মিজানুর রহমান।। মানুষ কথার মাধ্যমে মনের ভাব ব্যক্ত করে। তবে সব কথা বলা সুফল বয়ে আনে না। কখনো কখনো চুপ থাকলেই কল্যাণ। নীরবতাও মানুষের একটি বিশেষ গুণ। এ গুণের মাধ্যমে মানুষ অনেক অপরাধ থেকে বাঁচতে পারেন। আদর্শ সমাজ গঠনে কখনো কখনো মানুষকে নীরবতা অবলম্বন করতে হবে। অবশ্য স্থান, কাল ও পাত্র বুঝে নীরবতা অবলম্বন করতে হবে। যত্রতত্র নীরবতা অবলম্বন করা যাবে না।
নীরবতার ক্ষেত্রে শরিয় দৃষ্টিকোণের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। কারণ শরিয়তের বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে নীরবতা পালন জায়েজ নয়। তবে অনর্থক কথাবার্তা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে নীরবতা পালন করতে হবে। অহেতুক কথাবার্তা থেকে নীরব থাকা ষাট বছরের নফল ইবাদত থেকে উত্তম। এ মর্মে নবীজি (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির নীরবতার ওপর কায়েম থাকা ষাট বছরের নফল ইবাদত থেকে উত্তম।’ (মেশকাত : ৪৬৫১)।
সাধারণত অনর্থক কথাবার্তা বলতে গিয়ে অনেক সময় মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়। এমনকি নিজের অজান্তে গিবত-পরনিন্দায় জড়িয়ে পড়ে। যা নিজের উত্তম আমলের পাল্লাকে হালকা এবং গুনাহর পাল্লাকে ভারী করে। তাই নিষ্ফল ও অহেতুক কথাবার্তা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে। তা হলে নীরবতা পালনকারী পরকালে চিরস্থায়ী শান্তি নিকেতন জান্নাতপ্রাপ্ত হবে।
হাদিসে অহেতুক কথাবার্তাকে বর্জন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং নীরবতা পালনকে গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। হজরত আনাস (রা.) রাসুল (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, ‘হে আবু জর! আমি কি তোমাকে এমন দুটি স্বভাবের কথা বলে দেব না, যা বহন খুবই সহজ এবং মাপের পাল্লায় অতীব ভারী? আমি বললাম হ্যাঁ, বলুন। তিনি বললেন, দীর্ঘ নীরবতা ও সচ্চরিত্রতা। সেই সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, বান্দার এ দুটি কাজের মতো উত্তম কাজ আর নেই।’ (মেশকাত : ৪৬৫৩)।
কথার মাধ্যমে ঈমানের প্রকাশ ঘটে। ঈমানের দাবি হলো ভালো কথা বলা অথবা চুপ থাকা। ঈমানদার মানুষ অনর্থক, অযথা, মিথ্যা, পরনিন্দা ও প্রতারণামূলক কথা বলতে পারে না। নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে নতুবা চুপ থাকে’ (বুখারি : ৬০১৮)। যত কম কথা বলা যায় ততই কল্যাণকর। রাসুলুল্লাহ (সা.) দীর্ঘক্ষণ নীরবতা অবলম্বন করতেন।
ওমর (রা.) বলেন, ‘চুপ থাকার কারণে আমি কখনো লজ্জায় পড়িনি, তবে কথা বলার কারণে আমি অনেকবার লজ্জিত হয়েছি।’ আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে চুপ থাকে, সে পরিত্রাণ পায়।’ (তিরমিজি : ২৫০১)।
কথা একবার মুখ থেকে বের হয়ে গেলে আর ফিরিয়ে আনা যায় না। কাজেই পরিণতি ও ফলাফল নিয়ে ভেবেচিন্তে কথা বলা উচিত। এতে পদস্খলন কম হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘মানুষ চিন্তাভাবনা না করে এমন কথাবার্তা বলে, যার দ্বারা তার পদস্খলন ঘটে পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যবর্তী দূরত্ব থেকে বেশি দূরত্ব দোজখে গিয়ে পতিত হয়।’ (বুখারি : ৬৪৭৭)।
শিক্ষাবার্তা /এ/১৬/০২/২০২৫
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.