ভুঁইফোঁড় স্কুল-কলেজে প্রতারণার ফাঁদ
শিক্ষাবার্তা ডেস্ক, ঢাকাঃ শিক্ষা বোর্ডের নিবন্ধনহীন নরসিংদী ডিজিটাল গার্লস হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৬ শিক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষার জন্য দুটি স্কুল থেকে রেজিস্ট্রেশন করা হয়। তবে রেজিস্ট্রেশন করা ব্রাহ্মন্দী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্বাচনি পরীক্ষায় তারা অকৃতকার্য হয়। ফলে ওই ৬ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষার জন্য অনুপযুক্ত হয়।
এ পরিস্থিতিতে অকৃতকার্য ওই ৬ শিক্ষার্থীকে এসএসসির রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রতিজনের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে নেন ভুঁইফোঁড় স্কুলটির প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম। কিন্তু শিক্ষার্থীরা প্রবেশপত্র না পেয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। এরপর থেকে পলাতক ওই প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম। শুধু নরসিংদীর এই ঘটনাটিই নয়, এমন আরও বেশকিছু ঘটনায় দেখা গেছে শিক্ষকের ভুল, প্রতারণা কিংবা উদাসীনতায় এবার অনেক এসএসসি পরীক্ষার্থীর কপাল পুড়েছে। এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে না পেরে ওই শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে পড়েছে।
শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনুমোদনহীন ভুঁইফোঁড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে রেজিস্ট্রেশন করে। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েও রেজিস্ট্রেশন করা হয় না শিক্ষার্থীদের। এতে প্রতারিত হন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। প্রতি বছর এ ধরনের ভুল, প্রতারণা কিংবা উদাসীনতায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন হুমকিতে পড়লেও কঠোর কোনো শাস্তির নজির নেই। বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদনহীন এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। রাজধানীসহ সারা দেশে ভুঁইফোঁড় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ফৌজদারি বিধিতে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
দেশের ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি, মাদরাসা বোর্ডের দাখিল ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষা শুরু হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। এই পরীক্ষায় ২৯ হাজার ৭৩৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। ৩ হাজার ৭০০টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের প্রতারিত হওয়ার খবর বেরিয়ে আসে। পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি সিন আক্তার নামে এক শিক্ষার্থী। সিন আক্তার উপজেলার দেবীডুবা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রবেশপত্র না পাওয়ায় পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি সে। প্রবেশপত্র না পাওয়ায় দেবীডুবা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা বিদ্যালয়ের পাশের গালাণ্ডী বাজার এলাকায় মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে সিন আক্তারের বাবা আবু বক্কর সিদ্দীক অভিযোগ করেন, বিদ্যালয়টির অন্য এসএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র দেওয়া হলেও তার মেয়েকে দেওয়া হয়নি। প্রধান শিক্ষক বিনোদ চন্দ্র রায় তাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, পরীক্ষার আগের দিন সন্ধ্যার মধ্যে বোর্ড থেকে মেয়ের প্রবেশপত্র এনে দিবেন। কিন্তু সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও প্রধান শিক্ষক আর যোগাযোগ করেননি। পরে তিনি জানতে পারেন তার মেয়ের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। অথচ তিনি রেজিস্ট্রেশন এবং ফরম পূরণের সমুদয় টাকা পরিশোধ করেছেন। যার রসিদও তার কাছে আছে। মানববন্ধনে অভিভাবকরা আরও অভিযোগ করেন, প্রবেশপত্রে অনেক শিক্ষার্থীর পিতা-মাতার নামের ভুল বানান রয়েছে। পদে পদে গাফিলতি করেছেন ওই প্রধান শিক্ষক।
নরসিংদীর জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, বিদ্যালয়টির অনুমোদনের কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। প্রতারক শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের এসব প্রতারকদের বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের আহ্বায়ক এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নেই। ভুঁইফোঁড় এসব প্রতিষ্ঠান ধরব কিভাবে? ব্যাঙের ছাতার মতো রাজধানীসহ সারা দেশে এসব অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, ‘অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে রেজিস্ট্রেশন করে এসব ভুঁইফোঁড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নেয়। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা নানাভাবে প্রতারিত হচ্ছেন। যেসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি বিধিতে স্থানীয় থানায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৭/০২/২০২৪