মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুলিয়া ক্যাম্পাসকেই স্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে ঘোষণার দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন শিক্ষার্থী ফোরামের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রাক্তন শিক্ষার্থী ফোরাম।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফোরামের আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান। এসময় উপস্থিত ছিলেন ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইদুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান, সদস্য সচিব সাদ বিন জসিম, যুগ্ম সদস্য সচিব পারভেজ ও তিশাদ মো. জুনায়েদ।
ফোরামের আহ্বায়ক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি একটা স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যা ২০০১ সালে ইউজিসির অনুমোদন নিয়ে অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে গুলশানে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু ইউজিসি আইন অনুযায়ী যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব স্থায়ী সম্পত্তিতে স্থায়ী ক্যাম্পাস রাখার শর্ত পূরণের জন্য ২০১২ সালে আশুলিয়াতে সুবিশাল ৩ দশমিক ৪ একর (১০ বিঘা) জমি ক্রয় করে যা ইউনিভার্সিটির একমাত্র নিজস্ব সম্পত্তি। ২০১৭ সালের ২৮ জানুয়ারি উদ্বোধনের মাধ্যমে আশুলিয়ায় সাতটি ফ্যাকাল্টির প্রায় ২০০০ শিক্ষার্থী নিয়ে পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাস হিসেবে মানারাত তার শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে।’
আশুলিয়া ক্যাম্পাসকে ইউজিসি স্বীকৃত একমাত্র স্থায়ী ক্যাম্পাস উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান বোর্ড অব ট্রাস্টিজ জানেনই না যে বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র স্থায়ী সম্পত্তি হিসেবে আশুলিয়ায় একটি ১০ বিঘার জমি আছে। সেখানে আটটি ডিপার্টমেন্টে প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘ভিসি ড. নজরুল ও কলা অনুষদের ডিন ড. ওবায়দুল্লাহ এই সম্পত্তির বিষয়ে ট্রাস্টিকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখেছেন এবং ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা কেউই এখনো স্থায়ী ক্যাম্পাসে ভিজিট করেননি। অথচ সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান ২০১৭ সালে আশুলিয়া ক্যাম্পাস উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি ক্যাম্পাস দেখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আরো বেশ কিছু ডিপার্টমেন্ট চালু করার বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে বলেন।’
ইউজিসির নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সব শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম আশুলিয়া স্থায়ী ক্যাম্পাসে পরিচালিত হওয়ার কথা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও ইউজিসি নির্দেশনা অমান্য করে গুলশানে স্থায়ী ক্যাম্পাস করার জন্য কর্তৃপক্ষ কার্যক্রম শুরু করেছে যেখানে জমি নিয়ে মামলা চলমান। এমনকি গুলশানের ভাড়া করা ক্যাম্পাসে স্থায়ী ক্যাম্পাসের সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে, যার কোনো অনুমতি ইউজিসি থেকে পাওয়া যায়নি। ইউজিসির স্বীকৃতি ছাড়া কীভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত স্থায়ী ক্যাম্পাসকে বন্ধ করে দিয়ে একটি অস্থায়ী ক্যাম্পাসকে স্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়? আমরা মনে করছি এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি বড় ধরনের হুমকি এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মকভাবে ক্ষতির কারণ।’
তিনি অভিযোগ তোলেন যে বোর্ড অব ট্রাস্ট্রিজ পরিবর্তন করে ২০২২ সালে স্থায়ী ক্যাম্পাসকে গুলশানে স্থানান্তরিত করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়, যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক হতাশা কাজ করছে। কারণ সুবিশাল স্থায়ী ক্যাম্পাস ছেড়ে গুলশানে ভাড়াকৃত বিল্ডিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে চাইছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ নিয়ে বিগত ৩ মাস ধরে আন্দোলন করে আসছেন বর্তমান শিক্ষার্থীরা। প্রথমে বর্তমান শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের দ্বারস্থ হয়ে বিষয়গুলো পরিষ্কার করার চেষ্টা করেন। কিন্তু শিক্ষকদের কাছ থেকে সন্তোষজনক উত্তর না পেয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মেয়র আতিকুল ইসলামের কাছে স্মারকলিপি দেন। কিন্তু সেখানেও কোনো ফিডব্যাক শিক্ষার্থীরা পাননি। উল্টো তাদের ওপর চড়াও হন কতিপয় শিক্ষক যারা এই ক্যাম্পাস স্থানান্তরের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তারা শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করেন।
কিন্তু গত ৮ জুলাই থেকে আশুলিয়া স্থায়ী ক্যাম্পাস সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়ে অনলাইন ক্লাসের নোটিশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারপর থেকে শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলনকে আরো জোরালো করার চেষ্টা করেন। শিক্ষার্থীরা কোনো কুলকিনারা না পেয়ে ইউজিসির দ্বারস্থ হয়ে চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। সেই সঙ্গে রেজিস্ট্রেশন ও ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ক্যাম্পাসে আন্দোলনকে চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আমরা বিভিন্ন মারফত জানতে পেরেছি বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি ড. নজরুল ইসলাম এসব বিষয় তোয়াক্কা না করে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় যদি ধ্বংস হয়ে যায় আমাদের কিছু করার নেই। তবুও গুলশানে স্থায়ী ক্যাম্পাস করবোই।’
ইউজিসির শর্ত পূরণ করে গুলশানে স্থায়ী ক্যাম্পাস করার কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যে জায়গাটির ওপর ইউনিভার্সিটির অস্থায়ী ক্যাম্পাস রয়েছে সেই জমিটি নিয়েও এখন মামলা চলমান। উপরন্তু সেখানে মাত্র তিনটি ডিপার্টমেন্টে ৮৬০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। অন্যদিকে ইউজিসি স্বীকৃত ইউনিভার্সিটির একমাত্র স্থায়ী ক্যাম্পাস আশুলিয়াতে যেখানে মোট আটটি ডিপার্টমেন্টে প্রায় ২২০০ শিক্ষার্থী রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে আশুলিয়া ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করে অস্থায়ী ও ভাড়াকৃত বিল্ডিংয়ে শিক্ষার্থীদের স্থানান্তর একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। কারণ গুলশানের চেয়ে আশুলিয়াতে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় তিন গুণ বেশি। তাছাড়া ক্লাসরুম, লাইব্রেরি, ল্যাব ফ্যাসিলিটি স্থায়ী ক্যাম্পাস আশুলিয়াতে পর্যাপ্ত রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘১০ বিঘার স্থায়ী ক্যাম্পাস বিক্রি করে গুলশানে একটি অস্থায়ী/ভাড়া নেয়া ক্যাম্পাসে ভিসি এবং হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষক ঢাকায় থাকার অভিলাষের কারণে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন হুমকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছেন। আশুলিয়াতে ড্যাফোডিল, সিটি, ব্র্যাক, ইস্টার্নসহ অন্যান্য ইউনিভার্সিটি থাকতে পারলে মানারাত ইউনিভার্সিটি সেখানে থাকতে অসুবিধা কি?’
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘গুলশানের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় স্থানান্তর করা হলে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে চলে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়টির সিএসই, ইইই এবং ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে আশুলিয়া ক্যাম্পাস স্থায়ী না হলে তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আর পড়বেন না। কারণ তাদের জন্য পর্যাপ্ত ল্যাব প্রয়োজন যা গুলশান ক্যাম্পাসের ভাড়া নেয়া বিল্ডিংয়ে সংকুলান সম্ভব নয়।’
সংবাদ সম্মেলনে কয়েকটি দাবি তুলে ধরা হয়-
১. ইউজিসি রুলস অনুযায়ী গুলশান ক্যাম্পাস স্থায়ী ক্যাম্পাসের শর্ত পূরণ করে না তাই আশুলিয়া ক্যাম্পাসকেই স্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে ঘোষণা দিতে হবে। আমরা আশুলিয়া ক্যাম্পাসকে স্থায়ী জেনে ভর্তি হয়েছি, আমরা কোনো ভাড়া করা যায়গায় যাব না।
২. বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতির জন্য যদি ক্যাম্পাস স্থানান্তর করতেই হয় তাহলে নিজস্ব জায়গায় প্রয়োজনীয় স্থাপনা, ক্লাসরুম ও ল্যাবরেটরিসহ মানসম্মত প্রয়োজনীয় সব সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে এবং ইউজিসি কর্তৃক স্বীকৃত হয়ে স্থানান্তর কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
৩. অনতিবিলম্বে আশুলিয়া ক্যাম্পাসে অফলাইন ক্লাস চালু করতে হবে। অনলাইনে কোনো প্রকার ক্লাস বা পরীক্ষা নেয়া যাবে না।
৪. আশুলিয়া ক্যাম্পাসে বিভাগ ভিত্তিক ল্যাব, ক্লাসরুমসহ প্রয়োজনীয় সব সুবিধা বাড়াতে হবে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে সিএসই, ইইই, ফার্মাসি এবং জার্নালিজমের ল্যাব ও প্রয়োজনীয় নানা শিক্ষা উপকরণের ব্যাপক স্বল্পতা রয়েছে।
৫. শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কেউ কথা বললে তাকে কোনো রকম হয়রানি করা যাবে না।
৬. অনতিবিলম্বে আত্মঘাতী সব সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে সুষ্ঠু ও মানসম্পন্ন শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২০/০৭/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়