বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ঢুকতে দিচ্ছে না পেট্রাপোল
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
বৈধ পাসপোর্ট ভিসা থাকলেও ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন মৌখিক নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশিদের স্টুডেন্ট ভিসায় ভারত যাতায়াত এখনও পর্যন্ত বন্ধ রেখেছে। তবে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের যাতায়াত স্বাভাবিক রয়েছে। একই রাস্তায় চলছে দুই রকম নীতি। এক মাসেরও অধিক সময় ধরে স্টুডেন্ট ভিসায় কোন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে ভারতে ঢুকতে দেয়নি পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ।
ভারতীয় শিক্ষার্থীরা আসছেন কিন্তু বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ঢুকতে বাধার ফলে শিক্ষা গ্রহণে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। যে সব শিক্ষার্থী স্টুডেন্ট ভিসায় ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যায়নরত ছিল তারা দেশে এসে ভারতে প্রবেশ করতে না পারায় উদ্বেগ উৎকন্ঠায় তাদের দিন কাটছে।।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে (২৩-২৯ মার্চ) বেনাপোল পেট্রাপোল চেকপোস্ট দিয়ে মেডিকেল ও বিজনেস ভিসায় ১০ হাজার ৩১০ জন পাসপোর্ট যাত্রী দু‘দেশের মধ্যে যাওয়া আসা করেছে। এর মধ্যে ভারতে গেছেন ৩ হাজার ২২৭ জন বাংলাদেশি ও ১ হাজার ৯৩৪ জন ভারতীয়। আর বাংলাদেশে এসেছেন ৩ হাজার ২৮৮ জন বাংলাদেশি ও ১ হাজার ৮৫৬ জন ভারতীয়। ভারত থেকে আসাদের মধ্যে অধিকাংশই স্টুডেন্ট ভিসায়।
জানা যায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় স্বাভাবিক সময়ে প্রতি বছর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ১৮ থেকে ২০ লাখ পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করেন। এ যাত্রীদের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ রয়েছে স্টুডেন্ট। যারা দুই দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে উচ্চশিক্ষার জন্য পড়াশোনা করেন। বাংলাদেশিরা ভারতের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। আর ভারতীয়রা বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়ণরত।
২০২০ সালে করোনা সংক্রমণ দেখা দিলে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। এতে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে যার যার দেশে যান। বর্তমানে করোনা সংক্রমণ কমে এলে আবারও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়। এতে কয়েক মাস আগেই ভারতীয় শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষাগ্রহণ শুরু করেছেন। তবে সব ঠিকঠাক থাকলেও ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনের বাধায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা সড়ক পথে ভারতে যেতে পারছেন না। বিমান পথে যেতে তাদেরকে বলা হচ্ছে। যা সাধারণ পরিবারের কাছে কস্টসাধ্য।
ভারতের দার্জিলিং বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশী শিক্ষার্থী পলাশ চন্দ্র সরকার বলেন, তার পরীক্ষা ২৭ মার্চ থেকে শুরু হয়ে গেছে। সে এখন তার বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের কারনে যেতে পারছে না। সে অভিযোগে করে বলেন, প্রতিদিন মেডিকেল, বিজনেস, এমপ্লয়ারসহ বিভিন্ন ভিসায় ভারতে লোক যাতায়াত করছে অথচ আমরা যেতে পারছি না। সময় মত যেতে না পারলে আবার একটি বছর পিছিয়ে যেতে হবে।
ভারতের কাশ্মীরে পড়ুয়া বাংলাদেশী ছাত্র সৌরভ বনিক, অভিষেক বড়ুয়া বলেন, তারা ২০২১ সালের নভেম্বরে দেশে আসে। এরপর ডিসেম্বরের পরে যখন তারা পড়াশুনার জন্য ছুটি কাটিয়ে ভারতে যেতে চায় তখন বিপাকে পড়ে ইমিগ্রেশনে। ভারতীয় ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের প্রবেশ করতে দেয়নি।
বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের সাফ জানিয়ে দিয়েছে ভারত অনুমতি না দিলে তারা এসব স্টুডেন্ট ভিসার ছাত্র ছাত্রীদের পাসপোর্টে এন্ট্রি সিল মারতে পারবে না। আমাদের ইতিমধ্যে পরীক্ষা ও শুরু হয়ে গেছে।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজু আহমেদ জানান, ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন তাদের মৌখিকভাবে জানিয়েছেন বাংলাদেশি কোনো স্টুডেন্ট এ পথে ভারতে যেন না পাঠানো হয়। প্রতিদিন অনেক শিক্ষার্থী চেকপোস্টে আসছেন। কিন্তু তাদের ভারতীয় ইমিগ্রেশন গ্রহণ করছে না। তবে ভারতীয় শিক্ষার্থীরা অনেক আগে থেকে স্বাভাবিক আসা যাওয়ায় কোন বাধা নেই।
তিনি বলেন, এটা ভারতের রাষ্ট্রীয় ব্যাপার। ভারত তাদের ইমিগ্রেশনে অনুমতি না দিলে আমরা ছাড়তে পারব না। কারন আমরা বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন এর আনুষ্ঠানিকতা শেষ করলেও ভারত এসব শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে দিবে। তবে জরুরী ছাত্র ছাত্রীদের ভারতীয় দূতাবাস থেকে অনুমতি নেওয়া বা ঢাকা থেকে বিমানে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বেনাপোল বন্দরের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) সঞ্জয় বাড়ৈ বলেন, ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনের বাধায় স্টুডেন্ট ভিসায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। ভারতের বিভিন্ন বিশ্বিবদ্যালয়ের অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোষ্টে এসে ভারতে প্রবেশ করতে না পেরে ফিরে যাচ্ছে আবার নিজ বাড়িতে। তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার তারিখ এবং ওই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুমতি থাকলেও ভারতীয় ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের গ্রহণ করতে নারাজ।