শিক্ষক নির্যাতন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না চাইলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে: রাশেদা কে চৌধুরী
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, কোনো কারণ, যুক্তি আর অজুহাতেই শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।
একেক সময় একেকটি ইস্যু সামনে রেখে এ ধরনের অন্যায় শিক্ষকদের ওপর ঘটে থাকে। এরপর কয়েক দিন মানববন্ধন হয়। এরপর ইস্যুটি স্তিমিত হয়ে যায়।
পরে আবার শিক্ষক-নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। যদি প্রত্যেক ঘটনা যথাযথ তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যেত, তাহলে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটত না।
সাভারে ছাত্রের পিটুনিতে শিক্ষক নিহত আর নড়াইলে শিক্ষককে জুতার মালা পরানোর ইস্যুতে যুগান্তরের সঙ্গে আলাপকালে এ শিক্ষা বিশ্লেষক আরও বলেন, এ ধরনের ঘটনা দেখে দিনে দিনে হতাশা অনুভব করছি। আমাদের জীবদ্দশায় এ ধরনের ঘটনাও দেখতে হবে তা ভাবিনি।
তিনি বলেন, শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনায় বিচার হয়েছে বলে খুব একটা মনে পড়ে না। অপরাধীরা আসলে পার পেয়ে যাচ্ছে। আবার অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, অপরাধীরা রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় পাচ্ছে। সাভারের ঘটনায় ছাত্রটিকে ধরে ফেলেছিল জনতা। কিন্তু তাকে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকতে এ ধরনের ঘটনা কীভাবে ঘটে। আবার এখন তাকে খুঁজেই পাচ্ছে না। যদি বাস্তবতা এমন হয়, তাহলে এ ধরনের অপরাধ কীভাবে কমবে। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, অপরাধ তো অপরাধই। এত ঘটনার পরও কেন অপরাধীদের বিচার হয় না-সেই আত্মজিজ্ঞাসার সময় এসেছে।
তিনি বলেন, সাভারে নির্যাতিত শিক্ষক ছিলেন শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান। নির্যাতক ছাত্রটির ব্যাপারে নারী শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। নিহত শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার বিষয়টি তদারকি করছিলেন। কমিটির সদস্য হিসাবে তিনি তার ওপর অর্পিত শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ব্যবস্থা নেবেন-এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু এখানে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাকে প্রাণ দিতে হয়েছে। নারী অধিকারের একজন কর্মী হিসাবে আমার প্রশ্ন, একজন নারী শিক্ষার্থীকে যদি সুরক্ষা দেওয়া না যায় এবং সুরক্ষা দেওয়ার কারণে যদি এ ধরনের ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়-তাহলে নারী শিক্ষা ও অগ্রগতি কীভাবে সম্ভব হবে?
অন্যদিকে নড়াইলের ঘটনায় দেখা গেছে, পরিচালনা কমিটির সদস্যরাও জড়িত। চাকরিচ্যুতির মতো ঘটনাও ঘটেছে। পরিচালনা কমিটি এ ধরনের ঘটনা কীভাবে ঘটায়। দেশে কী কোনো বিচার-আচার নেই! শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি করেছে বলে শুনেছি। এখন দেখার অপেক্ষায় আছি, মন্ত্রণালয় কী করে!
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, সামান্য ছুতোয় ধর্মকে ব্যবহার করে বিভিন্ন ঘটনা ঘটানোর খবর পাচ্ছি। এ ধরনের ঘটনার প্রকৃত কারণ বের করা জরুরি। এ ধরনের ঘটনার প্রকৃত অপরাধীকে চিহ্নিত করা জরুরি। পাশাপাশি তাকে বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন। এতে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে তা ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা বন্ধে সহায়ক হবে। অন্য দিকে যে বা যারা অপরাধ করছে, বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা, তারা কোনো না কোনো পরিবারের সদস্য। তাদের বাবা-মা আছেন। সন্তান এভাবে বখে যাচ্ছে বা অপরাধে জড়াচ্ছে, পরিবারের প্রধানের কী এ ক্ষেত্রে কোনো দায়িত্ব নেই?
তিনি মনে করেন, সাভার এবং নড়াইলে যে দুটি ঘটনা ঘটেছে, দুটিই ফৌজদারি অপরাধ। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতেই হবে। নড়াইলের ঘটনায় রিট মামলা দায়ের করতে বলা হয়েছে। যেহেতু বিষয়টি উচ্চ আদালতের নজরে এসেছে, সংশ্লিষ্ট শিক্ষক সুবিচার পাবেন বলে আশা রাখছি।