ইউএনও’র মাধ্যমে উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে নথি যাবে কবে
নিউজ ডেস্ক।।
আইনে ক্ষমতা দেওয়া হলেও বাস্তবে উপজেলা চেয়ারম্যানরা তা প্রয়োগ করতে পারছেন না।
প্রায় এক যুগ আগে গেজেট জারি করে উপজেলাধীন সরকারের ১৩টি মন্ত্রণালয়ের ১৭টি দপ্তরের যাবতীয় কার্যাবলি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করার কথা।
ঠিক যেভাবে মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রীর কাছে সচিবরা নথি উপস্থাপন করে থাকেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো ইউএনওরা তা মানছেন না। যদিও এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও রয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যমান আইন এবং আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে করণীয় নির্ধারণ করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আজ বৈঠক আহবান করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরাও উপস্থিত থাকবেন।
সূত্র জানায়, ২০১০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপজেলা-১ শাখা থেকে জারি করা গেজেটে বলা হয়, ‘আইনের তৃতীয় তফশিলে উল্লেখিত দপ্তরসমূহের কর্মকর্তাগণ, সরকার কর্তৃক উপজেলা পরিষদের নিকট হস্তান্তরিত বিষয়ে সকল কাগজপত্র ও নথি, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট অনুমোদনের জন্য পেশ করিবেন।’ কিন্তু অদ্যাবধি তা বাস্তবায়িত হয়নি। আইন বাস্তবায়ন না করায় উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ২টি রিট মামলা দায়ের করা হয়। রিট নম্বর ৯৫৯৩/২০ ও ৫৫১০/২০২১। প্রথম রিটের বিষয়ে আদালত গত বছর ১৪ জুলাই দুটি উল্লেখযোগ্য নির্দেশনা দেন। এর মধ্যে এক. সাংবিধানিক নির্দেশনা ও আইনানুযায়ী স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত গেজেট অনুসরণ করে আইনের তৃতীয় তফশিলে উল্লেখিত বিভাগসমূহের কাজ উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুমোদনক্রমে সম্পাদনের জন্য। দুই. যদি কোনো নির্বাহী অফিসার অথবা কর্তৃপক্ষ এ নির্দেশনা অমান্য করে তবে মহামান্য হাইকোর্টকে অবহিত করতে হবে।
এরপরও আইন এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করায় গত ২৬ নভেম্বর বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিশেনের পক্ষ থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে আবেদন করা হয়। এতে বলা হয়, ইউএনওদের এহেন ভূমিকা সুস্পষ্টভাবে সংবিধান ও আইনের লঙ্ঘন। সূত্রমতে গত ২৭ ডিসেম্বর এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভা হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ পর্যন্ত হয়নি। এরপর ১৩ জানুয়ারি সভার তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
প্রসঙ্গত, এরশাদ সরকার আমলের উপজেলা পরিষদ আইনটি বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে ১৯৯১ সালে বাতিল করে দেয়। নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৮ সালে উপজেলা পরিষদ আইন পুনরায় কার্যকর করলেও ওই মেয়াদে নির্বাচন করে যেতে পারেনি। ২০০৭-০৮ সালে ওয়ান-ইলেভেন সরকার অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয়। ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী নির্বাচন হয় ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার তিন সপ্তাহের মধ্যে এই নির্বাচন হয়। ওই বছর ৬ এপ্রিল আইন সংশোধন করে সরকারের ১৩টি দপ্তর উপজেলা পরিষদের অধীনে দেওয়া হয়।
পরে ২০১১ সালের জুন মাসে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ১৩টি মন্ত্রণালয়ের ১৭টি দপ্তর হস্তান্তরিত হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া আইনের ৪ ধারায় স্পষ্ট করে উপজেলা পরিষদকে সরকারের প্রশাসনিক একাংশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।