‘প্রশ্ন ফাঁস প্রমাণিত হলে পরীক্ষা বাতিল করা হবে’— বিভিন্ন মহল থেকে আসা অভিযোগ নিয়ে এমন বক্তব্যই দিয়েছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। শুধু বক্তব্য নয়, প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে চারটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। চার জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সমন্বয়ে এসব তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল। যার প্রতিবেদন জুন মাসের মধ্যে দেওয়ার কথা থাকলেও হয়নি, কবে নাগাদ প্রকাশ হবে— সে সম্পর্কেও স্পষ্ট কোনো ব্যখ্যা দেওয়া হয়নি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। যদিও ২৪ মে পরীক্ষা গ্রহণের পর পর প্রায় দেড় মাস হতে চলেছে।
সূত্রের তথ্য, জুনের শেষ সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট জেলার প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা ছিল। তার ভিত্তিতেই অভিযোগ প্রমাণিত হলে নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত ছিল মন্ত্রণালয়ের । কিন্তু সেটি কার্যকর না হওয়ায় পরীক্ষা বাতিলের সম্ভাবনা আপাতত ঝুলে গেল।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন ১৭ দিনের সরকারি সফরে গত ১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেলেন। সেখান থেকে ব্রাজিলের ব্রাসিলিয়া ও রিও ডি জেনিরোতে যাওয়ার কথা রয়েছে। আগামী ১৭ জুলাই তিনি ফিরবেন। তাই এই সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। যেহেতু এর আগে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জুলাইয়ের শেষ দিকে নিয়োগ পরীক্ষার ফল ঘোষণা করার সম্ভাবনা রয়েছে। যেহেতু প্রতিমন্ত্রী দেশে আসার পর সেই সময় চলে আসবে; তাই প্রথম দুই ধাপের বাতিল করে পুনরায় নেওয়াটাও বেশ চ্যালেঞ্জের। তাছাড়া আদৌ প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে কি-না— সেটাও যাচাই করার বিষয় আছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক কর্মকর্তা জানায়, প্রাথমিকের প্রথম দুই ধাপের পরীক্ষা নিয়ে কিছু সমস্যা হয়েছে। তবে তা স্থানীয়ভাবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট জায়গায় ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে যেমন নেত্রকোনায় প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকায় আট শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ওই চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকায় আরও তিন প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ময়মনসিংহ বিভাগীয় উপপরিচালক (ডিডি) বরাবর পত্র দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আরো কয়েকটি স্থানে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’ সুতরাং পুরো পরীক্ষা বাতিলের বিষয়টি অমূলক। তারপরও যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তবে পরীক্ষা বাতিলের চিন্তা আসতে পারে। তবে সেটি প্রতিমন্ত্রী দেশে ফিরলে আলোচনা হবে।
এদিকে প্রথম দুই ধাপের পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বরাবর চিঠি দিয়েছে একদল পরীক্ষার্থী। চিঠিতে তারা লিখেছেন, ‘প্রথম দুই ধাপে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও বিভিন্ন প্রকার জালিয়াতির খবর প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কল্যাণে দেশবাসী জেনেছে। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে যেকোনো জায়গায় প্রশ্ন ফাঁস হলেই তা দেশবাসীর কাছে পৌঁছে যায়। একজন শিক্ষক দেশ ও জাতি গড়ার কারিগর। কিন্তু সেই শিক্ষকই যদি প্রশ্ন ফাঁস ও দুর্নীতির নিয়োগপ্রাপ্ত হন, তবে পুরো শিক্ষাব্যবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এটি দেশ ও জাতির জন্য বড় লজ্জার বিষয়।’ পরীক্ষার্থীরা প্রতিমন্ত্রীকে পরীক্ষা বাতিল করে তার পুনরায় নেওয়ার ব্যবস্থা এবং প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান।
তথ্যমতে, গত ২৪ মে ও ৩১ মে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের ১ম ও ২য় ধাপের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সাতক্ষীরা, পাবনা, পটুয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় এ প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠে। গত ২১ মে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে সাতক্ষীরায় ২১ জনকে গত ৩১ মে পটুয়াখালীতে ১৩ জনকে একবছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়া দুই ধাপের পরীক্ষাতেই প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ বা জড়িত থাকার দায়ে আটক হন বেশ কয়েকজন। সেই থেকে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন কিছু প্রার্থী।
এর আগে প্রাথমিক কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, প্রশ্নফাঁস রোধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন প্রতিমন্ত্রী। যেহেতু প্রথম দুটি পরীক্ষা নিয়ে কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়েছে, তাই সঠিক প্রমাণ পাওয়া গেলে তিনিও পরীক্ষা বাতিলের পক্ষে আন্তরিক। সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করছে সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলো। এজন্য কেন্দ্রগুলো থেকে তথ্য নেওয়ার পাশাপাশি সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ফেসবুকও মনিটরিং করছেন না। নজরে আনছেন প্রশ্নফাঁস নিয়ে সক্রিয় ব্যক্তিগত বেশ কয়েকটি ফেসবুক এ্যাকাউন্ট এমনটি গ্রুপ। তবে পরীক্ষা গ্রহণের পর প্রায় দেড় মাস হতে চললেও তার প্রতিবেদন না দাখিল করায় অনেকেই বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন।
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.