সবাইকে ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখিয়াছেন, ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ/ তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাকিদ’। মুসলিম জীবনে ঈদ স্রষ্টার এক অমূল্য নিয়ামত। মানুষে মানুষে সমপ্রীতি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠার এক স্বর্গীয় মাধ্যম, আসমানি তাকিদ। ঈদ এলেই খুশির বান ডাকে মুসলিম জাহানে। আজ সন্ধ্যায় পশ্চিমাকাশে শাওয়াল মাসের নূতন চাঁদ দেখা দিলে পবিত্র ঈদুল ফিতরের সেই খুশির আমেজ ছড়িয়ে পড়িবে সারা বাংলাদেশে। আর চাঁদ দেখা না দিলে ঈদ পালিত হইবে পরবর্তী দিনে। সারা বিশ্বের মুসলমানদের উল্লেখযোগ্য প্রধান ধর্মীয় উত্সব এই ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করিয়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশে মাসাধিক কাল ধরিয়া চলিতেছে কেনাকাটাসহ নানা প্রস্তুতি। জাগতিক এই প্রস্তুতির পাশাপাশি তাহারা এই আনন্দ উত্সবে শরিক হইতে আধ্যাত্মিকভাবেও তৈরি হন। পবিত্র মাহে রমজানে রোজা, ইফতার, তারাবিহ, লাইলাতুল কদর পালন, কুরআন তিলাওয়াত, জাকাত-ফিতরা ও দান-খয়রাত প্রদান ইত্যাদি ইবাদতের মাধ্যমে তাহারা গ্রহণ করেন আত্মশুদ্ধির মহান দীক্ষা। ইহার পর ঈদুল ফিতর আসে তাহারই পূর্ণতার সুসংবাদ নিয়া। ঈদুল ফিতরের শাব্দিক অর্থ আসলে রোজা ভঙ্গের আনন্দ। এক মাস রোজা পালনের মাধ্যমে একজন রোজাদার যাবতীয় গুনাহ হইতে মুক্ত হইয়া সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর ন্যায় মাসুম বা নিষ্পাপ ব্যক্তিতে পরিণত হন। ইহাতে তিনি যে আত্মিক প্রশান্তি লাভ করেন, তাহারই আনন্দঘন মুহূর্ত হইতেছে ঈদুল ফিতর।

আইয়ামে জাহিলিয়াত তথা ইসলামপূর্ব অন্ধকার যুগে আরব দেশে উকাজ মেলাসহ নানা প্রকার উত্সব জনপ্রিয় ছিল। সেই সময় মদিনার আনসারগণ ‘মিহিরজান’ ও ‘নওরোজ’ নামে দুইটি উত্সবও পালন করিতেন। মহানবি হজরত মুহম্মদ (স) মদিনায় হিজরত করিয়া এই লক্ষ্য-উদ্দেশ্যহীন আনন্দ-উত্সবের পরিবর্তে আত্মশুদ্ধির পবিত্র স্পর্শময় ও বহুবিধ মানবকল্যাণধর্মী ঈদুল ফিতরের প্রবর্তন করেন এবং ঘোষণা করেন-‘লিকুল্লি কওমিন ঈদ, হা-যা ঈদুনা’। অর্থাত্ প্রত্যেক সমপ্রদায়ের নিজস্ব আনন্দ-উত্সব আছে। আমাদের এই আনন্দ-উত্সব এই ঈদ। সেই অনুযায়ী দ্বিতীয় হিজরির পহেলা শাওয়াল তথা ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ মার্চ প্রথম ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হয়। এই ঈদুল ফিতর আমাদের ন্যায়, সাম্য, ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব, দয়া, মানবতা, সহানুভূতি ও মহামিলনের শিক্ষা দেয়। ঈদ আমাদের অন্যায়-অবিচার, ঘৃণা-বিদ্বেষ ও হানাহানি-কাটাকাটি হইতে বিরত থাকিতে বলে। কবির ভাষায়—‘আজ ভুলে গিয়ে দোস্ত দুশমন হাত মিলাও হাতে/ তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরিদ’। রোজাদারদের আত্মিক পরিশুদ্ধি লাভের কারণেই আমাদের মধ্যে দূর হইয়া যায় সকল সংকীর্ণতা ও ভেদাভেদ। মূলত ঈদ যে আনন্দের বার্তা বহিয়া আনে, তাহার মর্মমূলে রহিয়াছে শান্তি ও ভালোবাসা। পরস্পরের বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হইয়া উঠিবার এক মহান উপলক্ষ এই ঈদ। ইহার আগমনী সুরে আজ বাজিয়া চলিয়াছে মানুষে মানুষে মিলনেরই আকুতি।
এবার সরকার যথাযথ পূর্বব্যবস্থা গ্রহণ করায় ঈদ উপলক্ষে ঘরে ফেরা মানুষকে দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনা পোহাইতে হইতেছে না। আপনজনের নিকট ফিরিয়া তাহারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিতেছেন। আমরা আশা করি, ঈদুল ফিতরের পরও মানুষের কর্মস্থলে ফেরা হইবে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আমরা সকলের সুখ-শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতি কামনা করি। আমাদের প্রিয় পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, এজেন্ট ও শুভানুধ্যায়ীসহ সবাইকে জানাই পবিত্র ঈদুল ফিতরের অনাবিল শুভেচ্ছা—ঈদ মোবারক।

শুভেচ্ছান্তে

আমিনুল ইসলাম

নির্বাহী সম্পাদক

শিক্ষাবার্তা ডট কম