১০ লাখ টাকা ঘুষ না দেওয়ায় নিয়োগ আটকে রাখলেন প্রধানশিক্ষক
বরগুনার আমতলীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হলেও তাকে নিয়োগ না দিয়ে ১০ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবীর অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ভূক্তভোগী ওই শিক্ষক নিয়োগ না পেয়ে হতাস হয়ে ইউএনওসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে লোক নিয়োগের জন্য ২০২২ সালের ১৫ অক্টোবর একটি দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ১০ প্রার্থী আবেদন করেন। এর মধ্যে বিজ্ঞপ্তির সকল শর্ত পূরন করে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আবুল হোসেন সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগ লাভের জন্য আবেদন করেন। আবেদন জমা নেওয়ার নির্ধারিত তারিখ শেষ হলে একই সালের ৯ ডিসেম্বর বরগুনার সরকারী বালিকা মাধ্যমিক বিদালয়ের কেন্দ্রে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় ১০জনের মধ্যে ৭ জন অংশগ্রহন করে অনুপস্থিত থাকে ৩ জন।
নিয়োগ পরীক্ষায় শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি হিসেবে বরগুনা সরকারী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবুল কালাম, আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষাকর্মকর্তা জিয়াউল হক মিলন, বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা গাজী মো. আনোয়ার হোসেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব মো. আব্দুস সালাম, সদস্য দক্ষিণ রাওঘা নূর আল-আমিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সামসুল আলমসহ সবাই উপস্থিত ছিলেন।
ওই নিয়োগের লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী শহীদ সোহরাওয়াদী মাধ্যমিক বিদ্যলয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আবুল হোসেন লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় ৭৭ নম্বর পেয়ে প্রথম হন। পরীক্ষার এ ফলাফল নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব শহীদ সোহরাওয়ার্দী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস ছালাম প্রথম হওয়া শিক্ষক আবুল হোসেনকে সরবরাহ করেন এবং তাকে নির্বাচিত করা হয়েছে বলে জানান।
কিন্তু নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়া দীর্ঘ ২ মাস অতিবাহিত হলেও প্রথম হওয়া পরীক্ষার্থী মো. আবুল হোসেনকে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ না দিয়ে প্রধান শিক্ষ মো. আব্দুস সালাম ঘুরাতে থাকেন। এক পর্যায়ে আবুল হোসেন প্রধান শিক্ষকের নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাকে ১০ লক্ষ টাকা ঘুষ দিতে হবে বলে জানান। অন্যথায় নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে লোক নিয়োগ করা হবে। এ কথা শুনে আবুল হোসেন হতাশ হয়ে পরেন। এবং গত ৩০ জানুয়ারি আবুল হোসেন আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবুল হোসেন বলেন, আমি নিয়োগ পরীক্ষায় ৭০ নম্বর পেয়ে প্রথম হই। দীর্ঘ ২ মাস ধরে প্রধান শিক্ষক আমাকে নিয়োগ পত্র না দিয়ে ঘুরাচ্ছেন। আমান নিকট তিনি ১০ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবী করেন। টাকা না দিলে নতুন ভাবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে লোক নিয়োগ করা হবে বলে আমাকে জানায়।
অভিযুক্ত শহীদ সোহরাওয়ার্দী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস ছালাম টাকা চাওয়ার বিয়টি অস্বীকার করে বলেন, মো. আবুল হোসেন পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে ঠিকই কিন্তু তাকে বিদ্যালয়ের কমিটির সদস্যরা নিতে চায় না।
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা গাজী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এখন বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভা ডেকে এ বিষয়ে সিদান্ত নেওয়া হবে।
শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি বরগুনা সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবুল কালাম জানান, নিয়োগ বোর্ডের সকল সদস্যদের উপস্থিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরীক্ষায় মো. আবুল হোসেন প্রথম হয়েছে। এখন কি কারনে তাকে নিয়োগ দিচ্ছে না সে বিষয়টি আমার জানা নেই।
আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষাকর্মকর্তা মো. জিয়াউল হক মিলন বলেন, স্বচ্ছভাবে অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষায় মো. আবুল হোসেন প্রথম হয়েছে। এ বিষয়ে আমি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হওয়া মো. আবুল হোসেনকে নিয়োগ দিচ্ছে না এবং তার নিকট ১০ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবী করছে এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তাকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়া সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।