মাধ্যমিকে অভিন্ন পাঠ্যক্রম বাস্তবায়ন যোগ্য শিক্ষক সঙ্কটই চ্যালেঞ্জ
নিউজ ডেস্ক।।
মাধ্যমিকের নতুন পাঠ্যক্রমে বিভাগ থাকছে না। বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা সব ধরনের শিক্ষা নিয়ে স্কুলের ১০ বছর শেষ করবে শিক্ষার্থীরা। স্বাধীনতার পর দেশের শিক্ষাস্তরে সবচেয়ে পরিবর্তন আনছে সরকার। নবম শ্রেণিতে বিভাগ উঠিয়ে দেওয়ার পর ২০২২ বা ২০২৩ সাল থেকেই নতুন পাঠ্যক্রমে বই দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি চলছে গত বছর থেকেই। বড় ধরনের এই পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ যোগ্য শিক্ষক ঘাটতি।
মাধ্যমিক শিক্ষার সিংহভাগ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাঠ্যপুস্তক ঠিকভাবে তৈরি করা এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রায় দেড় কোটি শিক্ষার্থীর বিপরীতে প্রায় ছয় লাখ শিক্ষককে যোগ্য বা প্রশিক্ষিত করে তোলাটাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, নতুন পাঠ্যক্রম মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতেই তৈরি করা হচ্ছে। তাতে বাংলাদেশের ইতিহাস, আমাদের ইতিহাস-সংস্কৃতিকে মূল উপজীব্য করেই আমাদের একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবিলা করা, এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বঙ্গবন্ধু যে সোনার মানুষ চেয়েছিলেন, সেই সোনার মানুষ গড়তে পাঠ্যক্রম হবে। মাধ্যমিকের নতুন পাঠ্যক্রমে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার মতো আলাদা বিভাগ থাকছে না বলে জানান তিনি। সব শিক্ষার্থী সব ধরনের শিক্ষা নিয়ে স্কুলের ১০টি বছর শেষ করবে।
সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের আলোকেই সরকার কিছু পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। এটাকে ইতিবাচক বলেই মনে করেন তিনি। এর আগে আলোচিত কুদরাত-এ-খুদা কমিশনেও একই সুপারিশ করা হয়েছিল। বরং এটি আগে বাস্তবায়ন না করে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্যও তৈরি করা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা তো ও-লেভেল পর্যন্ত মৌলিক সব বিষয়েই পড়াশোনা করে। তা হলে স্কুলগুলোতে এতকাল ধরে শিক্ষার্থীরা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল।
শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান না কি অন্য শাখায় পড়বে, সেটা ঠিক হবে একাদশ শ্রেণিতে।
এর আগে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সবাইকে অভিন্ন ১০টি বিষয় পড়তে হবে। শিশুদের পড়াশোনার চাপ কমাতে প্রাথমিক স্তরে পাঠ্যবইয়ে বিষয়বস্তু কমাবে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রম পরিমার্জনের কাজ করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রথম, দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা আগামী বছর নতুন পাঠ্যবই পাবে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমে নতুন বই দেওয়া হবে। আগামী মার্চের মধ্যে শিক্ষাক্রম চ‚ড়ান্ত করে পর্যায়ক্রমে ২০২৫ সালে গিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পুরোপুরি শিক্ষাক্রম বাস্তবায়িত হবে।
এনসিটিবির দুজন সদস্য বলেন, কিছু বিষয় প্রায় চ‚ড়ান্ত হয়েছে। আর কিছু পরিকল্পনার মধ্যে আছে। শিক্ষাবিদ ও এনসিটিবির কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত কমিটির মাধ্যমে শিক্ষাক্রম পরিমার্জন হচ্ছে। চলমান পাঠ্যক্রম অনুযায়ী, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ৩টি করে পাঠ্যবই এবং তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৬টি করে পাঠ্যবই পড়তে হয়। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ১৩টি পাঠ্যবই পড়তে হয়।
নবম ও দশম শ্রেণিতে ২৭টি এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ৩৯টি পাঠ্যবই পড়তে হয়। তবে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ আলাদা থাকায় নবম, দশম ও একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের সব বিষয়ের বই পড়তে হয় না।সুত্র সময়ের আলো