সুপারিশের ৪ মাসেও নিয়োগ পাননি ৩২ হাজার শিক্ষক
ঢাকাঃ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রাথমিক সুপারিশের চার মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়নি। ফলে নিয়োগ পাচ্ছেন না ৩২ হাজার ৪৩৮ জন প্রার্থী।
নানা জটিলতা কাটিয়ে চলতি বছর ১২ মার্চ চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির ফল প্রকাশ করে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। ৬৮ হাজার ৩৯০ জন শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও এর অর্ধেকেরও কম ৩২ হাজার ৪৩৮ জনকে প্রাথমিক সুপারিশ করা হয়।
সূত্র জানায়, মামলাসহ নানা ধরনের জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন সময়ক্ষেপণ করে গত বছর ২২ ডিসেম্বর চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল এনটিআরসিএ। ফলে ওই সময় পর্যন্ত প্রায় ৬৮ হাজার পদ শূন্য থাকলেও নারী কোটার প্রার্থী না পাওয়া এবং কিছু বিষয়ে নিবন্ধনকৃত প্রার্থী না পাওয়ায় অর্ধেকেরও কম মাত্র ৩২ হাজার জনকে সুপারিশ করতে বাধ্য হয় এনটিআরসিএ। ফলে ৩৬ হাজার পদই শূন্য থাকে। এ ছাড়া ইতিমধ্যে আরও সাত-আট হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য হয়েছে। ফলে ৩২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ পাওয়ার পরও আরও ৪০ হাজারের বেশি পদ শূন্য থাকবে।
শিক্ষক নিয়োগে দেরি হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে চাকরিপ্রার্থীরা নিয়োগের অপেক্ষা থেকে হতাশ হয়ে পড়েছেন।
এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান মো. এনামুল কাদের খান বলেন, ‘চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে প্রাথমিক সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীরা ৩০ জুন পর্যন্ত অনলাইনে পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরম জমা দেওয়ার সুযোগ ছিল। এ ছাড়া আমরা তাদের সনদ যাচাইয়েরও কাজ করছি। সনদ যাচাই না হলে অনেকের ক্ষেত্রে এমপিও পেতে সমস্যা হয়। তাই আগেই আমরা যাচাইয়ের কাজ শেষ করছি। ফলে সব মিলিয়ে আমাদের কিছুটা সময় লাগছে। তবে আমরা আশা করছি, সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে আমরা জুলাইয়ের শেষে বা আগস্টের শুরুতে প্রার্থীদের নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখন শূন্য পদের তথ্য সংগ্রহ করছি। এ শূন্য পদের ভিত্তিতে ১৭তম নিবন্ধনে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের সংখ্যা চূড়ান্ত করা হবে। এরপর আমরা পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি দেব। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যারা ফরম পূরণ করেছেন তাদের একটা সারসংক্ষেপ তৈরি করে তা সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও মন্ত্রণালয়গুলোতে পাঠানো হবে। আর সেই সারসংক্ষেপের ওপর ভিত্তি করেই চূড়ান্ত সুপারিশ করা হবে। একই সঙ্গে চলতে থাকবে মাঠপর্যায়ে পুলিশ ভেরিফিকেশন।
জানা যায়, মূলত নারী কোটার প্রার্থী না পাওয়ায় চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির ৩৬ হাজার পদ শূন্য থাকার পরও সুপারিশ করতে পারছে না এনটিআরসিএ। কারণ জেলা বা উপজেলা অনুযায়ী শিক্ষক নিবন্ধনে উত্তীর্ণদের তালিকা করা হলেও চাকরির জন্য জাতীয় মেধাতালিকা হিসাব করে সারা দেশের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় প্রার্থীদের সুপারিশ করা হচ্ছে। এতে অনেক দূর-দূরান্তের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারীরা আবেদন করছেন না। এ ছাড়া চারু ও কারুকলা, শারীরিক শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির (আইসিটি) মতো বিষয়গুলোতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক নিবন্ধনে উত্তীর্ণ প্রার্থী না থাকায় পদ শূন্য থেকেই যাচ্ছে।
চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে প্রাথমিক সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থী ইমরান খান বলেন, ‘বলতে গেলে প্রায় চার বছর ধরে আমাদের এ নিয়োগ কার্যক্রম চলমান আছে। কারণ ১৬তম নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়েছিল ২০১৯ সালের ৩০ আগস্ট। যাদের বেশিরভাগই চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে প্রাথমিক সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, দীর্ঘদিন পর গণবিজ্ঞপ্তি শেষে প্রাথমিক সুপারিশের পরও চার মাস ধরে তা আটকে আছে। নিয়োগের এ দীর্ঘসূত্রতার কারণে আমাদের জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে। আমরা পারিবারিক, সামাজিক, মানসিক ও অর্থনৈতিকভাবে চরম সমস্যায় দিন কাটাচ্ছি। তাই যত দ্রুত সম্ভব আমাদের চূড়ান্ত সুপারিশের দাবি জানাচ্ছি।’
প্রাথমিক সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীরা বলছেন, তারা নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণের পর থেকেই জটিলতার মধ্যে রয়েছেন। ১৬তম নিবন্ধনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের প্রায় দুই বছর পর চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। অনেকটা আন্দোলন সংগ্রামের মুখে এনটিআরসিএ এ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল। এরপর অটোমেশন সফটওয়্যারে ১৫ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের সুযোগ থাকলেও তাতে আড়াই মাস সময় লাগায় এনটিআরসিএ। এবারই প্রথমবারের মতো অনলাইনে ভি-রোল ফরম পূরণের নির্দেশ দেয়। কিন্তু বারবার এর সময় বাড়ানো হচ্ছে। আবার সনদ যাচাইয়েও কালক্ষেপণ করা হচ্ছে।
জানা যায়, স্কুল ও মাদ্রাসায় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক যাদের ব্যাচেলর অব এডুকেশন (বিএড) ডিগ্রি নেই তারা শুরুতে ১২ হাজার ৫০০ টাকা মূল বেতন পান। এর বাইরে তারা বাড়ি ভাড়াবাবদ ১ হাজার ও চিকিৎসা ভাতাবাবদ ৫০০ টাকা পান। আর বিএড ডিগ্রি থাকলে তাদের মূলত বেতন হয় ১৬ হাজার টাকা। কলেজপর্যায়ে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রভাষকরা শুরুতে ২২ হাজার টাকা মূল বেতনের পাশাপাশি ১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ও ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। ফলে কলেজপর্যায়ে শিক্ষকদের পদ তেমন শূন্য না থাকলেও স্কুল-কলেজে নারী কোটার পদগুলো পূরণ করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া যেহেতু এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি নেই, যা একটি বড় সমস্যা।
এনটিআরসিএর সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক ফোরামের আহ্বায়ক মো. সান্ত আলী বলেন, ‘চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির প্রায় অর্ধেক শূন্যপদ পূরণ হয়নি। আর যারা প্রাথমিক সুপারিশ পেয়েছেন তারাও এখনো নিয়োগ পাননি। এ ছাড়া ইতিমধ্যে আরও অনেক শিক্ষকের পদ শূন্য হয়েছে। ফলে বিশাল শিক্ষক শূন্যতা নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাভাবিক পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। মূলত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৈষম্য ও বদলি ব্যবস্থা না থাকাই শূন্যপদ পূরণে অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধকতা। এসব কারণে নারী কোটার প্রার্থীদেরও পাওয়া যাচ্ছে না। যা সমাধানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দ্রুততার সঙ্গে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।’
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৩/০৭/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়