১৩ বছর ধরে সরকারি স্কুলে নেই প্রধান শিক্ষক
খাগড়াছড়িঃ জেলার মাটিরাঙ্গার উপকণ্ঠে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘মাটিরাঙ্গা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়’। মাধ্যমিক পর্যায় উপজেলায় একমাত্র সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এটি। কিন্তু ১৩ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। ছাত্রাবাসগুলো ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে।
১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ সময় প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্যতা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষক স্বল্পতাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে পাঠদান। যেখানে ডিজিটাল গণ্ডি পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশে পদার্পণ করছে, সেখানে পরিত্যক্ত কক্ষে পাঠদান চলছে প্রতিষ্ঠানটিতে। শিক্ষার মান উন্নয়নে অবগকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রধান শিক্ষক ও বিষয়ভিত্তিক পদশূন্য সহকারী শিক্ষক নিয়োগ এবং স্কুলে শিক্ষার্থী আসন ও শাখা বাড়ানোর দাবি অভিভাবকদের।
সরেজমিন দেখা যায়, ১৩ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। ছাত্রাবাসগুলো ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। দেখলে শরীর চমচম করে উঠে। এদিকে প্রধান শিক্ষকের পদশূন্য থাকায় একযুগেরও বেশি সময় ধরে সহকারী শিক্ষক দিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটির দৈনন্দিন কার্যক্রম।
দাফতরিক কার্যক্রম চলছে জোড়াতালি দেওয়া টিনশেড কক্ষে। দীর্ঘদিন মেরামতহীন মেঝেতে ধরেছে ফাটল ও অসংখ্য গর্ত । অপরিষ্কার ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পাঠদান চলছে। প্রতিষ্ঠানটি সরকারি করণে শিক্ষকরা লাভবান হলেও অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ধুলায় মিশে যাচ্ছে অভিভাককদের স্বপ্ন। হারাতে বসেছে প্রতিষ্ঠানটির ঐতিহ্য।
স্কুল সূত্রে জানা যায়, ৯.৭৫ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮ সালে মাটিরাঙ্গা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় হতে মাটিরাঙ্গা সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় নাম ও সরকারিকরণ করা হয়। সে মোতাবেক ২৮ জন শিক্ষক ও আটজন কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও শিক্ষক রয়েছে নয়জন, কর্মচারী রয়েছে পাঁচজন। কোটা থাকলেও নেই অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর। পাশাপাশি কারিগরি (ভোকেশনাল) শিক্ষা বোর্ডের আওতায় দুটি ট্রেডকোর্চের (ইলেকট্রিশিয়ান ও পারমেশিনারি) জন্য নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক। ব্যবহারিক পাঠদানে প্রযুক্তিগত উপকরণ না থাকায় চরমভাবে পাঠদান ব্যহত হচ্ছে।
অপরদিকে, সভা সেমিনারের জন্য অডিটোরিয়াম, মানসম্মত লাইব্রেরি, আধুনিক মানের একাডেমিক ভবন, শ্রেণিভিত্তিক পাঠদানে বিজ্ঞান ভবন নেই। চারদিকে সীমানা প্রাচীর ও মানসম্মত গেট না থাকায় বেদখল হয়ে যাচ্ছে স্কুলের জায়গা। প্রতিনিয়ত সন্ধ্যার পর মাদকসেবীরা নেশা করে আড্ডা দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আলী হোসেন বলেন, বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশে যে মানের একাডেমিক ভবন থাকার কথা, সেরকম কোনো ভবন নেই প্রতিষ্ঠানটিতে। ১৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষকের পদশূন্যতায় শিক্ষা ব্যবস্থা চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, সরকারি করণের ফলে আসন স্বল্পতার কারণে অনেকেই ভর্তি সুযোগ পায় না। তাই শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষার্থী আসন বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি।
অভিভাবক আবুল হাসেম জানান, বিদ্যালয়টি দীর্ঘদিনের হলেও অবকাঠামো ঠিক নেই। প্রধান শিক্ষকসহ পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। সবমিলিয়ে ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় আছেন বলে জানান তিনি।
আরেক অভিভাবক বেলাল হোসেন বলেন, শিক্ষক স্বল্পতায় ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টির শিক্ষা পরিবেশ অনেকটা নড়বড়ে অবস্থা। খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালেয়ে পাঠদান চলছে। তাছাড়াও রাত্রীকালীন বিভিন্ন নেশাগ্রস্তরা এখানে আড্ডার জমায়। এসব হতে উত্তরণে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, ২০১২ সাল থেকে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। রয়েছে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের সংকট। ২০২২ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর অভিভাকদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নামমাত্র বেতনে তিনজন খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন স্কুল সরকারিকরণ করা হয়ে হেয়েছে। নিয়মানুয়ী শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ করা হবে বলে জানান তিনি।
খাগড়াছড়ি জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোলেম উদ্দিন (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, মাটিরাঙ্গা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় যে কয়জন শিক্ষক নিয়ে জাতীয়করণ করা হয়েছে, সে কয়টি পদ সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনিকভাবে যে পদগুলো বিশেষ করে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক সৃষ্টি লক্ষে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর বরাবর প্রয়োজনীয় তথ্য প্রেরণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৯/০৩/২০২৪