সুস্থ থাকতে কে না চায়। প্রত্যেক মানুষই চান যতোদিন বেঁচে থাকবেন ততোদিনই যেন সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকতে পারেন। অসুস্থতা শুধু মানুষের দেহকেই দুর্বল করে না মানসিকভাবেও বিকারগ্রস্ত করে তোলে। আর এই অসুস্থতা এড়িয়ে সুস্থ থাকতে আমাদেরকে কতকিছুই না করতে হয়।
আজ চিকিৎসা বিজ্ঞানে উন্নতি সাধন হওয়ার ফলে আমাদের এসব ভোগান্তি কিছুটা হলেও কমেছে। মানুষের দেহে খুব কম রোগ আছে যার চিকিৎসা আবিষ্কার হয়নি। দিন দিন নতুন নতুন আবিষ্কার, উদ্ভাবন আমাদের জীবন যাপনকে করে তুলেছে আরো বেশি সহজময়।
আমাদের প্রায় সবার কাছে ডায়াবেটিস (বহুমূত্র রোগ) একটি পরিচিত রোগের নাম। এটি একটি হরমোন সংশ্লিষ্ট রোগ। দেহযন্ত্র অগ্ন্যাশয় যখন যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে না পারে কিংবা শরীর যদি উৎপন্ন ইনসুলিন ব্যবহারে ব্যর্থ হয়, তখন আমাদের শরীরে যে রোগ দেখা দেয় তা হলো ডায়াবেটিস বা বহুমুত্র রোগ। এর ফলে রক্তে চিনি বা শকর্রার উপস্থিতিজনিত অসামঞ্জস্য দেখা দেয়।
আমরা নিয়মিত অভ্যাস এবং স্বাস্থ্যকর কাজের মাধ্যমে এই রোগ থেকে আমাদের নিজেদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারি। যেমন, আমাদের প্রচলিত খাদ্যভাসে কিছু খাবার যুক্ত করার মাধ্যমে এই রোগটিকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। তেমনই একটি খাবার উপাদান হলো তাল ও ওলকচু। যেগুলো আমাদের হাতের নাগলেই পাওয়া যায়।
এই দুটি খাবরের প্রতি আমাদের প্রচলিত কিছু ভ্রান্ত ধারণা থাকলে এগুলো মূলত ডায়াবেটিস বাড়ায় না বরং কমায়। পাকা তালের রস, কচি তালের শাঁস, অংকুরিত তালের আটির ভেতরের সাদা অংশ এবং ওল কচুতে প্রচুর পরিমানে পুষ্টি গুণ (ফাইটোকেমিকেল) থাকায় উপাদান দুটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। এগুলো খেলে ডায়াবেটিসের মাত্রা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমে আসে।
ইসলামী বিশ্ববিালয়ের (ইবি) ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগে বিগত কয়েক বছর ধরে এক গবেষনায় এ বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। গবেষণাটি করেছেন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. শেখ শাহীনুর রহমান। তিনি তার পিএইচডি গবেষণায় ইতোমধ্যে এ বিষয়টি প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন।
এ বিষয়ে এক সাক্ষাতকারে তিনি জানান, তাল উপমহাদের একটি জনপ্রিয় খাবার। কচি তালের শাঁস, পাকা তালের রস এবং অংকুরিত তালের আঁটির ভেতরের সাদা শাঁস বাংলাদেশসহ এশিয়ার অনেক দেশে একটি জনপ্রিয় খাবার। ফলটি সুস্বাদু ও পুষ্টিসমৃদ্ধ হলেও খাদ্য কুসংস্কারের কারণে অনেক ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তি পাকা তালের রস অথবা এর শাঁস খাওয়া থেকে বিরত থাকেন।
এছাড়া মাটির নীচের সবজি হিসেবে ওলকচুর প্রতিও রয়েছে যথেষ্ট খাদ্যভীতি। কিন্তু এই ধরনের প্রচলিত ধারণার পক্ষে বৈজ্ঞানিক কোনো তথ্যই পাওয়া যায়নি। গবেষনায় দেখা গেছে, পাকা তালের রস, কচি তালের শাঁস, অংকুরিত তালের আটির ভেতরের সাদা অংশ অথবা ওল কচুর মধ্যে প্রচুর পরিমানে পুষ্টি গুণ ও ফাইটোকেমিকেলে ভরপুর। স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি এ দুটি উপাদান পরিমিত মাত্রায় প্রয়োগ করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
এই গবেষনায় নিজের ভবিষ্যত পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অদুর ভবিষ্যতে আরও কয়েকটি উদ্ভিতজাত উপাদানের সংমিশ্রণে একটি কার্যকর ডায়াবেটিস নিরাময়ে সক্ষম খাদ্য উপাদান তৈরির নিমিত্তে গবেষণা প্রকল্প চালিয়ে যাওয়ার ই”ছা রয়েছে। এ গবেষণার জন্য ইতিমধ্যে বিভাগে এনিমাল হাউস স্থাপন করা হয়েছে। উপযুক্ত ফান্ড পেলে গবেষণার মান এবং পরিধি বাড়ানো সম্ভব।
উল্লেখ্য, এই অনবদ্য গবেষণার স্বীকৃতি স্বরূপ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সিন্ডিকেট সভা শেখ শাহীনুর রহমানের পিএইচডি ডিগ্রি আনুমোদন দিয়েছে। তার এই গবেষণা প্রকল্পটির সুপারভাইজার (তত্ত্বাবধায়ক) হিসেবে ছিলেন বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুর রউফ এবং কো-সুপারভাইজার ছিলেন অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম।
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.