দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
যার কেউ নেই তারও বাঁচার অধিকার আছে
শিক্ষাবার্তা ডেস্কঃ সজ্ঞাহীন অবস্থায় রাস্তায় পড়ে ছিলেন। নামহীন, ঠিকানা হীন। সহায় সম্বলহীন। তাই গ্রোত্রহীন। পরিচয় বলতে এটুকুই, তিনি একজন নারী। বাংলাদেশের কোনো এক মায়ের সন্তান। সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি মানুষ ও সৃষ্টির শ্রেষ্ট্রজীব।
আর এ জীবের অর্থাৎ প্রতিটি মানুষের জীবনের শ্রেষ্ট সম্পদ হলো মানবিকতা। তাই অচেতন অবস্থায় রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখে সেচ্ছাসেবী জাহিদ, শাকিল, মুরাদ নামে তিনজন মানবিক মানুষ ওই মাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
বাগেরহাট ২৫০ শয্যা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক গুরুতর অসুস্থ দেখে প্রায় ৬০ বছর বয়সী ওই নারীকে ‘অজ্ঞাতনামা’ হিসেবে ভর্তি নেন। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে রোগ নির্ণয়ে শুরু হয় পরীক্ষা-নীরিক্ষা। যেহেতু ওই নারীর কোনো স্বজন নেই। তাই সব দায়-দায়িত্ব নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মমতায় তার সেবা করেন। একপর্যায়ে ধরা পড়ে ব্রেস্ট ক্যান্সার স্টেজ-৪। তার দুই ব্রেস্ট পঁচন ধরে পোকা বাসা বেঁধেছে। জরুরি অপারেশন ছাড়া কোনো উপায় নেই। তাকে অন্যত্র পাঠানোর মত অবস্থাও নেই।
তত্তাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমদ্দার, সার্জারি কনসালটেন্ট ফারুকুজ্জামান ফারুক, এ্যানেস্থেশিয়া কনসালটেন্ট ডা. এসকেন্দার, আরএমও ডা. জব্বার ফারুকী, ডা. আদনান হোসেন, ডা. ইন্দ্রজিৎ বিশ্বাস জরুরিভাবে এ হাসপাতালেই অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন।
অপারেশন করতে গিয়ে একধিক সমস্যা দেখা দেয়। এরমধ্যে প্রধান সমস্যা হলো অপারেশন টেবিলে তিনি মারা যেতে পারেন, অজ্ঞান করলে জ্ঞান নাও আসতে পারে। এ অবস্থায় গার্ডিয়ানের সন্মতিপত্রে স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক। কিন্তু চরম বাস্তবতা হলো রোগীর পক্ষে সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করার মতো কেউ নেই। এমতাবস্থায় অভিভাবকহীন এই রোগীর দায়িত্ব কে নেবে? অপারেশন হবে কি হবে না, এমন জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
ঠিক তখনই নিজের পদ-পদবী, ঝুঁকি সব যেনো ভুলে যান তত্তাবধায়ক ডা. অসীম কুমার। মানবিক মূল্যবোধে তিনি হয়ে যান ‘অজ্ঞাত রুগীর’ অভিভাবক। স্বাক্ষর করেন রোগীর অপারেশনের সম্মতিপত্রে। এরপর তত্তাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমদ্দারের সার্ব্বিক সহয়োগীতায় সার্জারী কনসালটেন্ট ফারুকুজ্জামান ফারুক এর নেতৃত্বে শুরু হয় অপারেশন। অপারেশন চলে তিন ঘণ্টার অধিক।
সার্জারী কনসালটেন্ট ফারুকুজ্জামান ফারুক বলেন, ‘রোগী এখন অপেক্ষাকৃত ভালো আছে। তবে এ অপারেশন এই হাসপাতালে করায় চ্যালেঞ্জ ছিল অনেক। তবুও তত্তাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমদ্দারের সাহসী ভূমিকার কারণে করা গেছে।’
আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. জব্বার ফারুকী বলেন, ‘শ্রদ্ধেয় স্যারদের অত্যন্ত আন্তরিকতার কারনে অপারেশনটি সম্পন্ন এবং সফল হয়েছে। আমাদের সহকর্মী সকলের একান্ত সহযোগিতা ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয়। সমাজ সেবি জাহিদুল ইসলাম জাদু ও হাসপাতাল সমাজকল্যান বিভাগের কর্মকর্তা প্রবীর রায় যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। তার ভাষায়, ‘এটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’
বাগেরহাট ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাধায়ক ডা. অসীম কুমার সমদ্দার সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বলেন, ‘যার কেউ নেই তারও তো বাঁচার অধিকার আছে। মানবতাই সেবা। আমি সাহসী ভূমিকা কি পালন করেছি জানিনা, তবে মানবিকতার সঙ্গে দায়িত্ব কর্তব্য পালন করার চেষ্টা করেছি মাত্র। প্রায় ৬০ বছর বয়সী মানুষটি ক্যান্সারের-৪ স্টেজে ছিলেন। তার দুই ব্রেস্ট পঁচন ধরে পোকা বাসা বেঁধেছিল। অচেতন ছিলেন। স্বজন বা অভিভাবকহীন এমন একজন বয়স্ক নারীর এ হাসপাতালে অপারেশন করা খুবই দুষ্কর ছিল। অসহায় রোগীর প্রতি ভালোবাসা, আন্তরিকতা থাকলে সব সম্ভব। এটা তার উদাহারণ। আমি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ।’
রোগীটিকে রাস্তা থেকে হাসপাতালে নিয়ে আসা এবং সার্বক্ষণিক পাশে থাকার জন্য সেচ্ছাসেবী জাহিদ, শাকিল, মুরাদ এর প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘রোগী এখন কথা বলছে, আগের তুলনায় ভালো আছে। তবে তার জরুরি কেমোথেরাপী ও পূণর্বাসন প্রয়োজন।’ এজন্য হৃদয়বান মানুষের একান্ত সহযোগীতা কামনা করেন তনি।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৬/০২/২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে পেজে লাইক দিয়ে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়।
সর্বশেষ
জনপ্রিয়
এই বিভাগের আরও খবর