বরিশালঃ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে রেজিস্ট্রার অতিরিক্ত দায়িত্ব উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক শূচিতা শরমিন নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের বিশেষ সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান পরিস্থিতি সমাধানকল্পে সিন্ডিকেটের ৮৮তম সভা আহ্বান করা হয়েছে।
সে অনুযায়ী ঢাকার অতিথিশালায় (গেস্টা হাউস) এই বিশেষ সভা শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে অধ্যাপক ড. মো. মুহসিন উদ্দীনকে স্বপদে ফেরানোর বিষয়ে আদালতে নির্দেশনা অনুসরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ওই সভায় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় যারা মুচলেকা দেবেন তাদের অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের সমর্থক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিষয়ে এক সদস্য কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিন্ডিকেট।
রেজিস্ট্রার গত ১ ফেব্রুয়ারি অবসরে গেছেন। কিন্তু এখনো তিনি রেজিস্ট্রারের সব দায়িত্ব পালন করছেন। সরকারি সুযোগ-সুবিধা আগের মতোই ভোগ করছেন। উপাচার্যের নির্দেশে তার একান্ত সচিব মো. মিজানুর রহমান ৩০ জানুয়ারি এক আদেশ দিয়েছেন।
সেই লিখিত আদেশে শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে পিআরএল স্থগিতের পাশাপাশি সাময়িকভাবে কাজ চালিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তবে সেই আদেশের কপি অফিশিয়াল কারো কাছে ছিল না।
সিন্ডিকেটের একাধিক সদস্য বলেন, রেজিস্ট্রারের এলপিআর গ্রহণ করে তাকে অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। রেজিস্ট্রার নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত উপাচার্য ওই পদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন বলে সিন্ডিকেটকে অবহিত করেন।
ছাত্রদের ভয়ে ঢাকার অতিথিশালায় সভা
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরি কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী লিয়াজোঁ অফিস বাদ দেওয়া হয়েছে।
তবে ঢাকায় গেস্ট হাউস রয়েছে। মঞ্জরি কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী সিন্ডিকেট সভা বরিশালেই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু শিক্ষার্থীদের ভয়ে ববি ক্যাম্পাসে এই সভা কর্তৃপক্ষ আয়োজন করেনি।
এর আগে ববি ক্যাম্পাসে এজেন্ডাবিহীন সভা আয়োজন করলে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের প্রবেশদ্বারের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে কর্তৃপক্ষ অনলাইনে সভা করতে বাধ্য হন। শেষমেশ সেই সভায় উপ-পাচার্য, কোষাধ্যক্ষ এবং একমাত্র অধ্যাপক অংশগ্রহণ করেননি।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। এমনকি সভায় অংশগ্রহণ না করায় ববির অধ্যাপক ড. মো. মুহসিন উদ্দীনকে সিন্ডিকেটের সদস্য থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সেই ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রারসহ কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। এই ঘটনাও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধানকল্পে উপাচার্য ঢাকার অতিথিশালায় আজ শনিবার সকাল ১১টায় সিন্ডিকেটের বিশেষ জরুরি সভা আহ্বান করেন। উপাচার্যের নির্দেশে সিন্ডিকেটের সচিবের দায়িত্বে থাকা রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম এই সভা আহ্বান করেন।
সেই চিঠিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান পরিস্থিতি সমাধানকল্পে সিন্ডিকেটের ৮৮তম সভা আহ্বান করা হয়েছে। সভাটি ঢাকাস্থ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউসে অনুষ্ঠিত হবে। সভায় অনলাইনে অংশগ্রহণের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম রাব্বানি শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বলেন, সিন্ডিকেটের সভায় সদস্যরা আসতে শুরু করেছেন।
শিক্ষক প্রতিনিধি ছাড়াই সিন্ডিকেট
উপাচার্য অধ্যাপক ড. শূচিতা শরমিন ৫ শিক্ষক প্রতিনিধি ছাড়াই ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টায় এজেন্ডাবিহীন সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করেন। শূন্য পদগুলো হলো ডিন, প্রভোস্ট, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক এবং প্রভাষক।
সিন্ডিকেটের আগে নিয়মবহির্ভূতভাবে নির্বাচিত দুই শিক্ষক প্রতিনিধিকে সিন্ডিকেট থেকে বাদ দেন। এই ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে সিন্ডিকেট সভার দিন বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। এক পর্যায়ে তারা উপাচার্যের বাসভবনের প্রবেশদ্বারের ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও অধ্যাপক মুহসিন সিন্ডিকেটের সভা লিখিতভাবে বর্জন করেন।
উপাচার্যের বাসভবনের প্রবেশ গেট ভাঙচুরের অভিযোগে ৩২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলা করা হয়েছে। মামলায় প্রধান সাক্ষী হিসাবে উপাচার্য শূচিতা শরমিনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
ওই ঘটনার পর অধ্যাপক ড. মো. মুহসিন উদ্দীনকে ‘পতিত সরকারের দোসর’ হিসেবে উল্লেখ করে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য পদ থেকে ১৩ এপ্রিল অব্যাহতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এসব ব্যাপারে কোষাধ্যক্ষের বক্তব্য চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রাব্বানী বলেন, সিন্ডিকেটের সভায় রেজিস্ট্রারের ওই পদে উপাচার্য দায়িত্ব পালন করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. শূচিতা শরমিনের মোবাইল ফোনে বারবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৩/০৫/২০২৫
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.