নির্বাচনের পরের দিনই এক স্কুলে দুই প্রধান শিক্ষককে বদলি
সাতক্ষীরাঃ জেলার আশাশুনি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর হতে জারিকৃত নির্দেশনা বা পরিপত্র না মানার অভিযোগ উঠেছে। একই স্কুলে বদলি করা হয়েছে দুজন প্রধান শিক্ষককে। নির্বাচন কমিশনকে তোয়াক্কা না করে জাতীয় নির্বাচনের পরের দিনই রদবদল শুরু করেছেন আশাশুনির প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। একই অফিসে টানা ৯ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন এটিও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উদাসীনতায় বিপাকে শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টরা।
প্রসঙ্গত, খুলনা বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিস টেলিফোনে গত ২৩ সালের ১৯ জুলাই আশাশুনি উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদের তালিকা প্রস্তুত ও পাঠানোর নির্দেশনা প্রদান করেন। সে মোতাবেক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার আবদুর রকিব ২৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তালিকা প্রণয়ন করেন। যার মধ্যে মধ্যম বেউলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম লিপিবদ্ধ থাকে। এদিকে শূন্য পথ দেখানো স্কুলে গত ২৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে উক্ত মধ্যম বেউলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক সুনীল কুমার মন্ডলের বদলী হয়। কিন্তু উক্ত শিক্ষক সুনীল কুমার মন্ডল দীর্ঘ ১১ মাস পর উক্ত বিদ্যালয়ে যোগদান না করায় স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পথটি শূন্যই রয়ে যায়। প্রধান শিক্ষক সুনীল কুমার মন্ডল এক প্রতিবেদককে জানান বদলি আদেশ রদ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর তিনি একটি আবেদন করেছিলেন, কিন্তু কী কারণে বদলি রদ হয়নি তা তিনি জানেন না। তবে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থেকে সব শেষে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি ১১২নং মধ্যম বেউলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনি যোগদান করেন এবং এর আগে ২১নং বেউলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১১ মাস ধরে কর্মরত ছিলেন বলে জানান তিনি। তবে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা গেছে, তিনি ৮ তারিখের পরিবর্তে ৯ তারিখে যোগদান করেন।
আশাশুনি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের পাঠানো ২৩ সালের ১ নভেম্বরের আরও একটি প্রধান শিক্ষক শূন্য পদের প্রস্তাব পত্রের ওপর ভিত্তি করে গত ২৬ ডিসেম্বর বিভাগীয় শিক্ষা অধিদপ্তরের এক পত্রে (স্মারক নং ১৫৯৭) প্রশাসনিক বদলির নিমিত্ত প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ সংরক্ষণ প্রসঙ্গে, বিভাগীয় উপপরিচালক মোসলেম উদ্দিন প্রধান শিক্ষক মুর্শিদা খাতুনকে উক্ত ১১২নং মধ্যম বেউলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলির আদেশ প্রদান করেন। একই স্কুলে দুজন প্রধান শিক্ষক নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন উভয় প্রধান শিক্ষক।
জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে বদলি আদেশ না থাকলেও আইনকানুনকে তোয়াক্কা না করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বদলি আদেশ প্রদান করেন আশাশুনি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। শিক্ষক ও স্কুলসমূহ তদারকির জন্য দুজন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুর রকিব এবং আবু সেলিম দায়িত্বে থাকলেও সরকারি নির্দেশনাকে তোয়াক্কা না করে স্বেচ্ছাচারিতা ও নিজেদের মনগড়া আইন তৈরি করে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে স্বায়ত্তশাসিত প্রাথমিক শিক্ষা অফিস হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন তারা।
অভিযোগ উঠেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনকালীন সকল কার্যক্রম সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ব্যতীত কোনো কর্মচারীর বদলির সুযোগ না থাকলেও আশাশুনিতে এর ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। যার প্রতিফলন নির্বাচনের পরের দিনই মধ্যম বেউলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক সুনীল কুমার মন্ডলের পূর্বের লিখিত ও বর্তমানে মৌখিক বদলি করেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তারা। তাদের এ হেন কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরের জারিকৃত নির্দেশনাকে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আবু সেলিম জানান, সুনীল কুমার মন্ডলকে অনেক আগেই বদলি করা হয়েছিল। তিনি বদলি আদেশ স্থগিত করার জন্য একটি আবেদনও করেছিলেন, কিন্তু সেটি গ্রহণ না হওয়ায় নির্বাচনের পরের দিনই তাকে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান করতে হয়েছে।
একই প্রতিষ্ঠানে দুজন প্রধান শিক্ষককে বদলির বিষয়ে তিনি বলেন, বিভাগীয় শিক্ষা কর্মকর্তার প্রস্তাবনা আদেশ মঞ্জুর হলে সুনীল কুমার মন্ডল আগের বিদ্যালয়েই ফিরে যাবেন।
সরকারি নির্দেশনা অমান্যসহ যোগদানের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার বর্মন জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মৌখিক অনুমতি ক্রমেই সুনীল কুমার মন্ডলকে উক্ত বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়েছে। এখানে কোনোভাবেই আইন ভঙ্গ করা হয়নি।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১১/০১/২০২৪