শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইসিটি শিক্ষার প্রকৃত ব্যবহার হোক
বাংলাদেশে ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ার যে প্রভূত উন্নতি হয়েছে, তাহা অস্বীকার করিবার উপায় নেই । বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশকে ছাপিয়ে আমাদের স্লোগান হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন। ইহা ডিজিটাল বাংলাদেশের আরো উন্নত ভার্শন বা রূপ। এই স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনেরও মৌলিক ভিত্তি তথ্যপ্রযুক্তিতে উন্নতি সাধন। এই উন্নতির জন্য স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থী তথা নূতন প্রজন্মকে আগে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ করিয়া তোলার কোনো বিকল্প নেই। ইহার অংশ হিসাবে সরকার বিশেষত মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে শেখ রাসেল ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব চালু করেছে। ইহা একটি মহতী উদ্যোগ নিঃসন্দেহে। কিন্তু দেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ডিজিটাল ল্যাবগুলির অবস্থা শোচনীয়। এইখানকার কম্পিউটারগুলি দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট। কাগজে কলমে আইসিটি শিক্ষা বাধ্যতামূলক হইলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইসিটি বিষয়ের শিক্ষকই নেই।
পত্রিকান্তরে প্রকাশ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৯০ শতাংশ ডিজিটাল ল্যাবের অবস্থা করুণ। ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ নষ্ট হওয়ার কারণে তা ব্যবহারের অনুপযোগী। ব্যাবহারিক পরীক্ষার নম্বর দেওয়া হচ্ছে অনুমানের ওপর ভিত্তি করে। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকার কারণে ধুলাবালির আস্তরণ জমেছে কম্পিউটার ও চেয়ার-টেবিলগুলিতে। এতে শিক্ষার্থীরা তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাবহারিক জ্ঞান হতে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রতিটি ল্যাবে ১৭টি ল্যাপটপ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে। এই সরঞ্জামাদি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা প্রয়োজন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৬০ শতাংশের অধিক বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব নেই। যেইখানে নেই , সেখানে পর্যায়ক্রমে হলেও ল্যাব প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন। পর্যাপ্ত অবকাঠামো ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক না থাকিলে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষাপ্রসারের মূল লক্ষ্য অর্জন হবে সুদূর পরাহত। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৪ হাজার ৯৮১টি। তন্মধ্যে ১০ হাজার ৯৯৩টিতে কম্পিউটার বিষয়ে কোনো শিক্ষক নেই। সেই হিসাবে এ দুই স্তরের প্রায় ৩২ শতাংশ প্রতিষ্ঠানেই নেই তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ের পাঠদানের কোনো বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক। ফলে কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান কিংবা গণিতের শিক্ষক দ্বারা কোনোমতে জোড়াতালি দিয়া চলছে এই বিষয়টির পাঠদান। তদুপরি ল্যাবে দেওয়া কম্পিউটারগুলির ভার্শন বেশ পুরাতন। করোনা মহামারির কারণে স্কুল ও কলেজ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ল্যাপটপগুলি চার্জ দেওয়া হয় নাই। ইহাতে অধিকাংশ ল্যাপটপের ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেছে। ইহা মেরামতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গাফিলতিও লক্ষণীয়।
এই ক্ষেত্রে আমরা মনে করি, সরকারিভাবে মেরামতের জন্য কোনো নির্দেশনা বা অনুদানের অপেক্ষা করে বসে থাকাটা যুক্তিসংগত নয়। শিক্ষার্থীরা যে ল্যাব ফি দেয়, তা দিয়ে মেরামত করা যেতে পারে। তবে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল ল্যাবে ব্যবহূত কম্পিউটার ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক সামগ্রী মেরামতের জন্য প্রত্যেক জেলায় খুলতে পারে সার্ভিস সেন্টার।এতে বেকার সমস্যা যেমন লাঘব হবে, তেমনি নষ্ট কম্পিউটার-ল্যাপটপ ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি নিয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরগুলিতে শিক্ষকদের দৌড়াদৌড়ি করিতে হইবে না। এতে ল্যাবগুলো সচল থাকবে। সর্বপরি ল্যাবের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং আইসিটি শিক্ষা কাগজে কলমে ব্যবহার না করে বাস্তবতা নিরিখে ব্যবহার করা হোক।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৮/১১/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়