অটোপাসের সাড়ে ৩ লাখ এইচএসসিতে লাপাত্তা
নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
দুই বছর আগে ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ না নিয়েই অটোপাস করেছিল প্রায় ১৫ লাখ শিক্ষার্থী। কিন্তু কলেজে ভর্তির পর এবারে এইচএসসি পরীক্ষায় তাদের মধ্যে অনেকেই অংশই নিচ্ছে না। স্কুল পরীক্ষায় অটোপাস করার পর কলেজে এসে সংখ্যার হিসাবে প্রায় সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থী লাপাত্তা। যদিও এই বড় অঙ্কের শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়াদের তালিকায়ও রাখতে নারাজ শিক্ষা বোর্ড। তবে বাস্তবতা হলো, এসএসসিতে যারা অটোপাস নিয়ে এইচএসসিতে বা কলেজে ভর্তি হয়েছিল তাদের অনেকেরই হদিস মিলছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী ৬ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে ২০২২ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। কিন্তু এই বোর্ড পরীক্ষায় অস্বাভাবিকভাবে কমেছে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা। শিক্ষাবোর্ডগুলো যে তথ্য দিয়েছে সেই হিসাবেই দেখা যাচ্ছে, দুই বছর আগে করোনার কারণে এসএসসি পরীক্ষা না দিয়ে অটোপাসের সার্টিফিকেট দিয়েই কলেজে ভর্তি হয় ১৪ লাখ ৮৭ হাজার ২৩৯ জন শিক্ষার্থী। অথচ এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য নিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবে ফরম পূরণ করেছে মাত্র ১১ লাখ ৪৬ হাজার ৫৬১ জন। অর্থাৎ এসএসসি থেকে এইচএসসি এই দুই বছরের ব্যবধানে বড় দাগের হিসাবেই লাপাত্তা হয়েছে তিন লাখ ৪০ হাজার ৬৭৮ জন শিক্ষার্থী। অবশ্য চলতি বছরের এইচএসসিতে নিয়মিত ও অনিয়মিত মান উন্নয়নসহ সব মিলে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১২ লাখ ৩ হাজার ৪০৭ জন। আগের বছরের হিসাব অনুপাতে এখনো হদিস মিলছে না প্রায় তিন লাখ ৪০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর।
শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন হচ্ছে এসএসসিতে যেভাবেই হোক পাস করার পর এইচএসসিতে এসে এই বিরাট সংখ্যার শিক্ষার্থী ঝরে পড়া মোটেই ভালো লক্ষণ নয়। এই শিক্ষার্থীরা এখন কোথায়, সে তথ্য নেই কারো কাছে। ধারণা করা হচ্ছে, তারা লেখাপড়া ছেড়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছে। এ হিসাবে তারা ঝরেই পড়েছে।
এ নিয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার জানান, এসএসসিতে একটি বিশেষ এবং সঙ্গত কারণেই অটোপাস দেয়া হয়েছিল। তবে এইচএসসিতে এসে এই বড় সংখ্যার শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার কোনো কারণ নেই। এটা অনেকটা ভুল ধারণা। কেননা প্রতিবছর উচ্চমাধ্যমিক স্তরে যে পরিমাণ শিক্ষার্থী ভর্তি হয় তার চেয়ে অনেক কম সংখ্যার শিক্ষার্থী বরাবরই এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে থাকে। আর এটা এবার নতুন নয়। এছাড়া এ বছর যে তিন লাখ শিক্ষার্থী কম বলা হচ্ছে এটা তেমনি এই ঘটনা। কাজেই সে জন্য করোনা মহামারীতে শিক্ষার্থী ঝরে পডার সংখ্যা বেড়েছে, এটি বলা যাবে না। তিনি আরো বলেন, এসএসসির ফলাফলের পর সাধারণ বোর্ডের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর কারিগরি বোর্ডের ভর্তি শুরু হয়। সে কারণে অনেকে সাধারণ বোর্ডে ভর্তি হলেও পরে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে বিভিন্ন কোর্সে ভর্তি হয়ে থাকে। এছাড়া কেউ কেউ দেশের বাইরে পড়ালেখার জন্য চলে যায় বলে সেই সংখ্যাটা কম দেখায়।
উল্লেখ্য, এবার এইচএসসি পরীক্ষায় যে ১২ লাখ ৩ হাজার ৪০৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে, তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে আগে ফেল করা শিক্ষার্থী অনিয়মিত হিসাবে অংশ নিচ্ছে ৫৩ হাজার ৩১৭ জন। প্রাইভেটে ২৩২৬ জন আর ফল উন্নয়ন ১২০৩ জন।
সর্বশেষ অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট ২০ লাখ ২১ হাজার ৮৬৮ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। তাদের মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থী ছিল ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ৯২৩ জন। নিয়মিত যে পরীক্ষার্থীরা ছিল তাদের সঙ্গে দুই বছর আগে নবম শ্রেণীতে নিবন্ধন করেছিল মোট ২৩ লাখ ১ হাজার ৪৬৯ জন। সে হিসাবে ৪ লাখ ৭ হাজার ৫৪৬ জনই ঝরে পড়েছিল। তাদের মধ্যে আবার নারী শিক্ষার্থী ছিল ২ লাখ ৫৫ হাজার ২৮০ জন।