বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় হাজার হাজার শিক্ষার্থীর স্কুলে ফেরা অনিশ্চিত
নিউজ ডেস্ক।।
করোনা মহামারিতে প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর আগামী ১২ সেপ্টেম্বর খুলছে স্কুল-কলেজ। তবে এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় হাজার হাজার শিক্ষার্থীর স্কুলে ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কোথাও স্কুলে পানি জমেছে, কোথাও আশ্রয়কেন্দ্র বানানো হয়েছে স্কুলকে; কোথাও আবার স্কুলে যাওয়ার পথ ডুবে কিংবা ভেঙে গেছে। অনেকের ঘরে খাবার নেই, অনেকে মা-বাবার সঙ্গে আছে খোলা আকাশের নিচে। তা ছাড়া নদীভাঙনে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় বেঁচে থাকার লড়াইয়ে খুদে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন কালের কণ্ঠ’র নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা—
কুড়িগ্রাম : এ বছর বর্ষা ও বন্যায় সাতটি স্কুল নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকা আরো ২০ স্কুল নিয়ে আতঙ্কে আছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। স্কুলে আসা-যাওয়ার সড়কগুলো ভেঙে গেছে প্রবল স্রোতে। কোনো কোনো স্কুল মাঠ ও আশপাশে জমে আছে পানি। উচ্চ বিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র দীর্ঘ সময় বসে থেকে অভাব ঘোচাতে কাজ করতে গেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তা ছাড়া করোনার কালবেলায় বাল্যবিয়ের হার বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রায় ২০০ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতি নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
গতকাল কুড়িগ্রাম সদরের ধরলা-তীরবর্তী সারডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, স্কুলের মাঠে এখনো পানি। অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার জন্য দুজন ছাত্রী স্কুলে আসছে কোমরপানি ভেঙে। তিনজন শিক্ষক স্কুলে উপস্থিত হয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্কুল খোলার। প্রধান শিক্ষক অতুল চন্দ্র রায় স্কুল খোলার শুরুর দিকে শিক্ষার্থী উপস্থিতি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, স্কুলের চারদিকে পানি। রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে। অনেকের বই-খাতা নষ্ট হয়েছে। তাই শুরুতে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কিছুটা কম হতে পারে। একই কথা বলেন অভিভাবক মতিয়ার রহমান। তিনি জানান, স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে বড় বড় গর্ত পড়েছে। তাই সন্তানদের স্কুলে পাঠানো ঝুঁকি মনে করছেন তাঁরা।
কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলছেন, নদীভাঙন ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলোতে যেন লেখাপড়া বিঘ্নিত না হয়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এদিকে নদ-নদীর পানি কমা অব্যাহত থাকায় কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে ধরলার পানি এখনো বিপত্সীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিপত্সীমার নিচে নেমেছে ব্রহ্মপুত্রের পানি। তবে এখনো তিন শতাধিক চরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত রয়েছে। পানিবন্দি রয়েছে অন্তত ৪০ হাজার মানুষ। বাঁধ ও রাস্তায় আশ্রিত কয়েক হাজার পরিবার এখনো ঘরে ফিরতে পারেনি। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশনের সমস্যা। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলার ৯টি উপজেলায় ২৬ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত রয়েছে।
জামালপুর : বন্যার কারণে জামালপুরের এক হাজার ১৬১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৯০টিতে পাঠদান শুরু হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। যমুনা নদীর পানি অনেক কমে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হলেও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো থেকে পলিমাটি ও ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের উপযোগী করতে কয়েক দিন সময় লাগতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
অন্যদিকে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, কারিগরি ও মাদরাসা পর্যায়ের ৫৯১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে দেওয়ানগঞ্জের বাংলাদেশ রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয় ছাড়া বাকিগুলো খোলার জন্য প্রস্তুতি চলছে। দেওয়ানগঞ্জের ওই বিদ্যালয়টিতে বন্যার্তদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তবে বন্যার পানি কমে যাওয়ায় দ্রুত সময়ের মধ্যেই ওই বিদ্যালয়টি চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুর রাজ্জাক কালের কণ্ঠকে বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৯০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সারা জেলায় বাকি বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান শুরু করার প্রস্তুতি এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। যেখানে পানি আগে নেমে যাবে সেখানকার বিদ্যালয়গুলো দ্রুত পরিষ্কার করে পাঠদান শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ফরিদপুর : জেলার পাঁচটি উপজেলার ৪৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ এবং পাঁচটি বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে বর্তমানে বন্যার পানি আছে। তা ছাড়া সদর উপজেলার পদ্মার চর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ফেরদৌসী মোহন মিয়া জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠেও পানি জমে আছে।
ফরিদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, বন্যার পানি যদি কমেও যায় তার পরও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ক্লাস উপযোগী করতে সময় লাগবে। এতে নির্দিষ্ট দিনে স্কুল খোলা সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
গতকাল সোমবার সদর উপজেলার আলিয়াবাদ ইউনিয়নের গদাধরডাঙ্গি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা নদীসংলগ্ন ওই গ্রামে অবস্থিত গদাধরডাঙ্গি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে হাঁটুপানি জমে রয়েছে। বড় রাস্তা থেকে স্কুলে যাওয়ার পথটিও পানি প্লাবিত রয়েছে। পাশের একটি ভবনে প্রধান শিক্ষক নাজমুন নাহার লাবনীসহ অন্য শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অ্যাসাইনমেন্ট জমা নিচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা পানিতে বুক পর্যন্ত ভিজে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে আসছে।
রাজবাড়ী : বন্যায় পানিবন্দি থাকায় রাজবাড়ীর ২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হবে না বলে জানা গেছে। প্রায় এক মাস ধরে রাজবাড়ীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরের বেশির ভাগ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত। গতকালও পদ্মা নদীর পানি বিপত্সীমার ৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। কয়েক দিন আগের তুলনায় পানি কমতে শুরু করলেও ৬৭ গ্রামের সাড়ে সাত হাজার পরিবারের ৩০ হাজার পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। রাজবাড়ী সদর, কালুখালী, গোয়ালন্দ ও পাংশা উপজেলার চর ও নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট। সেই সঙ্গে তাদের গৃহপালিত প্রাণী নিয়েও আছে সংকট। তলিয়ে গেছে যাতায়াতের রাস্তা, সবজি, ধানসহ বিভিন্ন ক্ষেত। দীর্ঘদিন পানিবন্দি থাকায় দেখা দিয়েছে বিভিন্ন রোগ।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান, কালুখালীর একটি উচ্চ বিদ্যালয় পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। বন্যাদুর্গতদের জন্য সাতটি স্কুলকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তা ছাড়া জেলার সব উচ্চ বিদ্যালয় ও মাদরাসাগুলোকে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ক্লাস নেওয়ার জন্য উপযোগী করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রাজৈর (মাদারীপুর) : বন্যার কারণে পাঠদানের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে মাদারীপুরের রাজৈর ও পাশের মুকসুদপুর (গোপালগঞ্জ) উপজেলায় ১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয়ের মাঠ ও যাতায়াত পথ বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রাজৈর উপজেলার রাঘদী নাগরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অঞ্জলী রানী বৈদ্য জানান, চারদিকে বন্যার পানিতে বিদ্যালয় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের মাঠে পাটখড়ি ও ধানের খড়ের পালা দিয়ে রাখছে এলাকাবাসী।
মুকসুদপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কয়েক দিন আগে প্রতিটি স্কুল পরিদর্শন করেছি। কয়েকটি বিদ্যালয়ের যাতায়াতের রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে পাঠদানে কোনো সমস্যা হবে না। এ ছাড়া করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্যবান্ধব পরিবেশ গঠনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
নীলফামারী : বিদ্যালয় খুলছে এমন ঘোষণায় আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। কিন্তু দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন এবং সাইদী হোসেনের মন মলিন। কারণ তাদের আনন্দের বিদ্যালয় ভবন বন্যায় পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত। পাশাপাশি জলমগ্ন হয়ে বিদ্যালয়ে চলাচলের রাস্তাও বন্ধ। পানির তোড়ে খেলার মাঠ এখন জলাশয়। তাদের ওই বিদ্যালয়ের নাম টেপাখড়িবাড়ী দুই নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নে তিস্তা নদীর অদূরে সেটির অবস্থান।
শুধু টেপাখড়িবাড়ী দুই নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ই নয়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সারি বেশ দীর্ঘ। যদিও তিস্তা নদীবেষ্টিত ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার এমন প্রতিষ্ঠানের সঠিক সংখ্যা গতকাল পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডিমলা উপজেলায় তিস্তার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয় আছে টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নে সাতটি, খালিশাচাপানী ইউনিয়নে দুটি, ঝুনাগাছ চাপনী ইউনিয়নে চারটিসহ মোট ১৩টি। এ ছাড়া জলঢাকা উপজেলার অন্তত দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি প্রবেশের খবর মিলেছে।
সিরাজগঞ্জ : গতকাল বিকেলে সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার চরসাপড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র আকাশ শেখ ও মুস্তাকিম নৌকায় এসেছিল তাদের প্রিয় স্কুল দেখতে। দুই দিন আগেও বন্যার পানি এসে ঠেকেছিল স্কুলঘরের টিকিতে। এখন বন্যার পানি কিছুটা কমলেও সোমবার বিকেলে বন্যার পানি চাল ছুঁই ছুঁই করছিল। এলাকার একমাত্র যোগাযোগ রক্ষাকারী সড়কটিও পানিতে তলিয়ে আছে। নৌকা, কলার ভেলা কিংবা কোমরসমান পানি ভেঙে এখন এই এলাকার মানুষ চলাচল করছে।
মনোহরদী (নরসিংদী) : মনোহরদী পৌর সদরে অবস্থিত সল্লাবাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ ও শ্রেণিকক্ষে জলাবদ্ধতার কারণে পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে। সমস্যা নিরসনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পৌরসভার মেয়র এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসা. রুবিন সুলতানা।
ধুনট (বগুড়া) : চারদিকে থইথই পানি। মাজাপানিতে তলিয়ে গেছে বিদ্যালয় ভবন, মাঠে বইছে স্রোত। শ্রেণিকক্ষও পানিতে টইটুম্বুর। ফলে করোনা দুর্যোগের কারণে প্রায় দেড় বছর পর স্কুল খোলার ঘোষণা এলেও পানি না নামা পর্যন্ত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হবে না। এমন অবস্থা বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভাণ্ডবাড়ী ইউনিয়নের শিমুলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। শুধু শিমুলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বদ্যালয় নয়, একই চিত্র বিরাজ করছে কৈয়াগাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শহড়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৬১।
উপজেলার শিমুলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জীবন নাহার জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনার পানি কূল উপচে বিদ্যালয় এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিদ্যালয়ের কাগজপত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আপাতত এই বিদ্যালয়ে পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না।
নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : প্রমত্তা মেঘনার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কিশোরগঞ্জ-নরসিংদী এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকা। গত পাঁচ বছরে বিলীন হয়ে গেছে ১৫ কিলোমিটার এলাকা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে ভাঙনের শিকার হচ্ছে বাইশমৌজা, গাছতলা, চর কেদেরখলা, দুর্গারামপুর, নয়াহাটি, মানিকনগর, নাসিরাবাদ, ধরাভাঙ্গা, কোনাপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি। বাঞ্ছারামপুর উপজেলার উলুকান্দি, পশ্চিম দরিয়াদৌলত, তেজখালী প্রভৃতি ইউনিয়নের আটটি গ্রামের অস্তিত্ব বর্তমানে চরম হুমকির সম্মুখীন। নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার সওদাগরকান্দি, চরমোদ্দা, মির্জ্জরচর, শান্তিনগর ও নীলক্ষ্মী গ্রামের অন্তত পাঁচ হাজার অধিবাসীর বাড়িঘর বিলীন হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ : উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে মুন্সীগঞ্জে বন্যার পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তলিয়ে যাচ্ছে মানুষের ঘরবাড়ি। মুন্সীগঞ্জের পদ্মা নদী দিয়ে তীব্র আকারে বইছে পানি। এতে এক দিকে বৃদ্ধি পেয়েছে নদীভাঙন, অন্যদিকে বন্যা দেখা দেওয়ায় নদীতীরবর্তী অঞ্চলের মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে।
পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় পদ্মা নদীর তীরসংলগ্ন মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, লৌহজং, টঙ্গিবাড়ী ও মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। টঙ্গিবাড়ী উপজেলার, পাঁচগাঁও, পূর্ব হাসাইল, গারুরগাঁও, চৌসার, বানারী, মান্দ্রা, আটিগাঁওসহ প্রায় ৩০টি গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এতে ওই সব গ্রামের অনেকের ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে।
এদিকে লৌহজং উপজেলার পদ্মা নদীতীরবর্তী কলমা, কনকসার, হলদিয়া, কুমারভোগ ও মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের নিচু গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করছে। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার, পূর্ব রাখি, শিলই ও বাংলাবাজার এলাকায় বেশ কিছু ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। শিলই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে নদীভাঙন চলছে।
ফেনী : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদী রক্ষা বাঁধের দুই স্থানে ভাঙনে ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামের অন্তত ১৪ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। রবিবার ফুলগাজীর জয়পুর এলাকায় এবং সোমবার পরশুরামের সাতকুচিয়া এলাকায় ভাঙনে ভেসে গেছে পুকুরের মাছ, তলিয়ে গেছে রোপা আমন ও শীতকালীন আগাম সবজি। বন্ধ হয়ে গেছে ফুলগাজী-পরশুরাম সড়ক যোগাযোগ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জহির উদ্দীন জানান, মুহুরী ও কহুয়া নদীর দুই স্থানে নদী রক্ষা বাঁধের ভাঙনে বেশ কিছু গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। পানির চাপ কমলেই ভাঙনকবলিত স্থান মেরামত করে দেওয়া হবে।
বরিশাল : নগরীর পোর্ট রোড মৎস্য মোকামে দাঁড়ালে কীর্তনখোলার অন্য তীরে দেখতে পাওয়া গ্রামটির নাম চরকাউয়া ইউনিয়নের পামেরহাট। শুধু নদীর কারণে নগর থেকে বিচ্ছিন্ন গ্রামটি সবুজ গাছপালায় ঘেরা। এ গ্রামটি গত দুই মাসের মধ্যে বদলে গেছে। সেখানে এখন চলছে কীর্তনখোলার ভাঙনের ধ্বসংযজ্ঞ। চলছে ভাঙনকবলিত মানুষের আহাজারি। স্থানীয় লোকজন জানায়, গত দুই মাসের মধ্যে কমপক্ষে ২০ একর ভূমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে, যার মধ্যে ছিল বসতবাড়ি ও কৃষিজমি। ভাঙনের হুমকির মুখে আছে আজাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও আজাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ মসজিদ, মাদরাসা এবং আরো কয়েকটি বসতবাড়ি।
মোল্লাহাট (বাগেরহাট) : বাগেরহাটের মোল্লাহাটে মধুমতী নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে শতাধিক বসতভিটা, উর্বর ফসলি জমি, পাকা রাস্তাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। অব্যাহত এ ভাঙনে ঝুঁকিতে রয়েছে মোল্লাহাটের সিংগাতী, গাড়ফা, গিরিসনগর, সোনাপুর ও চর-বাসুড়িয়া গ্রামের পাকা সড়ক, ফসলি জমি ও বসতভিটা। এ বছর মধুমতী নদীতে বিলিন হয়েছে প্রায় দুই একর ফসলি জমি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদ হোসেন বলেন, ‘মোল্লাহাটে মধুমতী নদীর ভাঙনে বেশ কয়েকটি এলাকায় ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। এ বিষয়ে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’সুত্র কালের কন্ঠ