ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্বেগ
নিউজ ডেস্ক।।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিটির প্রতিনিধিদলের প্রধান হেইডি হটুলা বলেছেন, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলেই শ্রম অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব। একটির সাথে অপরটি জড়িত। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়ার জন্য মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা একটি মৌলিক শর্ত। তিনি বলেন, নাগরিক সমাজের জন্য মতপ্রকাশের যথেষ্ট স্বাধীনতা থাকতে হবে। বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুম পরিস্থিতি আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি। জিএসপি প্লাসের অধীনে মৌলিক মানবাধিকার শর্তের সাথে এই পরিস্থিতি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
জিডিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বিশেষ করে সাংবাদিকদের ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে। আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই অ্যাক্টটি সংশোধনীর প্রক্রিয়া চলছে। এটি জেনে আমরা আনন্দিত। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ কূটনৈতিক সংবাদদাতা সমিতির (ডিকাব) সাথে মতবিনিময়ে ইইউ প্রতিনিধিদলের প্রধান এ সব কথা বলেন। হেইডি হটুলা একই সাথে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট। ডিকাব সভাপতি রেজাউল করিম লোটাস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। এতে আরো উপস্থিতি ছিলেন ঢাকায় ইইউর রাষ্ট্রদূত চালর্স হোয়াইলি।
গত রোববার চার দিনের সফরে বাংলাদেশে আসে ইইউ প্রতিনিধিদল। হেইডি হটুলা বলেন, এক বছর আগে বাংলাদেশ সরকার শ্রম সংক্রান্ত রোডম্যাপ বাস্তবায়নের জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সরকারের এই পদক্ষেপকে আমরা জোরালোভাবে সমর্থন জানাই। এ সংক্রান্ত অগ্রগতি আমরা গভীর আগ্রহের সাথে পর্যবেক্ষণ করছি। কেননা এই রোডম্যাপের সফল বাস্তবায়নের সাথে কেবলমাত্র বর্তমানে ইইউর বাজারে ইবিএ (অস্ত্র ছাড়া সবকিছু) স্কিমের আওতায় পাওয়া শুল্ক ও কোটামুক্ত জিএসপি সুবিধাই নয়, বরং এর সাথে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে মধ্য আয়ের দেশে বাংলাদেশের উত্তরণ এবং তার ধারাবাহিকতায় জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনার সম্পর্ক রয়েছে।
আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, শ্রম রোডম্যাপের পূর্ণ ও সফল বাস্তবায়ন আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে একটি পূর্বশর্ত। আন্তর্জাতিক মানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশে শ্রম আইন ও রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) আইন বাস্তবায়ন বিলম্বিত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সব বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ইপিজিডে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে হবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে আমরা অবগত। এ প্রক্রিয়ায় ইইউর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তবে এই দু’টি জিএসপি প্লাস পাওয়া ক্ষেত্রে অন্যতম মৌলিক শর্ত। সরকার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ইপিজেড শ্রম আইন সংশোধন করবে- এমন ইতিবাচক বার্তা আজ আমরা পেয়েছি। এই ক্ষেত্রে বিলম্ব গ্রহণযোগ্য হবে না।
তিনি বলেন, জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়ার জন্য দুর্নীতিবিরোধী জাতিসঙ্ঘের সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন অন্যতম শর্ত। হেইডি হটুলা বলেন, শিশু শ্রমের ক্ষেত্রে ইইউ ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করে। ২০২৫ সালের মধ্যে শিশু শ্রম সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত করার বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিকে আমরা বেশ গুরুত্ব দেই। এই প্রক্রিয়া যথাসম্ভব দ্রুততর করা এবং সময়সীমা এগিয়ে আনতে আমরা সরকারকে উৎসাহিত করছি। তিনি বলেন, ইইউর জিএসপি বিধিবিধান বর্তমানে পর্যালোচনাধীন রয়েছে। জিএসপির শর্তগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার বিষয়টিকে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট খুবই গুরুত্ব দেয়।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিনিধিদলের প্রধান বলেন, বাংলাদেশের পণ্য রফতানি, বিশেষ করে তৈরী পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার ইইউ। এলডিসি হিসেবে ইবিএ স্কিমের অধীনে জিএসপি সুবিধা পায় বাংলাদেশ। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালে এলডিসির তালিকা থেকে বেরিয়ে এসে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হবে। তারপর আরো তিন বছর ইইউর বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি বহাল থাকবে। অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত ইইউর বাজারে পণ্য রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া নিয়ে সমস্যা হবে না। এরপর জিএসপি প্লাসের আওতায় শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে ইইউর বেশকিছু শর্ত মেনে চলতে হবে, যা আমরা ধারাবাহিকভাবে মনিটরিং করছি। হেইডি হটুলা বলেন, ইইউ পরিষ্কারভাবে জানাতে চায়, রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা নয়, বরং ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার অবৈধ আগ্রাসনের কারণেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আজ সমস্যার মুখে পড়েছে।