৩৪৪ প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে পদোন্নতির যোগ্যতাসম্পন্ন সহকারী শিক্ষক
নীলফামারীঃ জেলায় ২৬২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক। সহকারী শিক্ষকদের মাধ্যমে জোড়াতালি দিয়ে চলছে এসব বিদ্যালয়। ফলে শিশু শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মান ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ৩৪৪টি বিদ্যালয় চলছে চলতি দায়িত্বের (সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষকের পদোন্নতির যোগ্যতাসম্পন্ন) প্রধান শিক্ষক দিয়ে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তর সূত্র মতে, এ জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে এক হাজার ৮৪টি।
এর মধ্যে প্রধান শিক্ষক রয়েছে ৪৭৮টি বিদ্যালয়ে। অবশিষ্ট ৬০৬টির মধ্যে ৩৪৪টি বিদ্যালয় চলছে চলতি দায়িত্বের (সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষকের পদোন্নতির যোগ্যতাসম্পন্ন) প্রধান শিক্ষক দিয়ে। এসব সহকারী শিক্ষকের (চলতি দায়িত্ব) পদোন্নতি পাওয়ার সব যোগ্যতা থাকলেও মামলা জটিলতায় আটকে আছে প্রধান শিক্ষকের পূর্ণ মর্যাদা। অবশিষ্ট ২৬২ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। শূন্য এসব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দাপ্তরিক কাজ চলছে সহকারী শিক্ষকের দায়িত্বে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ১৭৫টি বিদ্যালয়ের মধ্যে পূর্ণ দায়িত্বের প্রধান শিক্ষক ৯০টিতে, চলতি দায়িত্বে ৪৭টিতে এবং শূন্য রয়েছে ৩৮টি। জলঢাকা উপজেলায় ২৪৯ বিদ্যালয়ের মধ্যে পূর্ণ দায়িত্বের প্রধান শিক্ষক ১০৭টিতে, চলতি দায়িত্বে ৯৮টিতে এবং শূন্য রয়েছে ৪৪টি। ডিমলা উপজেলায় ২১৭টি বিদ্যালয়ের মধ্যে পূর্ণ দায়িত্বের প্রধান শিক্ষক ১০০টিতে, চলতি দায়িত্বে ৭৯টিতে এবং শূন্য রয়েছে ৩৮টি।
ডোমার উপজেলায় ১৫৮টি বিদ্যালয়ের মধ্যে পূর্ণ দায়িত্বের প্রধান শিক্ষক ৭০টিতে, চলতি দায়িত্বে ৬০টিতে এবং শূন্য রয়েছে ২৮টি। সদর উপজেলায় ২০৭টি বিদ্যালয়ের মধ্যে পূর্ণ দায়িত্বের প্রধান শিক্ষক ৬০টিতে, চলতি দায়িত্বে ৫২টিতে এবং শূন্য রয়েছে ৯৫টি। সৈয়দপুর উপজেলায় ৭৮টি বিদ্যালয়ের মধ্যে পূর্ণ দায়িত্বের প্রধান শিক্ষক ৫১টিতে, চলতি দায়িত্বে আটটিতে এবং শূন্য আছে ১৯টি।
প্রধান শিক্ষক না থাকা বিদ্যালয়ে দায়িত্বে থাকা একজন সহকারী শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রধান শিক্ষকের পদটি বিদ্যালয়ের একটি প্রশাসনিক পদ। প্রশাসন ও পাঠদান কার্যক্রম চলে প্রধান শিক্ষকের দিকনির্দেশনায়।
সহকারী শিক্ষকরা তাঁর অধীনে কার্যক্রম পরিচালনা করেন। সেখানে সমপদে থেকে দায়িত্ব পালন করলে তাঁকে কেউ মানতে চান না। এতে বিদ্যালয়ের প্রশাসন ও পাঠদান কার্যক্রম ভেঙে পড়ে। এ ছাড়া যিনি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন, তাঁকে দাপ্তরিক কাজে বিভিন্ন সময়ে বিদ্যালয়ের বাইরে যেতে হয়। এ সময় তাঁর দায়িত্বের পাঠদান ব্যাহত হয়।
অপরদিকে চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষকের পদে থাকা এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পদোন্নতির সব যোগ্যতা অর্জন করে তাঁরা চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পেয়েছেন। কিন্তু স্কেল পরিবর্তন না হওয়ায় তাঁরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পাশাপাশি চলতি দায়িত্ব হওয়ায় তাঁর সহকারী শিক্ষকের পদটিও শূন্য হয়নি। ফলে চলতি দায়িত্বের এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষকসংকট রয়েছে। ফলে লেখাপড়ার মান অনেকাংশে বিঘ্নিত হচ্ছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা যায়, পদোন্নতির সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে যোগ্য সহকারী শিক্ষকরা চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। মামলাজনিত কারণে তাঁদের পদোন্নতির বিষয়টি আটকা পড়ে আছে। মামলার জট খোলার সঙ্গে তাঁরা প্রধান শিক্ষকের পূর্ণ দায়িত্ব পাবেন। চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষক হওয়ায় এসব সহকারী শিক্ষদের পদ শূন্য দেখানো সম্ভব হচ্ছে না।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি প্রদানের মতো অনেক যোগ্য শিক্ষক রয়েছেন। তাঁদের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেটি অনুমোদন হওয়ার পর বাকি ২৬২টি শূন্যপদও পূরণ করা হবে।’
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৫/০৭/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়