চার দিনেও ক্লাসে ফেরেননি শিক্ষকরা
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
প্রায় দেড় বছর পর সারাদেশের মতো পাবনার ঈশ্বরদীর প্রায় ২০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও উপজেলার দাদাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ক্লাসে এখনও ফেরেননি। প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সহকারী শিক্ষকদের দ্বন্দ্বসহ বিভিন্ন কারণে চার দিনেও ক্লাসে ফেরেননি তারা।
গতকাল বুধবার শিক্ষকরা স্কুলে এলেও কোনো শ্রেণি কক্ষে যাননি, পাঠদানও করেননি শিক্ষার্থীদের। প্রধান শিক্ষক একাই সব শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছেন। এ অবস্থায় স্কুলের ৩শ শিক্ষার্থীর পাঠদান অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ ঘটনা পৃথকভাবে তদন্ত করেছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিম আক্তার এবং উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার আরিফুল ইসলাম। গতকাল বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও দাদাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পিএম ইমরুল কায়েসের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, স্কুলের পাঠদানের স্বীকৃতির নবায়ন, শিক্ষকদের উচ্চতর স্কেল, জমি-সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত স্কুলের ৬ জন সহকারী শিক্ষক ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তারা হলেন শিক্ষক আহসান হাবিব রিপন, মো. সুমন আলী, মোস্তাফিজুর রহমান, আরিফুল ইসলাম-১, আরিফুল ইসলাম-২ ও বিলকিস খাতুন। তাদের বক্তব্য- বকেয়া বেতন ও উচ্চতর স্কেল না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাসে ফিরে যাবেন না।
শিক্ষকদের অভিযোগ, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের দু'জন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ করে প্রধান শিক্ষক খালেদা আক্তার ও তার স্বামী স্কুলের তথ্য ও গ্রন্থাগারিক আশরাফুল ইসলাম সবুজ সহকারী শিক্ষকদের মতামত উপেক্ষা করে স্কুলের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এ নিয়ে ২০১০ সাল থেকে তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ও দূরত্বের সৃষ্টি হয়।
সহকারী শিক্ষক আহসান হাবিব রিপন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সমস্যা জিইয়ে রাখা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ আমাদের কথা আমলে নেয় না। সবাই প্রধান শিক্ষক ও তার স্বামীর পক্ষ নিয়ে কথা বলে। এসব কারণে আমরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয়েছি।
শিক্ষক মো. সুমন আলী জানান, স্কুলের জমিসহ সব জটিলতা নিরসন এবং তাদের উচ্চতর স্কেল না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাসে ফিরে যাবেন না।
স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, স্কুলের নিজস্ব জমির পরিমাণ এক একর ০৫ শতাংশ আছে বলে কাগজপত্রে উল্লেখ থাকলেও উপজেলা ভূমি অফিসের রেকর্ডে রয়েছে মাত্র ২১ শতাংশ। নিয়ম অনুযায়ী ইউনিয়ন পর্যায়ে মাধ্যমিক স্কুলের জন্য ৭৫ শতাংশ জমি থাকা বাধ্যতামূলক হলেও এই পরিমাণ জমি স্কুলের নেই। আবার স্কুলের জমির খাজনা পরিশোধ বা খারিজও করা হয়নি এখনও। জমি-সংক্রান্ত এই জটিলতার কারণে পাঠদানের মেয়াদ ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবার পর আর নবায়ন করা হয়নি। এ কারণে সহকারী শিক্ষকদের এক মাসের বেতন এবং উচ্চতর স্কেল প্রদান বন্ধ রয়েছে।
প্রধান শিক্ষক খালেদা আক্তার বলেন, স্কুলের সামগ্রিক সমস্যা সমাধানের জন্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সব পর্যায়ে জানানো হয়েছে। তারাই ব্যবস্থা নেবেন।
তিনি বলেন, সহকারী শিক্ষকরা ক্লাস না নেওয়ায় আমি প্রধান শিক্ষক হয়ে সব শ্রেণির ক্লাস একাই সামলাচ্ছি।
প্রধান শিক্ষকের স্বামী স্কুলের তথ্য ও গ্রন্থাগারিক আশরাফুল ইসলাম সবুজ বলেন, শিক্ষকদের অভিযোগ থাকতেই পারে। তবে এতদিন পর স্কুল খোলার পর ৬ শিক্ষকের কেউই ক্লাস নিচ্ছেন না এটি দুঃখজনক।
স্কুলের বিভিন্ন শ্রেণির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, অনেক দিন পর স্কুল খুললেও তারা স্যারদের ক্লাসে পাচ্ছে না। এতে তারা পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়ছে। এভাবে চললে তারাও হয়তো আর স্কুলে আসবে না বলে জানায়।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার আরিফুল ইসলাম বলেন, ঘটনা তদন্ত করা হয়েছে। শিগগিরই প্রতিবেদন সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিম আক্তার বলেন, ঈশ্বরদী উপজেলার দাদাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ঘটনা নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক ও ইউএনও বরাবর পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিএম ইমরুল কায়েস বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।