সচিবালয়ের নন-ক্যাডার পদ নিয়ে অসন্তোষ
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
সচিবালয়ের নন-ক্যাডার পদ নিয়ে কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সহকারী সচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিব পদে এক-তৃতীয়াংশ সংরক্ষণের নিয়ম থাকলেও তা মানতে আমলাদের অনীহা রয়েছে। এ নিয়ে সচিবালয়ে কর্মরত পদোন্নতি বঞ্চিতদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বিষয়টি তারা ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গে দেখা করে তুলে ধরেছেন। দফায় দফায় আশ্বাস পেলেও দাবি মানতে অনীহা রয়েছে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে। এর ফলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কর্মরত প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা কাজের উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন বলে জানান। তাদের মতে, পদোন্নতি পাওয়ার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (এও-পিও) এবং সহকারী সচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিব (নন-ক্যাডার) কর্মকর্তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে প্রায় তিন হাজার এও-পিও কর্মকর্তা রয়েছেন। এসব কর্মকর্তার পদোন্নতির জন্য ক্যাডারবহির্ভূত মাত্র ২৬৭টি সহকারী সচিব, ৭২টি সিনিয়র সহকারী সচিব এবং ৯টি উপসচিব পদ রয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। ফলে অধিকাংশ ১০ম গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তা দীর্ঘদিন একই পদে কর্মরত থেকে অবসরে যাচ্ছেন। অনেক এও-পিও সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েও ১৫ থেকে ১৬ বছরেও কোনো পদোন্নতি পাচ্ছেন না। ফলে তাদের কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া ৭২ জন সিনিয়র সহকারী সচিবের জন্য উপসচিবের পদ রয়েছে মাত্র ৯টি। ফলে ৩০ থেকে ৩২ কর্মকর্তা উপসচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করার পরও পদোন্নতি পাচ্ছেন না। অথচ কর্মকর্তাদের জন্য সহকারী সচিব পদের এক-তৃতীয়াংশ সংরক্ষণের নিয়ম আছে। তবে এ নীতি মানার ব্যাপারে আমলাদের মধ্যে রয়েছে অনীহা। ফলে ৩০ বছরেও বাস্তবায়ন করা যায়নি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ সিদ্ধান্ত।
জানা যায়, ১৯৯২ সালের বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন) ও বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (সচিবালয়) ক্যাডার একীভূত আদেশে সচিবালয়ের ভিত্তিপদ সহকারী সচিব বা সিনিয়র সহকারী সচিবের মোট পদের এক-তৃতীয়াংশ নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষণের কথা বলা আছে। বিসিএস (সচিবালয়) ও বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার একীভূত করার সময় গঠিত এসএম আকরাম কমিটির সুপারিশে বলা হয়, ভবিষ্যতে সচিবালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পদ সৃষ্টি হলে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য আনুপাতিক হারে পদ বাড়াতে হবে। প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা- এসব নন-ক্যাডার পদের ফিডার হিসেবে পদোন্নতিযোগ্য হবেন। ২০১৮ সালে ইকোনমিক ক্যাডার প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত হওয়ায় সহকারী প্রধানের ২৫০টি এবং সিনিয়র সহকারী প্রধানের ১৫৪টি পদ যুক্ত হয়। এতে এক-তৃতীয়াংশ হিসেবে ১৩৫টি পদ নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত থাকার কথা। বাস্তবে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য একটি পদও সংরক্ষণ করা হয়নি। এ ছাড়া ২০১৮ সালের ২২ মে ১১১টি পদ সংরক্ষণ করে তা থেকে ৩৯টি পদ বাদ দেওয়া হয়। আবার ২০১৯ সালের আগস্টের পর সহকারী সচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিবের ৫৬টি নতুন পদ সৃজন করা হয়েছে। এর এক-তৃতীয়াংশ হিসেবে ১৯টি পদ সংরক্ষণযোগ্য। ফলে সহকারী সচিবের (নন-ক্যাডার) বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত প্রায় ৩০০ পদ সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন সচিবালয়ের এও-পিওরা।
প্রশাসন ও সচিবালয় ক্যাডার একীভূতের সময় ১৯৯২ সালে এসএম আকরাম কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, উপসচিবের ২৬টি পদ সংরক্ষণের কথা থাকলেও করা হয় মাত্র ৯টি। পরবর্তীতে উপসচিবের অনুমোদিত পদ বেড়ে যাওয়ায় আনুপাতিক হারে পদ সংরক্ষণের কোটা বেড়ে হয়েছে ৬২টি। একই সুপারিশ অনুযায়ী, সহকারী সচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিবের সংরক্ষিত পদ বাড়িয়ে সংরক্ষণ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে বাদ পড়ে উপসচিব পদে। নন-ক্যাডার পদে কর্মরত এবং যোগ্য ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বঞ্চিত করে ওই সব পদে ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রাপ্ত পদের অতিরিক্ত পদে পদায়ন করা হচ্ছে। অন্য পদের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বিষয়টি সচল থাকলেও ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তাদের সহকারী সচিব পদে পদোন্নতিতে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
এ নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এপিডি উইং) মো. আব্দুস সবুর ম-লের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে সংশ্লিষ্টরা জানান, সহকারী সচিব পদ সংরক্ষণের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেখানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিনিধিও যুক্ত করা হয়েছে। সহকারী সচিব (ক্যাডারবহির্ভূত) পদ সংরক্ষণের বিষয় পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দেবে ওই কমিটি। তবে প্রতিবেদন এখনো দেওয়া হয়নি।