তার উপজেলায় রাজস্ব খাতের শিক্ষকদের বেতন-বোনাস দেয়া হলেও প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষকদের বেতন দেয়া যায় না। আইবাস প্লাসে বরাদ্দের টাকা এলেও কোডসংক্রান্ত জটিলতায় প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষকদের বেতন দেয়া সম্ভব হয়নি। কোড-সংক্রান্ত জটিলতার কথা প্রায়ই শোনা যায়। নিজেদের দায় সফটওয়্যারের ওপর চাপিয়ে দেয়া সহজ। তাই কোনো কারণে সফটওয়্যারে গোলযোগ দেখা দিলে বিকল্প ব্যবস্থাও থাকতে হবে। ঈদুল ফিতরের কয়েকদিন আগেই সরকারি ছুটি শুরু হবে। মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে উচিত হবে ছুটি শুরু হওয়ার আগেই শিক্ষকরা যেন বেতনের টাকা তুলতে পারেন, সে লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১০/০৪/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়