আগামীদিনের শিক্ষা ও সেবায় যা করতে হবে

।। ড. হাসনান আহমেদ।।
জাতীয় শিক্ষা-সেবা পরিষদ (জাশিপ) নিয়ে বেশ কয়েকটা লেখা এ কলামে ইতোমধ্যেই লিখেছি। অনেকেই জেনে গেছেন যে, এটা কোনো রাজনৈতিক জোটের আত্মপ্রকাশ নয়, নয় কোনো রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠন। এত কথা এভাবে বলছি এ কারণে যে, আমাদের এ সমাজে শিক্ষা ও সেবার গুরুত্ব ও বাস্তব দশার তুলনায় রাজনৈতিক এ্যাজেন্ডা, হার-জিত, পক্ষ-বিপক্ষ, আঘাত-প্রত্যাঘাত নিয়ে অনুসন্ধিৎসা ও কর্ম-অপকর্ম অনেক বেশি। এদেশে রাজনীতির আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা, দমকা হাওয়া চলছে। মানুষ এতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।

এদেশের মানুষ ও সমাজ রাজনীতি ছাড়া আর কিছুই বুঝতে চায় না। রাজনীতি সব পেশার সেরা পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনীতিবিদদের জিভ দিয়ে আমরা প্রাত্যহিক জীবন, জীবনের চাওয়া-পাওয়া ও কর্মের উৎকর্ষের স্বাদ গ্রহণ করি। কম পড়লে পরে টের পাই, যদিও জীবনের সবকিছু রাজনীতি দিয়ে পরিচালিত হয় না। যে দেশের শিক্ষার মান ভালো না, সমাজে সুশিক্ষিত লোকের অভাব, সে দেশের রাজনীতিও ভালো হয় না।

সমাজের মানুষ যা ডিজার্ভ করে, তাই পায়। যদি প্রশ্ন করা হয় জীবন ও সমাজের জন্য শিক্ষা ও সেবা আগে, না-কি রাজনীতি আগে?। আমি নিশ্চিত, এদেশের অনেক নমস্য ব্যক্তিই ভ্রæ কুঞ্চিত করে একটু আঁতেল ভাব দেখিয়ে বলবেন, ‘না, রাজনীতিই আগে’। কারণ আমরা অনেকেই রাজনীতিকে রুটি-রোজগার ও জীবনোন্নয়নের সিঁড়ি হিসেবে ভাবতে শিখেছি।

আসলে জন্ডিস রোগী প্রকৃতিকে হলুদ-রঙা দেখাটাই স্বাভাবিক। এদেশের রাজনৈতিক দল ও কোনো মামলার উকিল একচোখা বলেই জানি। কেউ বাম চোখে দেখেন, কেউবা ডান চোখে দেখেন। অথচ বিচারককে স্বভাবত দুচোখ মেলে দেখতে হয়। নইলে বিচার নিরপেক্ষতা হারায়। তেমনি একজন শিক্ষককেও ছাত্রছাত্রীদের দুচোখ দিয়ে দেখতে হয়, সবাইকে সমান চোখে দেখে মূল্যায়ন করতে হয়। শিক্ষা ও জনসেবা সার্বজনীন। এসব নিয়ে রাজনীতি করলে চলে না। এর পরিণতি শুভ হয় না।

এ ধরণের শ্রæতিকটু বেরস কথা আমার বদভ্যাসে পরিণত হয়েছে, তাই লেখনীতে চলে আসে। ‘ইল্লত যায় ধুলে আর খসলত যায় ম’লে’। রাজনীতি এদেশকে প্রকৃতপ্রস্তাবে এই একান্ন বছরে ভালো কিছু দিতে পারুক বা না পারুক, রাজনীতি নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা অনেক সমৃদ্ধ হয়েছে। রাজনীতি অন্তত আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে মানশূন্য করেছে, দলবাজিকে উস্কে দিয়ে মনের মধ্যে জিঘাংসার বীজ বপন করেছে। সামাজিক শিক্ষা ধ্বংস করেছে।

এদেশের সকল অনিষ্টের মূল এই দিগ্ভ্রষ্ট রাজনীতি। আবার রাজনীতি আমাদের অবকাঠামোগত উন্নতি দিয়েছে। জীবনের এই বেলাশেষে এসে এ সত্যটুকুু অন্তত প্রকাশ করা আমার জন্য সমীচীন মনে করি। আমার মনে হয়, আগে মানুষকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলতে হবে; তারপর তাকে দিয়ে রাজনীতি করাতে চাইলে করাতে হবে। তখন সে-মানুষ মানুষের কল্যাণে কাজ করবে।

আমরা বিভিন্ন পেশার বেশকিছু সমমনা ব্যক্তি একমত হয়েছি যে, যত কথাই আমরা ইনিয়ে-বিনিয়ে বলি না কেন, শিক্ষা ও জনসেবা এবং শিক্ষা-মানের উন্নতি ছাড়া দেশ ও জাতির উন্নতি অসম্ভব। সুশিক্ষা না থাকলে জনসেবাও হয় না। ‘অনভ্যাসের ফোঁটা কপাল চচ্চড় করে।’ আগে সামাজিক শিক্ষা ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার উন্নতি হতে হবে। এতেই এদেশের ‘যত বালা-মুসিবত’ ঠিকঠাক হয়ে যাবে বা দূরে পালাবে।

শিক্ষা কখনো আপনা-আপনি আসে নাÑ কেউ-না-কেউ কাউকে দিতে হয়, অথবা সুচিন্তার মাধ্যমে অর্জন করতে হয়। সুশিক্ষার জন্য একটা উপযুক্ত পরিবেশও লাগে। এতে থাকতে হবে জীবনমুখী শিক্ষা, কর্মমুখী শিক্ষা ও মানবিক গুণাবলী-সঞ্চারক শিক্ষা।

এসব নিয়ে এ কলামেই বারান্তরে বিস্তারিত লেখালেখির ইচ্ছে আমার আছে। এদেশে শিক্ষা ও সেবার মান বেশ নি¤œমুখীÑ শিক্ষিতসমাজ ও পরিসংখ্যান এ কথা বলে। তাই অবহেলিত এ দুটো বিষয়ের উন্নতিসাধন নিয়ে ‘জাশিপ’ কাজ করে। জাশিপ আসলে একটা পথের নাম, একটা সমাজ-উন্নতির এ্যাপ্রোচ, যা সাধারণ জনগোষ্ঠীকে সুশিক্ষিত করে, সামাজিক সেবা দিয়ে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে চায়।

জাশিপের হাতিয়ার হচ্ছে সুশিক্ষিত মানুষ। পদ্ধতি হচ্ছে, সমাজের অভ্যন্তরভাগের সুশিক্ষিত মানুষ দিয়ে সেই সমাজের অশিক্ষিত, নিরক্ষর ও অজ্ঞ মানুষদের কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে সুশিক্ষিত করা। এটি একটি অরাজনৈতিক, অলাভজনক, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহযোগিতায় দেশব্যাপী কাজ করতে চায়। আমরা দেখছি, সরকারের শিক্ষা ও সেবা খাতে ব্যয়ের সদিচ্ছার অভাব নেই। হাজার হাজার কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ রাখছে। কিন্তু আমাদের দেশের হিসাব তো একটু ভিন্ন, অনন্যসাধারণ। কাজির গরুর হিসাবের মতো।

খাতার হিসাব এবং গোয়ালের বাস্তবতা পৃথক। বাস্তবায়নে গলদ রয়ে যায়। ‘জাশিপ’ সরকারের সহযোগিতা নিয়ে এ দুটোকে মেলাতে চায়। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে শিক্ষা ও সেবার মান বাড়াতে চায়। কর্ম চালিয়ে যেতে পারলে উদ্দেশ্য অর্জন সম্ভব। আমাদের কাছে এটাই দেশসেবা ও ধর্মকর্মও বটে। ‘যুগান্তর’ কর্তৃপক্ষ দেশসেবার মানসিকতা নিয়ে প্রথম থেকেই ‘জাশিপ’কে সহযোগিতা করে চলেছে, এজন্য আমরা বাধিত।

বিগত ১৩ মে ২০২৩ ‘আগামীদিনের শিক্ষা ও সেবায় জাশিপ-এর করণীয়’ শীর্ষক আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জাশিপের ‘শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সেল’ এবং ‘গবেষণা ও উদ্ভাবন সেল’ দুটো বিষয় উপস্থাপন করে। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয় উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মোহা: শামীম এবং গবেষণা ও উদ্ভাবন বিষয় উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. মহান উদ্দিন।

বিভিন্ন পেশার লব্ধপ্রতিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন। অধ্যাপক ড. হাসনান আহমেদের সভাপতিত্বে এবং অধ্যাপক ড. ফরিদ এ. সোবহানীর সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সাবেক শিক্ষা সচিব জনাব মো. এন আই খান, অধ্যাপক ড. ইউসুফ মাহবুবুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. খন্দকার মোকাদ্দাম হোসেন, অধ্যাপক ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম, আইসিএমএবি’র প্রেসিডেন্ট জনাব মো. আবদুর রহমান খান, এফবিএইচআর’র প্রেসিডেন্ট জনাব মো. মোশাররফ হোসেন।

বক্তারা শিক্ষা-সেবা ও এ সম্পর্কীত গবেষণার উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তারা বলেন: স্কুল-মাদ্রাসা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি স্তরেই গুণগত-মানসম্পন্ন শিক্ষার ঘাটতি রয়েছে।

এছাড়া সামাজিক শিক্ষার মানও আশানুরুপ নয়। যে কোনোভাবে শিক্ষার মান বাড়াতে হবে, কর্মমুখী ও ব্যবহারিক শিক্ষার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নার্সিং পেশার যথেষ্ঠ চাহিদা আছে, কারিগরি শিক্ষারও অনেক চাহিদা। আমরা সে-সব দেশে জনশক্তি রপ্তানি করে প্রভ‚ত বৈদেশীক মূদ্রা অর্জন করতে পারি। আমাদের দেশে সরকারি নার্সিং ইন্সটিটিউট ও পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে প্রতিটা শহরে এগুলো গড়ে উঠেছে।

আমাদের ছাত্রছাত্রীরা সেখানে লেখাপড়া করছে, কিন্তু সবই সার্টিফিকেটসর্বস্ব। বাস্তবে তারা কাজ করতে শিখছে না। আমাদের শিক্ষাপদ্ধতি গাইডবই ও নোটবই নির্ভর বা মুখস্ত নির্ভর। আমরা শুধু মুখস্ত করছি, চিন্তা করছিনে। পড়ছি কিন্তু স্বপ্ন দেখছিনে, লেখাপড়া বাস্তবে প্রয়োগ করতে পারছিনে। ফলে আমাদের চিন্তাশক্তি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, বুদ্ধি ও জ্ঞান বিকশিত হচ্ছে না।

শিক্ষাব্যবস্থায় মানবিক গুণাবলী-সঞ্চারক শিক্ষা অনুপস্থিত। এতে শিক্ষা খÐিত হয়ে গেছে। কারণ শিক্ষা থেকে ধর্মীয় মূল্যবোধ, সততা, দেশপ্রেম, মানবিকতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, ন্যায়নিষ্ঠার মতো মানবিক গুণাবলি হারিয়ে যাচ্ছে। আবার শিক্ষার অভাবে সমাজে অন্যায়, অবিচার, দুর্নীতি, হিংসা-বিদ্বেষ, বিশৃঙ্খলা সামাজিক আয়-বৈষম্য ক্রমশই বাড়ছে। অন্যদিকে মাদ্রাসা শিক্ষা থেকে বিজ্ঞান ও ব্যবসাশিক্ষাকে বিযুক্ত করেছি, টেকনিক্যাল শিক্ষার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছি।

মাদ্রাসাশিক্ষায় জীবন ও কর্মমুখী শিক্ষা না থাকাতে অধিকাংশ আর্থ-সামাজিকভাবে অনেক পিছিয়ে। তারা বেকার অথবা ছদ্ম-বেকার, অনেকেই অনুৎপাদনশীল কাজে নিয়োজিত। মাদ্রাসাশিক্ষাকে রি-অর্গানাইজ করা সময়ের দাবি। এভাবে শিক্ষা ও সেবা-মানের অবনতিতে জাতি হিসেবে আমরা ক্রমশই হারিয়ে যেতে বসেছি। অথচ এসবের কোনো নিয়ামকই প্রকৃতিসৃষ্ট নয়; মনুষ্যসৃষ্ট ও আমাদের কৃতকর্মের ফল।

আমরা ইচ্ছে করলে ও সদিচ্ছা থাকলেই এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারি। এদেশে শিক্ষা ও সেবার পরিবেশের বড় অভাব। শিক্ষা ও সেবা গ্রহণ ও প্রদান সুস্থ পরিবেশের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। পরিবেশ নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। সরকার এবং সুশিক্ষিত ব্যক্তিদের এ বিষয়ে আরো সচেতন ও যতœবান হতে হবে।

বক্তারা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও নি¤œবিত্ত পরিবারের আয়-রোজগার বৃদ্ধিতে আর্থিক সহায়তা ও ক্যাপাসিটি বিল্ডিংয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তারা বলেন, গুণগত সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও সেবার মাধমে মানবকল্যাণমুখী একটি সুখী ও সমৃদ্ধশালী অর্থনৈতিক ধারা প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের অন্যতম লক্ষ্য।

যে কোনো আর্থ-সামাজিক গবেষণার জন্য এদেশে নিজস্ব ডেটা-ব্যাংক গড়ে তোলা প্রয়োজন। অনেক দেশেই ডেটা-ব্যাংক আছে। তারা তাদের আর্থ-সামাজিক প্লানিং, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নিয়ন্ত্রণের কাজে নিজস্ব ডেটা-ব্যাংক ব্যবহার করে গবেষণা করে।

গবেষণার ফল বাস্তবে কাজে লাগায়। শিক্ষা ও সেবার নি¤œমুখীতার কারণ উদ্ঘাটনে অধিক সময় ব্যয় না করে কীভাবে শিক্ষা ও সেবাহীনতার অভিশাপ থেকে বের হয়ে আসা যায়, সে পথের সন্ধান গবেষণা করে বের করতে হবে এবং বিভিন্ন প্রকাশনার মাধ্যমে সাধারণের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে।

জাশিপ শিক্ষা ও সেবার মান উন্নয়নে এবং জীবনমুখী, কর্মমুখী ও মানবিক গুণাবলি-সঞ্চারক শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে সরকার ও যে কোনো সংশ্লিষ্ট পক্ষের সাথে গঠনমূলক আলোচনা, শিক্ষানীতি তৈরিতে সরকারকে বা সংশ্লিষ্ট পক্ষকে সহযোগিতা, শিক্ষা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ে গবেষণা এবং শিক্ষা ও সমাজ-উন্নয়ন মূল্যায়ন প্রজেক্ট হাতে নেবে।

জাশিপ শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভাগ, মন্ত্রণালয়, কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এবং শিক্ষা-সেবা সমাজের মাধ্যমে অভিভাবকমহলকে শিক্ষা-সচেতন করে স্কুল/মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের শিক্ষা কার্যক্রমকে পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে এবং শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে প্রভাব সৃষ্টি করবে।

একটা সম্ভাবনা আমরা মনের মধ্যে ভাবতে পারি। দেশে টেকনিক্যাল শিক্ষা শিখেই হোক আর সাধারণ শিক্ষা শিখেই হোক, গ্রামে-গঞ্জে, প্রতিটা এলাকায় বেকারের অভাব নেই। প্রতিটা বেকার আট-দশ লাখ টাকা ব্যয় করে/অনুদান দিয়েও যে কোনো চাকরিতে ঢুকতে ইচ্ছুক। তারা চাকরি করতে চায়।

এমন দশ-পনরো জন বেকার যুবক-যুবতীদের একত্র করে যৌথ ফান্ড ব্যবহার করে নিঃসন্দেহে একটা কোম্পানি গঠন করা যায়।

প্রত্যেকে হবে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার। এলাকায় পাওয়া যায় এমন কাঁচামাল ব্যবহার করে ছোট ছোট কৃষিপণ্যভিত্তিক শিল্প-প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে পারে। কোম্পানি-ব্যবস্থাপনার নীতিমালা অনুযায়ী কোম্পানি পরিচালিত হবে।

শেয়ারহোল্ডারদের জাশিপ নির্ধারিত কয়েকটা কোড অব এথিক্স মেনে ব্যবসা করতে হবে। জাশিপ কোম্পানির মালিক হবে না। জাশিপ তার দেশব্যাপী প্রতিষ্ঠিত ‘শিক্ষা-সেবা সমাজ’-এর মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবে।

ইচ্ছা করলে ‘শিক্ষা-সেবা সমাজের’ কেউ-না-কেউ ব্যবসাতে অংশগ্রহণও করতে পারেন। জাশিপে অনেক পেশাদার শিল্প-উপদেষ্টা ও ইঞ্জিনিয়ার আছেন, তারা তাদের সাধ্যমতো ব্যবসা পরিচালনায় সাহায্য-সহযোগিতা করতে পারবেন। বছর শেষে প্রতিটা কোম্পানি এর অর্জিত লাভের শতকরা পাঁচ থেকে দশভাগ জাশিপ ফান্ডে জমা দেবে।

এ টাকা দিয়ে জাশিপ তার দেশব্যাপী কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। এভাবে দেশের প্রতিটা অঞ্চলে ছোট ছোট শিল্প-প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা অসম্ভব কিছু না। শুধুমাত্র সমন্বয়ের অভাবে, আস্থার অভাবে এবং অভিজ্ঞতার অভাবে এ-জাতীয় শিল্প-প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান এদেশে গড়ে উঠছে না।

গঠনমূলক উদ্যোগের অভাব দেখা দিচ্ছে। দিন পার হয়ে যাচ্ছে। আস্থা, সমন্বয় ও অভিজ্ঞতার সঙ্কট জাশিপ নিঃসন্দেহে ঘুচিয়ে দিতে পারে। দেশ ক্রমশই শিল্পসমৃদ্ধ হয়ে উঠতে পারে। বেকারদের কর্মসংস্থান হতে পারে।

জাশিপ নেতৃবৃন্দ বলেন, একজন সুশিক্ষিত ব্যক্তির তিনটি দায়িত্ব রয়েছে নিজের প্রতি দায়িত্ব, পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতি দায়িত্ব এবং সমাজ ও দেশের প্রতি দায়িত্ব। এ দায়িত্ব তাকে স্বেচ্ছায় পালন করতে হবে।

আমাদের বড় বড় কথা না-বলে কাজে বিশ্বাসী হতে হবে। এদেশের শিক্ষা ও সেবার উন্নয়নে এদেশের সুশিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে অবশ্যই জাশিপের এ সামাজিক আন্দোলনে শরিক হতে হবে এবং স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসতে হবে।

জাশিপের এ অরাজনৈতিক সামাজিক আন্দোলনে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতাও একান্তভাবে কাম্য। উন্নতি হলে লাভ কিন্তু সবার।

লেখক-
ড. হাসনান আহমেদ, অধ্যাপক, ইউআইইউ; গবেষক ও শিক্ষাবিদ; প্রেসিডেন্ট, জাতীয় শিক্ষা-সেবা পরিষদ।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৪/০৫/২০২৩     

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন