ঢাকাঃ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক শাস্তি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক পরিপত্রে বলা হয়েছে, শিক্ষকদের দায়িত্ব হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা প্রদানের পাশাপাশি মানসিক বিকাশে সহায়তা করা। কারণ শারীরিক শাস্তি মানসিক বিকাশের অন্তরায়। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য এক পরিপত্রে শারীরিক শাস্তি নিষিদ্ধ করে। আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সনদেও শিশুদের ওপর দৈহিক ও মানসিক নির্যাতন নিষিদ্ধ। বাংলাদেশ সেই সনদে অনুস্বাক্ষরকারী একটি দেশ।
বাংলাদেশের দণ্ডবিধিতেও এসংক্রান্ত আইন রয়েছে। শিক্ষকদের যেসব প্রশিক্ষণ রয়েছে, সেখানেও শিশুদের শাস্তি না দিয়ে আনন্দের মাধ্যমে শিক্ষাদানের ওপর জোর দেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক শাস্তি প্রদান কি বন্ধ হয়েছে?
১৯৮৯ সালের ২০ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিশ্বের শিশুদের মৌলিক মানবাধিকার, মর্যাদা রক্ষা, জীবনমান উন্নয়ন, স্বাধীনতা, নিরাপত্তা, কল্যাণ এবং তাদের বিকাশের স্বার্থে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সনদটি গৃহীত হয়। ১৯৯৯-এর ১২ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশে সনদটি কার্যকর হয়েছে। জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদের ১৮ ও ১৯ ধারায় আইনি, প্রশাসনিক, সামাজিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুরা যাতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, ইনজুরি এবং কোনো ধরনের অন্যায় সুবিধাভোগীর শিকার না হয়, সে জন্য উপযুক্ত সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে রাষ্ট্রকে বলা হয়েছে। শিশুর ওপর সব শাস্তি বন্ধ করার জন্য এরই মধ্যে বাংলাদেশ সরকার বিদ্যালয়ে শারীরিক শাস্তি প্রদান নিষিদ্ধ করেছে। ২০১১ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেশের সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, কারিগরি শিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি দেওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে একটি পরিপত্র জারি করে।
তার পরও এ নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না কেন? গত ৩০ এপ্রিল ছিল শিশুদের প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তি বিলোপসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক দিবস। এই দিবস উপলক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে, দেশে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত অন্তত ৩৯টি শিশু শিক্ষকের কাছে শারীরিক ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও পারিবারিক বা সামাজিক পর্যায়ে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবাসিক ব্যবস্থাপনা, দিবাযত্ন কেন্দ্র, কোচিং সেন্টার ইত্যাদি পর্যায়েও শিশুদের নানা শারীরিক ও মানসিক শাস্তি প্রদান এবং তাদের সঙ্গে অবমাননাকর আচরণের অভিযোগ রয়েছে।
আনন্দের ভেতর দিয়ে যে শিক্ষা দেওয়া হয়, তা শিক্ষার্থীরা অনেক সহজে ধারণ করতে পারে এবং তাদের মানসিক বিকাশও অনেক ভালো হয়। কাজেই শাস্তি নয়, আনন্দের মধ্য দিয়ে শিক্ষা দেওয়া হোক শিশুদের।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৩/০৫/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তা