শিক্ষকদের মর্যাদা হোক প্রথম শ্রেণির
প্রাথমিক শিক্ষাই মূল শিক্ষা। গাছের প্রাণ যেমন শেকড় বা মূলে থাকে তেমনি গোটা শিক্ষা ব্যবস্থার প্রাণ শক্তি প্রাথমিক শিক্ষার মধ্যেই নিহিত। প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে দেশের আনাচে কানাচে, শহর থেকে গ্রামে। প্রাথমিক শিক্ষার ভিত মজবুত হলে তবেই কেবল দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত ও টেকসই বলে বিবেচিত হবে। উন্নত দেশ মানেই উন্নত প্রাথমিক শিক্ষা। বিশ্বের অন্যন্য উন্নত রাষ্ট্রে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উচ্চ ডিগ্রিধারী শিক্ষক নিয়োজিত এবং তাদের পদমর্যাদাও প্রথম শ্রেণির। সেক্ষেত্রে এদেশের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা ও প্রাথমিক শিক্ষকদের পদমর্যাদার চিত্র দেখে মনে কষ্ট লাগে। প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম নিতান্ত সহজ ও ক্ষুদ্র ভাবলে ভুল হবে। পারিপার্শ্বিক বৈচিত্র্যময় অবস্থা ও শিশুর মানসিক অবস্থা বিচার বিশ্লেষণ করে অতি সুক্ষ্মভাবে বারবার অনুশীলন ও ধৈর্যের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার পাঠদান পরিচালিত হয়। এজন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হতে হবে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। একজন বহুমুখী প্রতিভাবান শিক্ষক শিশুমন বিশ্লেষণ করে শিশুর মাঝে বিদ্যমান সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তোলে। প্রাথমিক শিক্ষার একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য রয়েছে। শিশুর শারীরিক, মানসিক, আবেগিক, নান্দনিক, আধ্যাত্মিক,মানবিক, সামাজিক ও নৈতিক গুণাবলীর বিকাশ সাধন এবং দেশাত্মবোধে,বিজ্ঞানমনস্কতায়,সৃজনশীলতায় ও উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শনে উদ্বুদ্ধ করা। লক্ষ্যটি সঠিক ও যুগোপযোগী। শিক্ষিকা হোসনে আরা পারভীনের প্রশ্ন এ লক্ষ্য অর্জনে আমরা কতটুকু সফল? শিশুর মাঝে বিভিন্ন গুণাবলীর বিকাশ ঘটিয়ে তাকে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শনে উদ্বুদ্ধ করা নিম্ন মানের শিক্ষক দ্বারা সম্ভব নয়। আর নিম্ন মানের বেতন ও নিম্ন মর্যাদা দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উচ্চ মানের শিক্ষক প্রতিপালন করা যায় না। প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজন মানসম্মত শিক্ষক। এজন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দেওয়া উচিৎ প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদা। অল্প শিক্ষিত নিম্ন মানের শিক্ষক প্রাথমিক শিক্ষার অ আ ক খ পড়াতে পারে বটে, শিশুকে উন্নত জীবনের স্বপ্নদর্শনে উদ্বুদ্ধ করতে পারে না। আর শিশুর মাঝে মানহীন বীজ বপন করলে তা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হবে। প্রাথমিক শিক্ষার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি দৃঢ় ও মজবুত করতে হবে।
"প্রাথমিক শিক্ষা মজবুত না হলে,গোটা শিক্ষা ব্যবস্থা যাবে রসাতলে।"
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে সর্বাগ্রে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজন। যথাযথ মর্যাদা পেলে এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই হবে সোনার বাংলার সোনার মানুষ গড়ার সুদক্ষ কারিগর।