১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৬৫ তরুণ-তরুণী
নওগাঁঃ ১২০ টাকা খরচ করে পুলিশ কনস্টেবলে নিয়োগ পরীক্ষায় চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন ৬৫ জন তরুণ-তরুণী। যাচাই-বাছাই শেষে বুধবার রাতে নওগাঁ পুলিশ লাইন্স মাঠে ফলাফল প্রকাশ ও পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক সুপারিশপ্রাপ্তদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।
পুলিশ কনস্টেবলে নিয়োগ সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন অনেক দরিদ্র পরিবারের স্বপ্নবাজ ছেলে-মেয়ে। যারা আসলে কল্পনা করতে পারেননি এতো সহজে পুলিশে নিয়োগ হবে। কনস্টেবল নিয়োগে এমনিতেই নানা অনিয়মের খবর মুখরোচক হিসেবে রয়েছে। তবে স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ হবে তা ছিলো কল্পনাতীত। অনেকের কাছে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বপ্নের মতো মনে হতে পারে। স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ হওয়ায় সুপারিশপ্রাপ্তরা সাধুবাদ জানিয়েছে কর্তৃপক্ষকে।
পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় ২ হাজার ২৩১ প্রার্থী। প্রথম ধাপে শারীরিক, দ্বিতীয় ধাপে দৌড়, পুশ আপ, লং ও হাই জাম্প এবং তৃতীয় ধাপে দৌড়, ড্রাগিং ও রোপ ক্লাইম্বিং পরীক্ষা হয়। শেষে ৫৪৫ উত্তীর্ণ হন।
গত ৬ মার্চ চতুর্থ ধাপে লিখিত পরীক্ষায় ২২০ জন উত্তীর্ণ হয়। যেখানে চূড়ান্তভাবে মৌখিক পরীক্ষায় ৬৫ জন নিয়োগে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। নিয়োগ প্রাপ্তদের মধ্যে সাধারণ কোটায় ৩৫ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১১ জন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটায় ৩ জন, পুলিশ পোষ্য কোটায় ৫ জন এবং আনসার কোটায় একজনসহ মোট ৫৫ জন পুরুষ রয়েছেন। আর নারীদের মধ্যে সাধারণ কোটায় ৯ জন এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটায় ১ জনসহ ১০ জন।
নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁপানিয়া ইউনিয়নের চকতাতারু গ্রামের চা বিক্রেতার মেয়ে শ্রাবন্তী বানু তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল পুলিশে চাকরি করার। বান্ধবীদের কথায় পুলিশের নিয়োগে ১২০ টাকা খরচ করে আবেদন করেছিলাম। যে দোকান থেকে আবেদন করেছিলাম অনেকেই বলেছিল এসব নিয়োগে অনেক টাকা লাগে। এতে মন ভেঙে পড়েছিল। কিন্তু তারপরও মনোবল হারাইনি। অবশেষে সব পরীক্ষায় সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। না কারো সুপারিশের দরকার হয়েছে, না কোনো টাকা লেগেছে। আমি কখনো ভাবতে পারিনি পুলিশ নিয়োগ পাবো। কিন্তু আল্লাহ সেই ইচ্ছা পূরণ করেছেন।
শ্রাবন্তীর মতো অনেক দরিদ্র পরিবারের স্বপ্নবাজ ছেলে-মেয়েদের নাম এ নিয়োগ প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পেয়েছে। যারা আসলে কল্পনা করতে পারেননি এতো সহজে পুলিশ নিয়োগ হবে।
শ্রাবন্তীর মা বিথী বিবি বলেন, শ্বশুরের দেড় কাঠা জমিতে বসবাস করছি। এ সামান্য জমি ছাড়া আর কোনো সম্পদ নেই। স্বামী চা দোকানি। তার আয় থেকে চলে সংসার। পাশাপাশি বাড়িতে গরু-ছাগল-হাঁস-মুরগি লালন-পালন করা হয়। অনেক কষ্ট করে দুই ছেলে-মেয়েকে পড়াশুনা করানো হচ্ছে। মেয়ের ইচ্ছে ছিল পুলিশে চাকরি করার আল্লাহ সেই ইচ্ছা পূরণ করেছেন।
পত্নীতলা উপজেলার চকনন্দন গ্রামে বিষ্ণপ্রসাদ মোহত বলেন, আমি নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছি। জীবন জীবিকার জন্য অনেক সংগ্রাম করতে হয়। অর্থের নির্দিষ্ট কোনো উৎস ছিল না। আবেদনের টাকাও কষ্ট করে সংগ্রহ করতে হয়েছে। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি হয়েছে। চাকরি পেয়ে অনেক খুশি যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।
সদর উপজেলা দুবলহাটি ইউনিয়ন শরিসপুর গ্রামের নাইমুর রহমান মেধা তালিকায় প্রথম হয়েছেন। তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, প্রথমবার যখন দাঁড়িয়েছিলাম কিছু ভুলের কারণে বাদ পড়েছিলাম। কিন্তু হাল ছাড়িনি। এবার দ্বিতীয় বার দাঁড়িয়ে মেধা তালিকায় প্রথম হয়েছি। নিজের চেষ্টা ও যোগ্যতায় এবং আল্লাহ চেয়েছেন বলেই পুলিশে একজন গর্বিত সদস্য হতে পেরেছি। মানুষ বিভিন্ন কথা বলে যে টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না বা চাকরি হয় না। আমার কাছে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। কোনো টাকা ছাড়াই স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগ হয়েছে। টাকা লেগেছে মাত্র ১২০ টাকা। যা আবেদনের সময় খরচ হয়েছে।
নওগাঁ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক বলেন, নিয়োগে কিছু কিছু বির্তক থাকায় অনেক বড় চ্যালেঞ্জিং ছিল। যারা নিয়োগ পেয়েছেন তারা সবাই নিজ যোগ্যতা ও মেধায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। সে জায়গা থেকে স্বচ্ছতার সহিত আমরা নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পেরেছি। এখানে কোনো ধরনের যোগাযোগ ও অর্থের লেনদেন হয়নি।
তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি যারা যোগ্যতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হতে পেরেছেন তাদের নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এখানে কোনোভাবেই কারো কাছ থেকে এক টাকাও নেয়ার সুযোগ নেই। আর যদি কেউ এ ধরনের সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করেন এবং কেউ যদি অভিযোগ করেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৪/০৩/২০২৪