এইমাত্র পাওয়া

‘এমন গরম জীবনে দেখিনি, সব যেন পুড়ে যাচ্ছে’

বাগেরহাটঃ জেলায় তিনদিনের ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করেছে আবহাওয়া অফিস। জেলাজুড়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপদাহে। মোংলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা চলতি মৌসুমে এ জেলার রেকর্ড। এ সময়ে বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩৪ শতাংশ।

দাবদাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। সর্বস্তরের মানুষ হাঁসফাঁস করছে। পানি অত্যাধিক গরম হয়ে চিংড়ি ঘেরের মাছ মরে যাচ্ছে। গবাদি পশুও অস্থির হয়ে উঠেছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে পোল্ট্রি ফার্মে মুরগীর মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। সবজি ও বোরো ধানের ক্ষেত শুকিয়ে যাচ্ছে। ফসল রক্ষায় কৃষকরা হিমসিম খাচ্ছেন। পল্লী বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে মানুষ আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছেন।

বাগেরহাট চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি সুমন ফকির বলেন, মাত্রাতিরিক্ত গরমে চিংড়ি ঘেরের মাছ মরে যাচ্ছে। ৩/৪ ফুট গভীর পানি আছ, এমন ঘেরের মাছও রক্ষা করা যাচ্ছে না।

খানপুর যুগিধার পাড়ের গৃহবধু কাকলি পাল বলেন, জল আগুন হয়ে যাচ্ছে। কোন অবস্থাতেই মাছ বাঁচানো যাচ্ছে না।

ডেমা গরুগোজা স্লুইজগেট সংলগ্ন চিংড়ি ঘের মালিক আব্দুল হালিম বলেন, ঋণ নিয়ে ৩৫ হাজার চিংড়ির রেপুপোনা ঘেরে ছেড়েছিলাম। এখন মনে হচ্ছে, একটি মাছও পাব না, গরমে সব মরে যাচ্ছে।

এদিকে হাসপাতাল ও ক্লিনিক গুলোতে ডায়রিয়া রোগীর চাপ অত্যাধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাওযার কারনে গত কয়েক দিন ধরে বেলা বাড়ার সাথে-সাথেই রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। লোকজন অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা সব মানুষের। রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকায় গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।

তাপপ্রবাহে বেশি বিপাকে পড়েছেন বাগেরহাটের শ্রমজীবী মানুষ। এ জেলায় তীব্র গরম ও রোদের তাপে কৃষি শ্রমিকসহ দিনমজুর, রিকশাচালকরা কাজ করতে না। এই অবস্থায় শরবতসহ পানীয় জাতিয় দোকানে ভীর করছেন লোকজন।

কামরুজ্জামান মুকুল নামে এক ব্যক্তি বলেন, এমন গরম জীবনে দেখিনি, সব যেন পুড়ে যাচ্ছে। ঘরের মধ্যেও স্বস্তিতে থাকতে পারতিছিনা। রাতে ঘুমাতে পারছিনা, গরমে দম যেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অত্যাধিক কষ্ট হচ্ছে। ’

স্কুল শিক্ষিকা লায়লা বেগম ও সুনয়না রায় সোমা বলেন, সকাল-দুপুর-রাত সমানে গরম পড়ছে। রান্নাবান্না করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। ঘরে থাকার পরেও শরীর থেকে দরদর করে ঘাম বের হচ্ছে, পরণের কাপড়-চোপড় সব সময় ভিজে থাকছে। দিনের মধ্যে ২/৩ বার গোসল করেও লাভ হচ্ছেনা, শরীর আরও খারাপ লাগছে।

বাগেরহাট সদর হাসপাতালে কর্মরত জোৎস্না বেগমের ভাষায়, গরমে যেন দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, মাথা ঘুরাচ্ছে, মনে হয় পড়ে কহন যেন মরে যাব।

দিনমজুর কামাল মোল্লা বলেন, কাজ করতি পারতিছি না। পুকুরে নামেও শান্তি নেই, গরমে পুকুরের পানি যেন ফুঁটতিছে, জম্মের গরম, নামা যায় না, গোসল করা যায় না। তাই সকালে আর রাত্রিরে গোসল করি, তা করলি কি হবে, এট্টু পরে যা তাই, গা ঘামতি থাহে।

বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা: জালাল উদ্দিন ও ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাধায়ক অসীম কুমার সমদ্দার জানান, গত এক সপ্তাগে ডায়রিয়াসহ পেটেরপীড়ায় আক্রান্ত রোগী বেড়েছে। যার অধিকাং শিশু ও বৃদ্ধ।’ অকারণে ঘর থেকে বাইরে না যাওয়া এবং কোমল পানীয় ও ফলমূল বেশী খাওয়ার জন্য তাঁরা পরামর্শ দেন।

মোংলা আবহাওয়া অফিসের প্রধান আবহাওয়াবিদ মো. হারুন অর রশিদ জানান, শুক্রবার বিকাল ৩টায় মোংলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি মৌসুমে এ জেলার রেকর্ড। এ সময়ে বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩৪ শতাংশ।

তীব্র তাপদাহে আবহাওয়া বিভাগ থেকে বাগেরহাটসহ যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া জেলার তিনদিনের জন্য ‘হিট অ্যালার্ট’ সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। বাগেরহাটসহ যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া জেলার উপর দিয়ে হিটওয়েভ বয়ে যাচ্ছে। দাবদাহ আরও বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় আবহাওয়া বিভাগ থেকে এই সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২০/০৪/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.