শিক্ষাক্রম বিস্তরণ প্রশিক্ষণ: শিক্ষকদের টাকা নয়-ছয়
গাইবান্ধাঃ জেলার পলাশবাড়ীতে উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের (ইউআরসি) ইনস্ট্রাক্টরের বিরুদ্ধে প্রশিক্ষণে শিক্ষকদের মধ্যে নিম্নমানের উপকরণ বিতরণ, যাতায়াত ভাতা কম দেওয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষাক্রম বিস্তরণ প্রশিক্ষণের বাজেট থেকে মোটা অংকের টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে প্রাশিক্ষণার্থীদের অভিযোগ। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউআরসি ইনস্ট্রাক্ট রবিউল ইসলাম।
জানা গেছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (টিআইডিপি-৪) আওতায় ইউআরসি/টিআরসিতে ৩ দিন করে শিক্ষাক্রম বিস্তরণ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। প্রতি ব্যাচে ৩০ জন করে মোট ৩২টি প্রশিক্ষণে হবে। এজন্য প্রশিক্ষার্থী প্রতি বরাদ্দ ১ হাজার টাকা। এই হিসেবে মোট ৯৬০ জন প্রশিক্ষাণার্থীর জন্য ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা খরচ হওয়া কথা।
এদিকে আরডিপিপির বরাদ্দ বাজেটে প্রতিটি প্রশিক্ষণে দুজন করে ট্রেনার প্রশিক্ষক দেন। এ জন্য প্রতি প্রশিক্ষণার্থীর জন্য তথ্যপত্র, একটি কলম, একটি প্যাড, নেম কার্ডের জন্য বরাদ্দ ৫০০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি প্রশিক্ষণার্থীর একটি করে ব্যাগ বাবদ ৫০০ টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে ও বাজার যাচাই করে দেখা গেছে, প্রশিক্ষার্থীদের জন্য ছাপানো সর্বোচ্চ ১০০-১২০ টাকা মূল্যের একটি তথ্যপত্র, ১৫-২০ টাকার একটি কলম, ১০ টাকার নেম কার্ড, ২০-৩০ টাকার প্যাড দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া প্রশিক্ষণার্থীদের দেওয়া ব্যাগের বাজার মূল্য ৩০০ টাকার বেশি না। সব মিলিয়ে ৪৫০-৪৬০ টাকা ব্যায় হচ্ছে। ফলে প্রশিক্ষণার্থীর বরাদ্দে ১ হাজার টাকার মধ্যে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকাই থেকে যাচ্ছে ইন্সটাক্টরের হাতে। প্রশিক্ষণার্থী ৯৬০ জন শিক্ষকের বরাদ্দ থেকে প্রায় ৫ লাখ হাতিয়ে নেওয়া চেষ্টা চলছে।
এদিকে পরিপত্র অনুযায়ী, ৩০ জনের একটি ব্যাচে যাতাযাত বাবদ বরাদ্দ করা হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা। এ হিসেবে দুজন প্রশিক্ষক ও ৩০ জন প্রশিক্ষণার্থী প্রত্যেকে ২ হাজার ৩৪৩ টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু সেখানে দৈনিক ২৫০ টাকা হিসেবে প্রশিক্ষণার্থীদের দেওয়া হচ্ছে মোট ৭৫০ টাকা। এখানেও প্রতি ব্যাচে ১ হাজার ৫৯৩ টাকা উপচয় হিসেবে বেঁচে যাচ্ছে ২০ হাজার টাকার বেশি। এসব টাকা কোনো হিসেবে পরিষ্কার নয় বলে জানিয়েছেন প্রশিক্ষণ নেওয়া একাধিক শিক্ষক।
এছাড়া শিক্ষকরা জানিয়েছেন, ৩ দিনের প্রশিক্ষণের প্রথম দিনে প্রত্যেককে ২৮০ টাকা খাবার দেওয়া হলেও, পরের দুদিন দেওয়া হচ্ছে নাস্তা বাবদ ২৫-৩০ টাকা। তবে ইনস্ট্রাক্টর রবিউল ইসলাম দাবি, পরের দুদিন খাবারের পরিবর্তে শিক্ষকদের টাকা দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আরজুমান আরা গুলেনুর বলেন, বরাদ্দের টাকা কম খরচ ‘শিক্ষা অফিসের দেখার বিষয় নয়। তাদের আমরা শুধু তালিকা দেই, বরাদ্দের বিষয়টা তারাই দেখে।’
জানতে চাইলে সহকারী ইন্সট্রাক্টর সোহেল মিয়া বলেন, ‘কোনো অনিয়ম হয়নি।’ ইনস্ট্রাক্টর রবিউল ইসলাম বলেন, ‘বরাদ্দ অনুযায়ী সবকিছু দেওয়া হচ্ছে।’ খাবারে বরাদ্দ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রশিক্ষণে শিক্ষকরা কেউ কেউ বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে আসেন। তাই তাদের খারাবের পরিবর্তে নগদ টাকা দেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান বলেন, ‘যেদিন প্রশিক্ষণের উদ্বোধন হয়েছিল, সেদিন গিয়েছিলাম।’ বরাদ্দের টাকার ব্যবহার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে তিনি জানান।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০২/১২/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়