মন্ত্রণালয়ে অভিযোগের স্তূপ রাজধানীর নামিদামি স্কুলের বিরুদ্ধে
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
গলাকাটা টিউশন ফি আদায়ে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগের স্তূপ রাজধানীর নামিদামি স্কুলের বিরুদ্ধে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এবার সরাসরি ‘অ্যাকশনে’ যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রথম ধাপে তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। পরে এমপিও বাতিলসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, চেতনা মডেল একাডেমি, বনানী বিদ্যা নিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শহীদ বীর উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সামসুল হক খান উচ্চ বিদ্যালয়, শহীদ পুলিশ স্মৃতি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও বনফুল আদিবাসী গ্রিনহার্ট কলেজ।
ভর্তি নীতিমালায় যা আছে:
গত বছরের ৮ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জারি করা ভর্তি নীতিমালার ১০ ও ১১ নম্বর অনুচ্ছেদে ভর্তি ফির হার উল্লেখের পাশাপাশি বিধান না মানলে শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
১০ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ২০১৬ সালে সরকার যে খাতগুলো নির্ধারণ করে দিয়েছে সেগুলোতেই কেবল অর্থ নেওয়া যাবে। বেসরকারি গ্রামাঞ্চলের স্কুলে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির ফি সেশন চার্জসহ পাঁচশ টাকা। উপজেলায় এক হাজার, জেলা সদরে দুই হাজার এবং ঢাকা বাদে অন্য মেট্রোপলিটন এলাকায় তিন হাজার টাকার বেশি হবে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার এমপিওভুক্ত স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে পাঁচ হাজার টাকার অতিরিক্ত টাকা আদায় করা যাবে না।
প্রতিষ্ঠান যদি আংশিক এমপিওভুক্ত (সব শিক্ষককে সরকার বেতন দেয় না) হয়, তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং নন-এমপিও শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থী ভর্তির সময় মাসিক বেতন, সেশন চার্জ ও উন্নয়ন ফিসহ বাংলা মাধ্যমে সর্বোচ্চ আট হাজার টাকা এবং ইংরেজি ভার্সনে সর্বোচ্চ দশ হাজার টাকা নিতে পারবে। উন্নয়ন খাতে কোনো প্রতিষ্ঠান তিন হাজার টাকার বেশি নিতে পারবে না, যা আট বা দশ হাজার টাকার মধ্যেই সীমিত থাকবে।
একই প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থীর কাছ থেকে পরের ক্লাসে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতিবছর সেশন চার্জ নেওয়া যাবে। তবে পুনঃভর্তির ফি নেওয়া যাবে না।
উল্লিখিত বিধান না মানলে বা অতিরিক্ত টাকা আদায় করলে সরকার এমপিও বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ১১ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ে অভিযোগের স্তূপ:
ভর্তি নীতিমালা উপেক্ষা করে উল্লেখিত সাতটি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও রাজধানীসহ সারা দেশের অসংখ্য প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত ফি আদায় করে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মাউশি ও মন্ত্রণালয়ে অভিযোগের স্তূপ জমে ওঠে। এছাড়া অভিভাবকদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে।
এ অবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় সারা দেশে মোট ৭৯টি কমিটি গঠন করে।
গত বছরের ২১ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের দায়ে অভিযুক্ত ১৩টি প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করা হয়। তাতে ঢাকার মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, গ্রীনফিল্ড স্কুল ও কলেজ, হোপ ইন্টারন্যাশনাল, চেতনা মডেল একাডেমি, মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউট, বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল ও কলেজ, শহীদ আনোয়ারা গার্লস স্কুল ও কলেজ, প্রিপারেটরি গ্রামার স্কুল, কসমো স্কুল, ডেমরার সামসুল হক খান উচ্চ বিদ্যালয়, বনফুল গ্রিনহার্ট আদিবাসী কলেজ, এসওএস হারম্যান মেইনর কলেজ এবং পুলিশ স্মৃতি স্কুল ও কলেজের নাম ছিল।
এসব স্কুলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় চারটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওইসব কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সাতটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাউশিকে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৭/০৪/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়