ফিরে দেখা ২০২৩: বছরজুড়ে যেমন ছিল শিক্ষা খাত
শিক্ষাবার্তা ডেস্ক, ঢাকাঃ দেশের শিক্ষাঙ্গনে বিদায়ী বছরে আলোচনার বড় অংশজুড়ে ছিল নতুন শিক্ষাক্রম। করোনা পরবর্তী স্বাভাবিক ধারায় ফেরার পাশাপাশি শিক্ষকদের আন্দোলন, রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরিসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় স্থান পায় ২০২৩ সালে। হরতাল-অবরোধের আতঙ্কের মধ্যে পরীক্ষায় বসে শিক্ষার্থীরা। সমালোচনা ছিল বিনামূল্যের বই বিতরণ নিয়েও। আরটিভি নিউজের বছর শেষে পেছন ফিরে তাকানোর এই আয়োজনে চলুন দেখে নিই কেমন ছিল বিদায়ী বছরের শিক্ষা খাত।
নতুন শিক্ষাক্রম বিতর্ক
চলতি বছর শুরু হয়েছিল চারটি শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম দিয়ে। নতুন শিক্ষাক্রমের পরীক্ষা পদ্ধতি, উপকরণ, দলগত কাজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও চাকরির পরীক্ষা পদ্ধতিসহ প্রায় ১৬টি বিষয়ে অভিভাবক মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়। মানববন্ধন, সমাবেশসহ সারাদেশে পালিত হয় ধারাবাহিক কর্মসূচি। অন্যদিকে মন্ত্রণালয়, এনসিটিবি ও মাউশির পক্ষ থেকে আন্দোলনের প্রেক্ষিতে নানা পদক্ষেপ নিতে হয়। এই ইস্যুতে একাধিক সংবাদ সম্মেলন, মতবিনিময় সভা ও সেমিনারের আয়োজন করা হয়। অনলাইনে জেলাভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের সঙ্গেও যুক্ত হন শিক্ষামন্ত্রী। বিলি করা হয় প্রচারপত্র। অপপ্রচার রোধে থানার দ্বারস্থ হয় এনসিটিবি।
অচল সরকারি কলেজ
অক্টোবরের শুরু থেকে ক্যাডার বৈষম্য নিরসনসহ ছয় দফা দাবি জানিয়ে আসছিল বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি। টানা তিন দিন কর্মবিরতির কর্মসূচি পালিত হয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, সব সরকারি কলেজ, সরকারি আলিয়া মাদরাসা, সরকারি টিটি কলেজসহ শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে। একপর্যায়ে আন্দোলনরতদের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এ সময় তিনি দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।
স্বাভাবিক ধারায় এইচএসসির ফল
করোনার পর প্রথম পূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষায় অংশ নেন এবারের উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষার্থীরা। ২৬ নভেম্বর প্রকাশিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৪ ভাগ।
২৭ হাজার শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ
এ বছর সেপ্টেম্বর মাসে স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য ২৭ হাজার ৭৪ জন প্রার্থীকে সুপারিশ করে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)।
জাতীয়করণের দাবিতে আমরণ অনশন শিক্ষকদের
মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে টানা ২৩ দিন অবস্থান ও অনশন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হয়। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করে আশ্বাস পেয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন তারা।
বই নিয়ে আলোচনায় এনসিটিবি
নতুন শিক্ষাক্রমের অধীনে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠবইয়ে অসংখ্য ভুল ধরা পড়ে। যার কারণে এনসিটিবির সমালোচনা করা হয় সব মহল থেকে। পরবর্তী সময়ে দুই বইয়ে ৪২১টি ভুল সংশোধন করে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
আলোচনায় ছিল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়
নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে অডিও ফাঁসে জড়িতদের শাস্তি দিয়ে আলোচনায় ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল, ছাত্র অধিকার ও বাম ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর একাধিকবার হামলা এবং অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে আলোচনায় ছিল ছাত্রলীগ। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পান অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হকের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে ক্যাম্পাসে। এ ছাড়া ছাত্ররাজনীতিসহ নানা কারণে আলোচনায় ছিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
ব্যর্থ একক ভর্তি পরীক্ষা
ভোগান্তি এড়াতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একক ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে আলোচনা ছিল দীর্ঘদিন ধরে। রাষ্ট্রপতির অভিপ্রায় অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন নানা বৈঠকের পর একটি অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সমন্বয়হীনতার কারণে এবারও একক ভর্তি পরীক্ষার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।
হরতাল-অবরোধে ফের অনিশ্চয়তা
সরকার পতন ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ২৯ অক্টোবর থেকে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি শুরু করে। দীর্ঘদিন পর ঘোষিত হরতালের প্রথমদিকে শিক্ষাঙ্গনে তৈরি হয় অনিশ্চয়তা। বার্ষিক মূল্যায়ন নিকটবর্তী হওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু করে। আবারও শিক্ষাঙ্গন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলেও শেষ পর্যন্ত আশঙ্কা দূর হয়ে গেছে।
নানা অভিযোগে মনোনয়ন পাননি প্রতিমন্ত্রী জাকির
শিক্ষামন্ত্রী, উপমন্ত্রী আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেলেও বাদ পড়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণসহ নানা অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগীরা। পরবর্তী সময়ে প্রতিমন্ত্রীর সরকারি বাসায় টাকা ফেরত আনতে গেলে মারধর করা হয় তাদের। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে ঘুষের টাকা ফেরত দেন প্রতিমন্ত্রীর প্রতিনিধিরা।
স্কুলে আর থাকছে না অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষা
সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত আর অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষা থাকছে না। আগামী বছর (২০২৪ সাল) থেকে ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে দুটি সামষ্টিক মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হবে। বছরের মাঝামাঝি হবে ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন এবং বছর শেষে নেওয়া হবে বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়ন। আর দশম শ্রেণিতে অনুষ্ঠিত হবে প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষা এবং নির্বাচনী পরীক্ষা।
গত ১৪ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে শিক্ষাপঞ্জি (অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার) প্রকাশ করা হয়েছে। সেখান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সই করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোসাম্মৎ রহিমা আক্তার।
প্রজ্ঞাপনে বর্ণিত অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী—২০২৪ সালে মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি স্কুলগুলোর নতুন শিক্ষাক্রমের ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন ও প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষা শুরু হবে মে মাসে। ২৩ মে থেকে মূল্যায়ন শুরু হয়ে চলবে ৯ জুন পর্যন্ত। ১০ জুলাই ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন ও প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে হবে।