বিটিএ'র এক দফা দাবি মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ
ঢাকাঃ শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান সরকারি ও বেসরকারি বৈষম্য দূরিকরণের লক্ষ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে ১১ জুন ২০২৩ থেকে পূর্বঘোষিত অবিরাম ধর্মঘট সফল করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ) ’র এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল বুধবার সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (ইঞঅ)’র সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ এর সঞ্চালনায় এবং সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ মোঃ বজলুর রহমান মিয়া’র সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সহ সভাপতি মোঃ আবুল কাশেম, উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য বাবু রঞ্জিত কুমার সাহা, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ইকবাল হোসেনসহ প্রমুখ শিক্ষক নেতৃবৃন্দ।
সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, এমপিওভূক্ত শিক্ষকগণ মাত্র ২৫% উৎসব ভাতা, ১,০০০ টাকা বাড়ি ভাড়া এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। অথচ একই কারিকুলামের অধীন একই সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেল সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেলের একধাপ নিচে প্রদান করা হয়। তাছাড়া সহকারি প্রধান শিক্ষকদের উচ্চতর স্কেল প্রদান না করার ফলে উচ্চতর
স্কেলপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষকদের বেতন স্কেল ও সহকারি প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল সমান হওয়ায় সহকারি প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ রয়েছে।
বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাবার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। ফলে অনেক শিক্ষক/কর্মচারী টাকা পাওয়ার পূর্বেই অর্থাভাবে বিনা চিকৎসায় মৃত্যুবরণ করছেন। তাছাড়া কয়েক বছর যাবৎ কোন প্রকার সুবিধা না দিয়েই অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪% কর্তন করা হচ্ছে যা অত্যন্ত অমানবিক। তাই অতিরিক্ত ৪% কর্তনের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলসহ অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্ট অফিস ঘেরাও করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু অদ্যাবধি কোন প্রতিকার পাননি।
মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)’র ব্যানারে দীর্ঘদিন যাবৎ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারের নিকট দাবিনামা উপস্থাপনসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন। পাশাপাশি উপজেলা থেকে শুরু করে জেলা ও বিভাগীয় সমাবেশ, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, প্রতীক অনশন, অবস্থান ধর্মঘটসহ, কর্মবিরতি পালন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি পেশসহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে একাধিকবার মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। নেতৃবৃন্দ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু তৈরি, বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ, রূপপুর পারমানবিক বিদুৎ কেন্দ্র ও মাতার বাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে কোটি কোটি বই বিতরণ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন, মেট্রোরেল নির্মাণ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেভাবে উন্নয়ন হয়েছে, শিক্ষা ও শিক্ষকদের উন্নয়ন সেভাবে গুরুত্ব পায়নি। বর্তমান সরকার ইতোমধ্যেই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দেয়ায় বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)’র পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। লিখিত বক্তব্যে আরো বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থা স্মার্ট করতে হলে দরকার স্মার্ট শিক্ষক। তাই স্মার্ট শিক্ষক পেতে শিক্ষায় বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের কোন বিকল্প নেই। এমতাবস্থায় মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীকরণের দাবিতে গত ৮ মার্চ ২০২৩ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষিত কর্মসূচি অনুয়ায়ী ১৩ মার্চ, ২০২৩ সারাদেশে জেলা সদরে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষক-কর্মচারীদের মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও জেলা প্রশাসক/বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ, ১৪ মার্চ, ২০২৩ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালনসহ ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় এবং জাতীকরণের যৌক্তিকতা তুলে ধরে লিফলেট বিতরণ করা হয়। সর্বশেষ গত ২০ মার্চ, ২০২৩ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রায় দেড় লক্ষাধিক বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশ থেকে আসন্ন বাজেটে প্রয়োজীয় বরাদ্দ রাখার এবং মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের সুস্পষ্ট ঘোষণার জন্য আহবান জানান। ব্যর্থতায় ১১ জুন ২০২৩ থেকে সারাদেশের বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবিরাম ধর্মঘটের ঘোষণা দেন। তাই অবিরাম ধর্মঘট সফল করার লক্ষ্যে আগামী ১২ মে, ০২৩ থেকে ০৭ জুন, ২০২৩ পর্যন্ত সারাদেশের জেলায় জেলায় সাংগঠনিক সফরের কর্মসূচি ঘোষা করেন।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৪/০৫/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তা’য়