মানবজাতি সৃষ্টির পর যুগে যুগে আল্লাহ প্রদত্ত মহামারি তারই সৃষ্টিকে ধ্বংসের কারণ হয়েছিল। বিভিন্ন শতাব্দীতে বিভিন্ন সময় রোগের বিভিন্ন নাম ও রোগের ধরণ ভিন্ন হলেও শেষ পরিনতি "মৃত্যু" ছিল অভিন্ন। বিভিন্ন শতাব্দীতে মহামারির কারনে পৃথিবীতে মৃত্যুও হয়েছিল অসংখ্য। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অত্যাধুনিক ব্যবস্থার যুগেও রোগের কাছে ধরাশায়ী মানব জাতি।
লাইফ সাপোর্ট, আইসিইউ,সিসিইউ এসব যখন আবিষ্কার হয়নি তখন মৃত্যুর মিছিল বর্তমান সময়ের চেয়ে খুব বেশি ছিল না। অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার দেশ আমেরিকা, ইংল্যান্ড,জার্মানি,অষ্ট্রেলিয়া,ফ্রান্স,ইতালি, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড,রাশিয়া সহ উন্নত দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানও বর্তমান সময়ের মহামারি করোনা থেকে রক্ষা পায়নি। চাঁদে অবতরণ ও মঙ্গলগ্রহে বাড়ি করার মতো চিন্তা নিয়ে মানবজাতি যখন সামনে অগ্রসর হচ্ছে ঠিক তখনই অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে অদৃশ্য এই ভাইরাসের কাছে। উন্নত দেশের বিধর্মী রাস্ট্র্রপ্রধান সহ চিকিৎসকগণও করোনা থেকে মুক্তির জন্য আকাশের দিকে তাকিয়েছেন।
ইসলামের বিধি বিধান ও দেড় হাজার বছর আগে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) কর্তৃক আল কোরআনের বাণী এখন সত্যি প্রমাণিত হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞান ও চিকিৎসকগণ গবেষণা করে বের করেছেন মহামারি কোভিড-১৯ রোগে মুসলিম সম্প্রদায় কম আক্রান্ত ও মৃত্যু বরণ করেছে। বার বার হাত ধৌতকরণ, নাকে পানি দিয়ে পরিস্কার করন,গলায় আটকে থাকা জীবাণু গড়গড়া করার ফলে বের হয়ে যায়।
মুসলিম সম্প্রদায়ের কমপক্ষে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে দিনে ৫ বার হাত,মুখ,গলা,নাক সহ করোনা আক্রমনের জায়গা পরিস্কার করা হয়। ধর্মীয় অনুশাসন যেমন এইডস থেকে রক্ষার প্রধান হাতিয়ার তেমনি ওজু করাটাও করোনা থেকে সুরক্ষা থাকার হাতিয়ার।
করোনা নামক ভাইরাসের এতো শক্তি ছিলো যে সেটা স্বামী থেকে স্ত্রী, মা থেকে সন্তান সবাইকে আলাদা করে দিয়েছিল। করোনার কঠিন সময়ে ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে মানবজাতির সকল বন্ধনই তখন মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছিল। সবাই নিজেকে ভালোবাসে সেই চির সত্যিটা প্রমাণিত হয়েছিল।
একটা সময়ে করোনার ভয়ে স্বামীকে ঘরে ওঠতে দেয়নি তার প্রিয়তম স্ত্রী। সন্তানও নিজেকে নিরাপদে রাখতে বাবাকে রাস্তায়,জঙ্গলে ফেলে দিয়েছিলো। মা তার বিদেশ ফেরত সন্তানকে তারই পরিশ্রমে তৈরী করা ঘরে ওঠতে দেয়নি।
কাবা শরিফের সকল কার্যক্রমও বন্ধ ছিলো। মসজিদের ইমামগণ নামাজের সময় কাঁধে কাধ মিলিয়ে কাতার সোজা করে দাড়াতে বলতেন মুসল্লিদের। করোনার অতি মরিতে সব নিয়মই ভেঙ্গে পড়েছিল। করোনার কারনে মসজিদের শুধু কমিটি ও ইমাম- মুয়াজ্জিন ছাড়া অন্য মুসল্লীর নামাজ পড়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল সরকার। আল্লাহ প্রদত্ত এতোকিছু শিক্ষার পরও মানুষের শিক্ষা হচ্ছে না আজও,তাহলে হবে কবে?
হাজারো কোটি টাকার মালিক নিজেকে রক্ষা করতে পারেনি করোনার হাত থেকে। আমরা দেখেছি হাজারো কোটির মালিক ২ ভাইকে এক ভেন্টিলেটরে অক্সিজেন ব্যবহার করতে হয়েছে যারা ২৪ ঘন্টায় নিজেদের টাকায় হাসপাতাল তৈরি করার ক্ষমতা রাখে। তারাও হেরে গেছে অদৃশ্য করোনার কাছে।
রাজনৈতিক নেতারা যাদের আঙ্গুলের ইশারায় অনেক অনেক কঠিন কাজ নিমেষেই সম্পন্ন হতো সেসব ক্ষমতাধর ব্যক্তিগণও অসহায়ের মতো আত্মসমর্পণ করেছে অদৃশ্য করোনার কাছে। সারা বিশ্বে হাজার হাজার চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মি করোনায় মারা গেছেন।
উন্নত দেশের চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেধা খাটিয়ে আবিষ্কার করেন করোনা "ভ্যাকসিন"। তাতেও শেষ রক্ষা হলো না। টিকা বের হলো। প্রয়োগ হলো। প্রয়োগের পর রোগীর মৃত্যু হলো। বিজ্ঞানীরা শতভাগ সফল হতে পারলোনা।
প্রথম দিকে করোনার উৎপত্তি চীন এবং চীনের গবেষণাগার থেকে ভাইরাস লিক হয়েছে বলে আমেরিকার প্রচারণাকে অনেকে বিশ্বাস করলেও পরবর্তীতে কারো বুঝতে সমস্যা হয়নি যে করোনা আল্লাহ প্রদত্ত গজব। মানবজাতিকে শিক্ষা দিতেই আল্লাহ এই গজব পাঠিয়েছেন পৃথিবীতে।
দুনিয়ায় পাপাচার,অবিচার,মানবাধিকার লঙ্ঘন, অন্যায় এতো বেশি মাত্রায় বেড়ে গিয়েছিল যে ইসলামের শিক্ষা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ মানুষের মধ্যে কমে যেতে থাকে। করোনার কারনে মানুষ সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করেছিলো সবসময়। বিপদের সময় আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তাকে ঘনঘন ডাকা,পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা,ধর্মীয় মূল্যবোধ মেনে চলা,দুনিয়ার জীবন থেকে পরবর্তী জীবনের চিন্তা সবসময় মাথায় রাখা সবই ইসলামি মূল্যবোধের ধারণ করেছিল করোনাকালীন সময়ে।
কেউ কেউ এ শিক্ষা থেকে দুরে থাকলেও অধিকাংশের মনে মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের চিন্তা সবসময় ছিল। করোনার অবস্থা স্বাভাবিক হওয়ার সাথে সাথেই আবার আমরা আগের অবস্থায়। গরীব-অসহায়ের ত্রাণ জনপ্রতিনিধিরা চুরি করতেও দ্বিধাবোধ করেনি।
খাটের নিচে তেলের খনি ও পুকুরে চালের খনি পাওয়া গেছে বাংলাদেশে। যা পৃথিবীতে বিরল। হাজারো কোটি টাকা রেখেই মৃত্যুর খবরেও আমাদের মন গলেনি যে একদিন আমাদের মরতে হবে। করোনা যে কাউকে যখন- তখন ছোবল মারতে পারে।
বিজ্ঞানীরা করোনার ভ্যাকসিন আবিস্কার করলেও আল্লাহর রহমত ছাড়া কিছুই হচ্ছে না এবং হবেওনা। বিভিন্ন ধর্মে যে নামেই ডাকি না কেনো সৃষ্টিকর্তা,আল্লাহ, ঈশ্বর,প্রভু যদি সহায় না হন তাহলে মানবজাতির কোনো উপায় নেই অদৃশ্য ভাইরাস থেকে রক্ষার। আমরা দেখেছি করোনার ভ্যাকসিন গ্রহনের ১৫-১৬ দিন পর করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মির মৃত্যুর খবর।
আবার ২য় ডোজ গ্রহনের ৩০ দিন পরও করোনায় মরার সংবাদ দেখেছি। চিকিৎসকগণ মতামত দিতেন,ভ্যাকসিন কাজ করতে কমপক্ষে ৩ সপ্তাহ বা ২১ দিন সময় নেয়। তাহলে টিকা নেওয়ার ৩২ দিন পরও রোগী মারা গেলো কেনো? খোদ আমেরিকায় টিকার ২য় ডোজ নেওয়ার পরও ৭৪ জনের মৃত্যুর খবর প্রচারিত হয়েছে। কোনো টিকাই শতভাগ সফল নয়। অথচ মাস্কের সুরক্ষা তার চেয়েও ভালো। এ থেকে কী বুঝলাম?
কোনো ভ্যাকসিন বা টীকা করোনা থেকে মুক্তি দিতে পারবেনা। এন্টিবডি,প্লাজমা কোনো কিছুতেই রক্ষা হচ্ছে না করোনা আক্রান্তের। একবার হওয়ার পরও পুনরায় আক্রান্ত হচ্ছেন করোনা রোগে।
পরিশেষে এটাই প্রমানিত যিনি করোনা দিয়েছেন একমাত্র তিনিই পারেন এই মহামারি থেকে তার সৃষ্টিকে সম্পূর্ণ সুরক্ষা দিতে। বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেছেন করোনা থেকে সুরক্ষা পেতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
জাতিসংঘের বর্ণনায় করোনা একসময় মৌসুমে রোগে পরিনত হবে। একসময় বিবৃতি দেওয়া হতো শীতে করোনা বাড়ে। এখন দেখছি গরমেও করোনার প্রাদুর্ভাব। আসলে কেউ সঠিকভাবে বলতে পারবেনা করোনা ও করোনার মৃত্যুর বিষয়ে। ইতোমধ্যে যারা চলে গেছেন তাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি। সৃষ্টিকর্তা যার মৃত্যু যেভাবে রেখেছেন সেভাবেই হবে।
এর বাহিরে কোনো সুযোগ নেই। ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে সকলকেই মরতে হবে। আর ইসলামের শিক্ষা এবং মুসলমানদের বিশ্বাস করোনা একটি উছিলা মাত্র। আল্লাহ যতোদিন হায়াত রেখেছেন তার এক সেকেন্ড আগেও কারো মৃত্যু হবে না। হোক সেটা করোনা অথবা অন্য কোনো উপায়।
লেখক-
বিন-ই-আমিন
শিক্ষক ও সহকারী সম্পাদক, শিক্ষাবার্তা ডটকম