শিশুর প্রতি অমানবিকতা বন্ধ হোক
প্রতিনিয়ত দেশে শিশু নির্যাতনের খবর গণমাধ্যমে আসছে। গত ৯ বছরেরও বেশি সময় আগে শিশু আইন পাস হয়েছে। কিন্তু আইনের বিধিমালা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের ২৫ নভেম্বর পর্যস্ত ৮ হাজার ৮৩২ জন শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছে। যার বিপরীতে মামলা হয়েছে ৪ হাজার ৬৭৫টি। এই সময়ে ২ হাজার ৫৯০ শিশুকে হত্যা করা হয়। ধর্ষণের শিকার হয় ৩ হাজার ৫৯৬ জন ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় ৫৮০ জন। ধর্ষণের শিকার শিশুদের মধ্যে ২২৭ জন ছেলে। গত বুধবার বাংলাদেশের শিশু অধিকার পরিস্থিতি ও করণীয় নিয়ে আয়োজিত সংলাপে এসব তথ্য জানানো হয়। তথ্যটি উদ্বেগের। শিশু সহিংসতার অধিকাংশ ঘটনার সঙ্গে পরিচিতজনরা জড়িত, অনেক ক্ষেত্রে মা-বাবা জড়িত থাকার মতো অবিশ্বাস্য ঘটনাও ঘটছে। অপরাধ বিজ্ঞানী এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এসব অপরাধের জন্য অল্প সময়ে সহজে টাকা কামানোর কৌশল, পরকীয়া ও অনৈতিক সম্পর্ক এবং সামাজিক নিরাপত্তার অভাবকে দায়ী করেছেন। মা-বাবা ও স্বজনদের হাতে শিশু খুনের ঘটনার পেছনে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রয়েছে সম্পর্কের টানাপড়েন, অনৈতিক সম্পর্ক, পারিবারিক দ্ব›দ্ব। অপরাধীরা অল্প সময়ে সহজ পথে অবৈধভাবে অর্থ আয়ের জন্য অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির পথ অবলম্বন করে থাকে। যার জন্য সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা দায়ী। অনেক ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের ব্যস্ততার সুযোগও নিচ্ছে অপরাধীরা। শ্রম ক্ষেত্রে শিশুরা শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। শিশুশ্রম বন্ধে আইনের প্রয়োগ না থাকা এ ক্ষেত্রে দায়ী। বাংলাদেশে ৩০ লাখের বেশি শিশু শিশুশ্রমের ফাঁদে আটকে আছে, যার মধ্যে ১৩ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত। প্রতি পাঁচটি শিশুর মধ্যে একটি শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করার আগেই শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়ে। প্রতি দুটি মেয়েশিশুর মধ্যে একটির বাল্যবিয়ে দেয়া হয়। প্রায় অর্ধেক শিশুর জন্মনিবন্ধন নেই। এখনো লাখো শিশু রাস্তায় বসবাস করে। সর্বোপরি শিশুর প্রতি সংহিসতা ও নৃশংসতার পেছনে রয়েছে সামাজিক অবক্ষয় ও নৈতিক শিক্ষার দুর্বলতা। এখনই এই নির্মমতা প্রতিরোধ করা না গেলে সামনের সময় আরো খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। শিশু নির্যাতন ও হত্যার মতো অমানবিক অপরাধ প্রতিরোধ করতে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন। এ সংক্রান্ত অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে সরকারকে আন্তরিক উদ্যোগ নিতে হবে। আজকের শিশুই দেশের ভবিষ্যৎ- এ কথা মাথায় রাখতে হবে। শিশুর প্রতি সহিংসতা বা নির্যাতন সাময়িক কোনো বিষয় নয়, এর দীর্ঘমেয়াদি ফলাফলও আছে। শিশুরা যদি সঠিকভাবে বেড়ে ওঠে, সেটা যেমন দেশের জন্য মঙ্গলকর, তেমনি শিশুরা সহিংসতা বা নির্যাতনের শিকার হলে তা নানা রকম নেতিবাচক পরিণতি বয়ে আনতে পারে। শিশুর কল্যাণ, সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করার জন্য প্রণীত শিশু আইন ২০১৩-এর যথাযথ প্রয়োগ জরুরি। শিশু নির্যাতক ও হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া দৃঢ় করতে হবে পারিবারিক ঐক্য ও বন্ধন। বেশি করে জোর দিতে হবে নৈতিক শিক্ষার ওপর।