যবিপ্রবি: শিক্ষক-শিক্ষার্থী দ্বন্দ্বে ভেস্তে গেল পড়ালেখা
যশোরঃ জ্বালানী ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য ১০ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইনে ক্লাসের সিদ্ধান্ত নেয় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি)। গত ৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, চেয়ারম্যান ও দফতর প্রধানদের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্তের পর কতিপয় শিক্ষার্থী জোরপূর্বক শিক্ষকদের পরিবহনের চাবি ছিনিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি লিফট বন্ধ করে দেয়। এই অভিযোগে শিক্ষক সমিতির ঘোষিত কর্মসূচি ‘শিক্ষকদের অপমানের বিচার না হওয়া পর্যন্ত সব একাডেমিক কার্যক্রম থেকে কর্মবিরতি’ চলছে।অন্যদিকে গত ৩১ জুলাই যবিপ্রবি রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২ আগস্ট থেকে সব ক্লাস সশরীরে অনুষ্ঠিত হবে। সেই অনুযায়ী আজ ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা আর হয়নি। এতে চরম বিড়ম্বনা ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের কতিপয় ব্যয় স্থগিত-হ্রাসকরণ ও বিদেশভ্রমণ সীমিতকরণ প্রসঙ্গে সরকারের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, যবিপ্রবিতে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ২৫ শতাংশ বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে হবে মর্মে গত ১০ জুলাই (সোমবার) সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ১০ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ জুলাই কতিপয় শিক্ষার্থী হঠাৎ বেলা আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সব রুটের পরিবহনের চাবি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। প্রশাসনিক, একাডেমিক ভবনের লিফটসমূহও বন্ধ করে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ভবনের লিফটম্যানদের সরিয়ে লিফটগুলো বন্ধ করে দেয়। বাধ্য হয়ে সিনিয়র শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনেকে লাইনবাসে, ভ্যান বা অটোতে করে বাড়ি ফিরে যায়।
পরবর্তীতে ১৮ জুলাই (মঙ্গলবার) এ ঘটনার বিচার চেয়ে উপাচার্য বারবার অভিযোগ করে যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ঐ ঘটনায় শিক্ষকবৃন্দ চরমভাবে অপমানিত ও অসম্মানিত বোধ করেছেন। উক্ত অপমান ও লাঞ্ছনার তদন্তক্রমে সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত ২২ জুলাই শনিবার হতে শিক্ষকগণ সব প্রকার একাডেমিক কার্যক্রম হতে বিরত থাকবেন।
এদিকে ৩১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২ আগস্ট (বুধবার) থেকে সব ক্লাস সশরীরে অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির কর্মবিরতিতে বিড়ম্বনায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। অনলাইন ক্লাস হওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাড়িতে চলে যায়, ক্লাস অফলাইনে হওয়ার ঘোষণা আসলেও শিক্ষকরা ক্লাসে না ফেরায় অনেকেই এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা না পেয়ে দোটানায় পড়েছেন। আবার দীর্ঘদিন ক্লাস না হওয়ায় সেশনজটের শঙ্কায় ভুগছেন শিক্ষার্থীরা। সেমিস্টার পরীক্ষার কোর্স ফি জমার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ আগস্ট। এ নিয়েও চলছে নানা সমালোচনা।
শিক্ষকদের চলমান কর্মসূচি বিষয়ে জানতে চাইলে যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গালিব বলেন, আগামী শনিবার কর্মসূচি সম্পর্কে শিক্ষকদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হবে।
শিক্ষকদের একটি সূত্রে জানা যায়, শিক্ষকদের অপমানের সুষ্ঠু তদন্ত প্রতিবেদন ও বিচার না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকরা তাদের কর্মবিরতি কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
এ বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী জ্বালানী ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য চলতি বছরের ৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ডিন, চেয়ারম্যান ও দফতর প্রধানদের বৈঠকে ১০ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। শিক্ষকগণ এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে অনলাইন ক্লাসে ফিরেছিলেন। জ্বালানী ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য একটি স্বার্থান্বেষী মহল কুচক্রের অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের লিফট ও বাস বন্ধ করে দেয়। যাতে শিক্ষকগণ চরমভাবে অপমানিত হয়ে সব প্রকার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছিলেন। ঘটনার সত্যতা যাচাই ও দোষীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য শিক্ষকদের সম্মতিক্রমে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে শিক্ষকদের জানানো হয়েছে। তবে অনলাইন ক্লাসের সময়সীমা শেষ হলেও শিক্ষকদের ক্লাসে না ফিরলে শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়বে। শিক্ষকদের কোনো কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ক্ষতি ও পিছিয়ে পড়া কোনোভাবেই কাম্য নয়।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৩/০৮/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়