র্যাগিংয়ে জড়িত ছাত্রীই হচ্ছেন ঢাবির শিক্ষক!
শিক্ষাবার্তা ডেস্ক, ঢাকাঃ র্যাগিংয়ে জড়িত থাকা এক সাবেক শিক্ষার্থীকে লেকচারার পদে নিয়োগের সুপারিশ করার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের বিরুদ্ধে। বিভাগের লেকচারার পদের ২ শূন্য পদের একটিতে নিয়োগ পাচ্ছেন ওই শিক্ষার্থী। র্যাগিংয়ে জড়িত ওই প্রার্থীর নাম মোছা. নিলুফা ইয়াসমিন।
অভিযোগ রয়েছে- সাবেক ওই শিক্ষার্থীকে লেকচারার পদে নিয়োগ পাইয়ে দিতে সব ধরনের তদবির করেছেন ওই বিভাগের দুই প্রফেসর।
সূত্র মতে, ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি দ্বিতীয় বর্ষে থাকা অবস্থায় প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের একটি ক্লাস রুমে দীর্ঘ সময় আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠে নিলুফাসহ তার ২০জন সহপাঠীর বিরুদ্ধে। এ সময় প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জড়তা-সংকোচ কাটানোর নামে ক্লাস রুমে দীর্ঘ সময় আটকে রেখে অকথ্য ভাষায় গালাগালি, অশ্লীল হিন্দি গানের সাথে নাচতে বাধ্য করা, গায়ে হাত দেয়া, কপালে টিপ ও ঠোঁটে লিপস্টিক লাগিয়ে দেয়া, মেয়েদের গায়ের ওড়না খুলে ছেলেদের গায়ে জড়িয়ে দেওয়া এমনকি চুমু দেয়ার মতো যৌন হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠে তাদের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়; র্যাগিংয়ের শিকার কতিপয় ছাত্রীকে বারবার স্পর্শকাতর অঙ্গের নাম উচ্চারণ করতেও বাধ্য করা হয়।
তখনও র্যাগিংয়ের এমন অবর্ণনীয় ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠে বিভাগের কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে। পরে শাস্তি না দিয়ে শুধু মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া এবং এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিপ্লিনারি কমিটিকে না জানানোর জন্য তৎকালীন চেয়ারপার্সনের নিকট অনুরোধ জানায় ওই শিক্ষকরা। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপার্সন ছিলেন প্রফেসর ওয়াহিদা হক। পরবর্তীতে দ্বিতীয় বর্ষের ঐ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৯ জন শিক্ষার্থী ক্ষমা প্রর্থনা করে লিখিত আবেদন দেয় বিভাগের তৎকালীন চেয়ারপার্সন বরাবর। পরবর্তীতে তাদের সবার আলাদা আলাদা স্বীকারোক্তিমূলক লিখিত ক্ষমার আবেদন পত্র ভিসি বরাবর জমা দেয় বিভাগ।
সেই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে মৎসবিজ্ঞান বিভাগের তৎকালীন বিভাগীয় চেয়ারপার্সন প্রফেসর ওয়াহিদা হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কে নিয়োগ পাবে, কে না পাবে এবং কে পাওয়া উচিত, কে না পাওয়া উচিত তার সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ কমিটির হাতে। আমি বোর্ডের সদস্যও না, কে বা কারা সেখানে আবেদন করেছে তাও জানি না। তবে যেটা গ্রহনযোগ্য সেটা সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য আর যেটা অগ্রহণযোগ্য তা সবার কাছেই অগ্রহণযোগ্য। ভালো জিনিসকে সবাই ভালো বলি, খারাপ জিনিসকে খারাপ। এখানেও বিশ্ববিদ্যালয় নিশ্চয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রীতিনীতি অনুযায়ী বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে বিভাগের দুটি লেকচারার শূন্য পদে নিয়োগের জন্য দরখাস্ত আহ্বান করে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়োগ বোর্ড। আবেদনের মেয়াদ শেষ হয় ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ এবং নিয়োগ বোর্ড বসে ২৭ ফেব্রুয়ারি২০২৩। এরই মধ্যে গুঞ্জন উঠেছে লেকচারারের দুটি শূন্য পদের একটিতে নিয়োগ পেতে যাচ্ছে র্যাগিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের একজন (নিলুফা)। তাছাড়া অভিযোগ উঠেছে, ওই সাবেক শিক্ষার্থীকে লেকচারার পদে নিয়োগ পাইয়ে দিতে নানা মহলে তদবির করে যাচ্ছে উক্ত বিভাগেরই কয়েকজন শিক্ষক।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি নিয়োগ বোর্ডের অন্যতম সদস্য বিভাগের বর্তমান চেয়ারপার্সন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ রোকনুজ্জামান।
তবে বিভাগের সদ্য সাবেক চেয়ারপার্সন ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য প্রফেসর মনিরুল ইসলাম বলেন, ওই ঘটনায় মূলত কোনো র্যাগিং হয়নি। যেটা হয়েছে তা হলো তারা নিজেরা মিষ্টি খেয়েছে। এটা জাস্ট একটা অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ছিল। পরে ডিপার্টমেন্টে তা আলোচনা হয়েছে এবং ডিপার্টমেন্ট থেকেই বলা হয়েছে যে, যেহেতু বিষয়টা সিরিয়াস কিছু না তোমারা একটা আবেদন লিখো যে একটা অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে গেছে এবং বিষয়টা যেহেতু সিরিয়াস কিছু ছিল না তাই তাদের বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশান নেয়া হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার ফোন করে বোর্ড সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) প্রফেসর এ এস এম মাকসুদ কামালের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১০/০৪/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়