গ্রন্থমেলার পর্দা উঠছে কাল, সশরীরে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
দীর্ঘ এক বছরের প্রতীক্ষার পর আগামী বুধবার (১ ফেব্রুয়ারী) পর্দা উঠছে অমর একুশে বইমেলা-২০২৩ এর। বৈশ্বিক মহামারি করোনার আগ্রাসনের পর এবারই প্রথম যথাসময়ে অর্থাৎ ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাচ্ছে বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে গ্রন্থমেলা। সোমবার (৩০ জানুয়ারি) বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক নূরুল হুদার সভাপতিত্বে জনসংযোগ উপবিভাগ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন নূরুল হুদা ও বাংলা একাডেমির সদস্য সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম। ‘পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’-প্রতিপাদ্যে এবারের বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে উৎসবমুখর পরিবেশে জমকালো আয়োজনে পুরো ফেব্রুয়ারী মাস জুড়েই চলবে।
আগামীকাল বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত থেকে মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি প্রকাশিত সাতটি নতুন বইয়ের গ্রন্থ-উন্মোচনসহ বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২২ প্রদান করবেন।
উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে বইমেলা চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে এ মেলা। ছুটির দিন বইমেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ২ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টা এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। তবে রাত ৮:৩০টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না।
মেলায় ৩৮টি প্যাভিলিয়নের পাশাপাশি একাডেমি প্রাঙ্গণে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি ইউনিট অর্থাৎ মোট ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে ৯০১টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবারের গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমির ৭ টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন সহ প্রকাশ করছে নতুন ও পুনর্মুদ্রিত ১৩৬টি বই।
মেট্রো্রোরেল স্টেশনের অবস্থানগত কারণে গতবারের মূল প্রবেশপথ এবার একটু সরিয়ে বাংলা একাডেমির মূল প্রবেশপথের উল্টো দিকে অর্থাৎ মন্দির-গেটটি মূল প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। গতবারের প্রবেশপথটি বাহির-পথ হিসেবে চিহ্নিত থাকবে। এছাড়া টিএসসি, দোয়েল চতুর এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউশন অংশে আরো আরো ৩টি প্রবেশ ও বাইর-পথ থাকবে। গতবার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিস্টিটিউশন অংশে ১৮২টি স্টল এবং ১১টি প্যাভিলিয়ন ছিল।
আরও পড়ুন: ভুল মেনে নেওয়া যায় না, সতর্ক হওয়ার পরামর্শ শিক্ষাবিদদের
ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিস্টিটিউশনের স্থানটিকেও এবারের মেলার একটি অংশ হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে। সেখানে নামাজের স্থান, ওয়াশরুমসহ অন্যান্য পরিষেবা অব্যাহত থাকবে। উল্লেখ্য, খাবারের স্টলগুলোকে এবার এমনভাবে সুবিন্যস্ত করা হয়েছে যেনো আগত পাঠকের মনোযোগ বিঘ্নিত না করে। শিশুচত্বরটির পরিধি কম হওয়ায় এবার এই চতুরটি মন্দির-গেটে প্রবেশের ঠিক ডান দিকে বড় পরিসরে রাখা হয়েছে। যেন শিশুরা অবাধে বিচরণ করতে পারে এবং তাদের কাঙ্ক্ষিত বই সহজে সংগ্রহ করতে পারে।
এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গ্রন্থ-উন্মোচন অংশের কাছাকাছি। সেখানে ১৫৩টিসহ ৫টি উন্মুক্ত স্থানে লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫% কমিশনে বই বিক্রি করবে। প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার এবং সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বাংলা একাডেমির ৩টি প্যাভিলিয়ন এবং শিশুকিশোর উপযোগী প্রকাশনার বিপণনের জন্য ১টি স্টল থাকবে। প্রতি শুক্র ও শনিবার মেলায় সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে। অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে শিশুকিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি এবং সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে। অমর একুশে বইমেলার প্রচার কার্যক্রমের জন্য একাডেমিতে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদিতে ১টি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২টি তথ্যকেন্দ্র থাকবে। সাংবাদিকদের অবাধ তথ্য আদান-প্রদানের সুবিধার্থে বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে একটি মিডিয়া সেন্টার থাকবে। বর্তমান সরকারের 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' ধারণার অংশ হিসেবে ডিজিটাল ডিসপ্লেতে জমাকৃত নতুন বইয়ের প্রচ্ছদ, তথ্য এবং বইমেলার মানচিত্র পর্যায়ক্রমে প্রদর্শিত হবে।
মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলায় এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বইমেলা পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে।
মেলাপ্রাঙ্গণ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে। মেলার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং নিয়মিত ধূলা নিবারণের জন্য পানি ছিটানো সহ প্রতিদিন মশক নিধনের সার্বিক ব্যবস্থা থাকবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০২২ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে ‘গুণগত মান’ বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ২০২২ সালের বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে ‘শৈল্পিক বিচারে’ সেরা বই প্রকাশের জন্য ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার’ দেওয়া হবে।
এছাড়া ২০২২ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য ১টি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ-বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে নাান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হবে।