এনআইডি নতুন সংস্থার দায়িত্বে
অনলাইন ডেস্কঃ
দেশের সব নাগরিকের তথ্য এক ছাতার নিচে আনার জন্য বড় উদ্যোগ আসছে। সম্প্রতি জাতীয় পরিচয় (এনআইডি) নিবন্ধনের দায়িত্ব পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ নাগরিকদের তথ্য সংরক্ষণে আলাদা বিধিবদ্ধ সংস্থা গঠনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিলে এসংক্রান্ত আইন সংশোধন করে সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকসকে (সিআরভিএস) কেন্দ্র করে নতুন প্রতিষ্ঠান করতে পারে সরকার।
সিআরভিএস বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই পৃথক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। জাতীয় পরিচয় (এনআইডি) নিবন্ধন, ভোটার তালিকার তথ্যসহ দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সব ধরনের তথ্য এই সংস্থায় সংরক্ষিত থাকবে। ২০১৪ সাল থেকে সিআরভিএস বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
সম্প্রতি এনআইডি নিবন্ধনের দায়িত্ব নিজেদের কাছে নিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এর জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি সংবিধান ও আইনের যুক্তি তুলে ধরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে।
সেই সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ তার অধীনে নাগরিকদের তথ্যভাণ্ডার সংরক্ষণ সংক্রান্ত পৃথক একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা গঠনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়ে বলেছে, এতে সরকারের ব্যয় হ্রাস পাবে। দ্রুত সেবা পাবে সাধারণ মানুষ।
গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এসংক্রান্ত প্রতিবেদন পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সোলতান আহ্মদ। একই বিভাগের যুগ্ম সচিব শফিউল আজিম, উপসচিব তানভীর আহমেদ, শহিদুল ইসলাম, শামছুল আলম ও সিনিয়র সহকারী সচিব নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ কমিটিতে ছিলেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দেওয়া পরামর্শ বাস্তবায়ন করলে এনআইডি নিবন্ধনের দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে তো যাচ্ছেই না, নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকারও সুযোগ থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া পরামর্শে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বলেছে, ‘মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সরাসরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্ববধানে থেকে সকল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে থাকে। নাগরিকের ঠিকানা, জন্ম, মৃত্যুসহ অন্য তথ্যাদির বিষয়ে এই বিভাগ (মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ) সিআরভিএস কার্যক্রম পরিচালনা করে। জাতীয় পরিচায়পত্রও এক ধরনের সিভিল রেজিস্ট্রেশন। সুতরাং জাতীয় পরিচয়পত্রসহ অন্যান্য সিভিল রেজিস্ট্রেশনের কার্যক্রমসমূহ নির্বাহী কর্মকাণ্ড হিসেবে বিদ্যমান আইন, নীতি ও বিধি সংশোধনক্রমে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অধীনে একটি কর্তৃপক্ষের আওতায় ন্যস্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।’
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আরো বলেছে, জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে ২২ ধরনের সেবা দেওয়া হয়, ভবিষ্যতে এর কর্মপরিধি আরো বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। তাই এনআইডি নিবন্ধন কার্যক্রম আরো নিরাপদ ও জনবান্ধব করার জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে। এই বিষয়ে দেওয়া পরামর্শে সংবিধান ও আইনি দিকগুলোও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১১৯(১)(ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি পদের এবং সংসদ সদস্য পদের নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রস্তুতের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। এ ছাড়া সংবিধানের ১১৯(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংবিধান ও আইন দ্বারা অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা হলে সেসব দায়িত্বও পালন করবে নির্বাচন কমিশন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রণীত ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন, ২০১০’ বলে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করে নির্বাচন কমিশন। ‘ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯’ অনুযায়ী ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে নির্বাচন কমিশন। অন্যদিকে ২০০৪ সালে প্রণীত জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন অনুযায়ী স্থানীয় সরকার বিভাগের রেজিস্ট্রার জেনারেল নাগরিকদের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন করছেন।
কেন নতুন সংস্থার হাতে : জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়ন ও বিতরণের কাজ কেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অধীনে নতুন সংস্থার মাধ্যমে করা প্রয়োজন, এর যৌক্তিকতাও তুলে ধরেছে এসংক্রান্ত কমিটি। তারা বলছে, ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজ নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হলেও এনআইডি নিবন্ধন নির্বাহী ধরনের কাজ। ভোটার শনাক্তকরণের কাজে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো নির্বাচন কমিশনও এনআইডি ব্যবহার করে। এনআইডির বিষয়টি সর্বজনীন, অন্যদিকে ভোটার তালিকার বিষয়টি শুধু ভোটার হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য ও নির্বাচনের উদ্দেশে প্রণীত। তাই জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যক্রম সরকারের অধীন উপযুক্ত কোনো সংস্থা বা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে স্বতন্ত্রভাবে হওয়া অধিকতর সংগতিপূর্ণ ছিল।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব গ্রহণ না করার যুক্তি হিসেবে কমিটি বলেছে, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় একটি প্রকল্পের মাধ্যমে শুরু হওয়া কাজটি দীর্ঘদিন পরিচালিত হওয়ায় একটি পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে জনবল, সার্ভার স্টেশনসহ অনেক কিছু নির্মাণ করা হয়েছে এবং নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে বেশ অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছে। এ ছাড়া প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোনো সরকারি সংস্থা এনআইডি ডাটাবেইস থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারছে। তাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ মনে করে, আকস্মিকভাবে এই কার্যক্রম অন্য কারো হাতে যাওয়া উচিত নয়।
শিক্ষাবার্তা/ বিআ