খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসির বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনাঃ খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুকৃবি) সাবেক উপাচার্য (ভিসি) ড. শহীদুর রহমান খান ও বর্তমান রেজিস্ট্রার খন্দকার মাজহারুল আনোয়ারের নামে সোনাডাঙ্গা থানায় ধর্ষণ মামালার এজাহার গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার দুপুরে খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩-এর বিচারক আব্দুস ছালাম এ আদেশ দেন।
আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদ আহমেদ বলেন, আদালত মামলা গ্রহণ করে সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এজাহার নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগকারী খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টোর কিপার হিসেবে ২০২১ সালে কর্মরত ছিলেন। অপরদিকে মামলার ১ নম্বর আসামি খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও কন্ট্রোলার বোর্ডের প্রধান এবং ২ নম্বর আসামি ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ১ নম্বর আসামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম তলায় অফিস ও বাসা পাশাপাশি সেখানেই থাকতেন। সেখানে খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ২ নম্বর আসামি বাদীকে ১ নম্বর আসামির খাওয়ার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব দেন।
বাদী প্রতিদিন ১ নম্বর আসামির অফিসে খাবার পৌঁছে দেন। সেই সুবাদে ১ নম্বর আসামি বাদীকে বিভিন্ন সময়ে কু-প্রস্তাব দিতে থাকে। বাদী তার কোনো কথায় রাজী না হয়ে ২ নম্বর আসামিকে বিষয়টি জানায়। এক পর্যায়ে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে খাবার দিতে আসলে পরিকল্লিতভাবে ২ নম্বর আসামির সহযোগিতায় ১ নম্বর আসামি তাকে ধর্ষণ করেন।
এসময় ২ নম্বর আসামি অফিসের বাইরে ছিলেন। বেরিয়ে আসার সময় ২ নম্বর আসামি তাকে বলেন- ‘আজকের ঘটনা কাউকে বলবে না, তাহলে তোমার চাকরি থাকবে না। আমি স্যারের সঙ্গে তোমার বিয়ে করিয়ে দিব। তুমি তোমার স্বামীকে তালাক দিয়ে দাও।’ বাদী চাকরির কথা বিবেচনা করে ও সামাজিক অবস্থান লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু জানায়নি। তাদের কথামতো বাদিনী স্বামীকে তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এক পর্যায়ে তাদের সহযোগিতায় বাদী স্বামীকে তালাক দিকে বাধ্য হন।
পরে ১ নম্বর আসামি বাদিকে বিয়ে না করে আজ-কাল বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে বাদীকে ভুল বুঝিয়ে স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে মেলামেশা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে খুলনা থেকে ১ নম্বর আসামি বদলী হয়ে যান। এরপর থেকে তিনি সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। তাই বাধ্য হয়ে মামলা দায়ের করেন।
প্রসঙ্গত, শহীদুর রহমান খান ছিলেন খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান।
শহীদুর রহমান খান উপাচার্য থাকাকালীন ৪২৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। মাত্র ৩৫০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ৪২৬ জন শিক্ষক ও কর্মচারী খুকৃবিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল এবং মাত্র তিন বছরে ৪৩টি বিভাগ খোলা হয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) তদন্ত করে এসব নিয়োগে অসঙ্গতি খুঁজে পাওয়ার কথা জানায়। ইউজিসির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত বছরের ৩ আগস্ট উপাচার্যের স্বজনসহ ৭৩ জন শিক্ষক-কর্মচারীর নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
আর গত বছরের নভেম্বরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দুদক খুকৃবির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটির উপ-পরিচালক এরশাদ মিয়াকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। গত ২৪ জানুয়ারি শহীদুর রহমান খানের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত শুরুর কথা জানায় দুদক।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১২/০৩/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়