শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধার সব দ্বার বন্ধ রেখে স্মার্ট বাংলাদেশ কীভাবে সম্ভব
মো. জামিল বাসার।।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্রের ধ্বংসস্তূপের উপর দাঁড়িয়েই সেদিন বুঝতে পেরেছিলেন যে, শিক্ষা-ই একমাত্র একটি রাষ্ট্রকে উন্নত এবং সমৃদ্ধ করতে পারে। একটি জাতিকে জ্ঞানবিজ্ঞানে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে হলে শিক্ষার বিকল্প আর কিছু নেই। তাই বঙ্গবন্ধু সেই ১৯৭২ সালেই এ দেশের মানুষকে সুশিক্ষিত সুনাগরিক করে গড়ে তুলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।
স্বাধীনতার সূর্য উদয়ের পর থেকে প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে পুনর্জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। তারই আলোকে বঙ্গবন্ধু ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭২৪ জন শিক্ষককে সরকারি করে প্রাথমিক শিক্ষায় গতির সঞ্চার করেন।
ঠিক তখন প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষকদের বেতন-ভাতা একই ছিল, প্রধান শিক্ষকেরা আলাদা দায়িত্বের জন্য ভাতা পেতেন, যা চলমান ছিল ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত। ১৯৭৭ সালের পর থেকেই বিভিন্ন সরকার বিভিন্ন রকমের ফর্মুলা প্রয়োগ করেন এবং প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মাঝে চরম বেতন বৈষম্য তৈরি করেন। আজ সেই বৈষম্য চরম অমানবিকতার জায়গায় পৌঁছে গেছে।
প্রধান শিক্ষকদের বর্তমান বেতন গ্রেড ১১তম এবং সহকারী শিক্ষকদের বেতন দুই ধাপ নিচে ১৩তম গ্রেডে। বঙ্গবন্ধুর সরকারের পরে আর কেউ প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে ভাবতে বসেনি। ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধুর দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেন। ২০১৪ সালে আবার ক্ষমতায় এসে বর্তমান সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের জন্য দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা ১০ম গ্রেড ঘোষণা করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেই ঘোষণা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা এবং ১০ম গ্রেড গত ৯ বছর যাবৎ রয়ে গেছে আদালতেই।
পাঠকদের জেনে রাখা দরকার, ইতিমধ্যে সহকারী শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষকদের নিয়োগ যোগ্যতা স্নাতক দ্বিতীয় শ্রেণির করা হয়েছে। এরই মধ্যে সহকারী শিক্ষকেরা গ্রেড বৈষম্য থেকে মুক্তি পেতে এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুসারে ১০ম গ্রেডের দাবি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। দেশের প্রতিটি উপজেলায় মানববন্ধন করেছেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর এবং প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। তথাপি মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তর থেকে ইতিবাচক কোনো সাড়া না পেয়ে অবশেষে সহকারী শিক্ষকেরা তাদের ন্যায্য দাবি নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হন। সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড কেন প্রদান করা হবে না এটা জানতে চেয়ে মহামান্য আদালত রুল জারি করেন।
আমরা এখন স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছি। শিক্ষকদের দৈন্যদশার ভেতরে রেখে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হওয়ার নয়। বাংলাদেশের একমাত্র ক্ষেত্র, যেখানে গত ১৩ বছর যাবৎ সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি বন্ধ, টাইমস্কেল বন্ধ, সিলেকশন গ্রেড বন্ধ, উচ্চতর গ্রেড বন্ধ অর্থাৎ শিক্ষক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সকল বিষয়গুলোর দ্বার বন্ধ। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয়গণ কিছুদিনের জন্য আসেন, এই ক্ষেত্রটি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা লাভের আগেই বদলি হয়ে বা পদোন্নতি পেয়ে অন্যত্র চলে যান। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সমস্যা সমাধানে কাউকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা যায় না।
বর্তমান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সবিনয়ে নিবেদন রাখব যে, প্রাথমিক শিক্ষায় আমূল-পরিবর্তন আনতে শিক্ষক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সকল বিষয় উন্মুক্ত করে দিন, দেখবেন এই প্রাথমিক শিক্ষকরাই মানসম্মত, যুগোপযোগী এবং সুশিক্ষিত সুনাগরিক উপহার দেবে। আর সেই নাগরিকরাই আগামীর বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে রূপান্তর করবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৮/০৩/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়