শিক্ষক থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে সাবেক শিক্ষক আব্দুল মালেক হয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি বরিশালের এক প্রত্যন্ত গ্রামের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ছিলেন। বছর দশেক আগে নিয়েছেন অবসর। এরপর অবসর জীবন যাপন করছিলেন। সেখান থেকে চমক দেখিয়ে তিনি
স্থানীয় লোকজন বলেন, প্রার্থী হওয়ার পরও কোনো মিছিল, উঠান বৈঠক কিংবা জাঁকজমক প্রচার-প্রচারণা ছিল না তাঁর। তাই ভোটের হিসাব-নিকাশে তিনি ছিলেন একেবারে গণনার বাইরে। কিন্তু গত বুধবার রাতে কেন্দ্র থেকে একে একে যখন ফলাফল আসছিল, তখন সব প্রার্থী ও ভোটারের চোখ কপালে ওঠে। অবশেষে হাসলেন বিজয়ের হাসি।
আব্দুল মালেকের বয়স ৭০-এর কাছাকাছি। তিনি সদর উপজেলার চরবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। একসময় বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি বরিশাল জেলার সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সারা জীবন শিক্ষকতা করেছেন। অবসরজীবনে তিনি ভাইয়ের ছেলে সালাহউদ্দীন রিপনের গড়া স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান এস আর সমাজকল্যাণ সংস্থার প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিষ্ঠানটি প্রত্যন্ত গ্রামের অসহায় মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বেশ কয়েক বছর ধরে কাজ করছে।
আব্দুল মালেক বলেন, ‘আমি কখনো নির্বাচন করব, এমনটা ভাবিনি। শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসর নেওয়ার পর এলাকায় শেষ জীবনটা কাটিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নির্বাচনে আসার পেছনে সমস্ত অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে আমার ভাইয়ের ছেলে রিপন। সে নির্বাচনের কয়েক মাস আগে আমাকে প্রস্তাব দেয় উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার। প্রথমে বিষয়টিকে হাস্যকর মনে হয়েছিল। আমি একবারেই সেই প্রস্তাবে না বলে দিই। কিন্তু রিপন নাছোড়বান্দা। আমাকে নির্বাচনে দাঁড় করাবেই করাবে। এ নিয়ে অনেক দেনদরবার, পীড়াপীড়ি চলে। শেষ পর্যন্ত রাজি না হয়ে উপায় ছিল না। মনোনয়নপত্র জমা দিই। আনুষ্ঠানিক কোনো প্রচার-প্রচারণা ছিল না আমার। কিন্তু আমি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চেয়েছি। মানুষ আমাকে বিশ্বাস করেছে, ভোটের বাক্সে নীরবে সেই আস্থার প্রমাণ পেয়েছি।’
আওয়ামী লীগের কর্মীরা বলেন, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৫ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন সালাহউদ্দীন রিপন। তখন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহর প্রচ্ছন্ন সমর্থন পান তিনি। এমনকি সাদিক আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ অনেক নেতা প্রকাশ্যে সালাহউদ্দীনের মঞ্চে ওঠেন। কিন্তু তিনি জিততে পারেননি। গত সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হলেও হাল ছাড়েননি তিনি। এবারের উপজেলা নির্বাচনে তাঁর চাচা আব্দুল মালেককে কাপ-পিরিচ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামান তিনি। ভোটের মাঠে শেষ খেলায় চাচাকে বিজয়ী করে উপজেলাবাসীকে চমকে দিয়েছেন।
ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণ করে জানা যায়, বিজয়ী চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক ১৯ হাজার ৮০৭ ভোট পেয়েছেন। অপরদিকে আওয়ামী লীগের চার প্রার্থী মিলে পেয়েছেন ৫০ হাজার ৬৯৩ ভোট। আব্দুল মালেকের সঙ্গে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোটের ব্যবধান ২ হাজার ৪৯৩।
শিক্ষাবার্তা/জামান/১০/০৫/২৪