বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা: প্রশিক্ষক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী
মোহাম্মদ গোলাম সারোয়ারঃ আমার শিক্ষাদান বা পাঠদান শুরু ১৯৯৭ সাল থেকে ময়মনসিংয়ের গৌরীপুর উপজেলার (রেলওয়ে জংশনের উত্তরে) একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্বেচ্ছাশ্রম হিসেবে। শিক্ষার্থীদের কীভাবে শিক্ষাদান করতে হবে তার কিছুই আমি জানতাম না। শিক্ষার্থীর কোনো প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলে বলতাম আগামীকাল তোমাদের উত্তর পাবে। তখন জানতাম না এই পদ্ধতি সঠিক ছিল কিনা। ওই বিদ্যালয়ে প্রায় তিন মাসের মতো শিক্ষকতা করেছিলাম। নিজের পড়ালেখা শেষ করে ১৯৯৯ সালে কুমিল্লার তিতাসে ফিরে এসে ইক্করা কিন্ডার গার্টেনে শিক্ষকতা শুরু করি। এভাবে চলে ২০০৩ সাল পর্যন্ত।
পরবর্তী সময়ে ২০০৪ সালে নরসিংদীর বেলাব উপজেলার ঘ ঠ ঝ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করি। সেখান থেকে প্রশিক্ষণের জন্য ফেনী টিচার্স ট্রনিং কলেজে যাই। এবং সেটাই ছিল শিক্ষক হিসেবে আমার প্রথম প্রশিক্ষণ। সেখানে আমি ৭-৮ জন প্রশিক্ষকের সংস্পর্শ লাভ করি। তাদের মধ্যে ফরিদ স্যার এবং হায়দার স্যার অন্যতম। অতপর ২০০৮-এ ময়মনসিংহ ঞ ঞ ঈঙখখঊএঊ এবং ২০১০-১১ সালে কুমিল্লা ঞ ঞ ঈঙখখঊএঊ -এ প্রশিক্ষণ লাভ করি। সর্বশেষ ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩০টির মতো প্রশিক্ষণ পাই।
২০২২-২৩ সালের প্রশিক্ষণের সঙ্গে পূর্বের প্রশিক্ষণ ছিল যোজন-যোজন ভালো। আমি যার কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করব তিনি যদি অন্ধকারে থাকেন তাহলে আমাদের অবস্থা কেমন হবে এবং আমরা শিক্ষার্থীদের কী রাস্তা দেখাব। সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে প্রশিক্ষণের আয়োজন করে।
সেটা যদি যথাযথ না হয় তা হলে পুরো ব্যবস্থাইতো জলে গেল। আমি যে এলাকায় ২০২৩-এর শেষ প্রশিক্ষণ পাই সেখানে প্রশিক্ষকদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম ‘পাঠ্যবইয়ের কোন অংশ থেকে বা কোন অংশ দিয়ে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন করা হবে?’ এক প্রশিক্ষকের উত্তর ছিল এ রকম : ‘কালীদাস পণ্ডিতের কথা নয় কুড়ি তেঁতুল গাছে কয় কুড়ি পাতা।’ এই আপ্তবাক্য দিয়ে সম্মানিত প্রশিক্ষক কী বোঝাতে চেয়েছেন তা আমার আজো বুঝে আসে না।
ওই প্রশিক্ষণে কোনো প্রশিক্ষণার্থী সম্মানিত প্রশিক্ষকগণকে কোনো প্রশ্ন করে তার সদুত্তর পাননি। বর্তমান কারিকুলাম অত্যন্ত সময় উপযোগী এবং আধুনিক। এর মূল থিম হলো অংশগ্রহণমূলক। যেটা ওই প্রশিক্ষণে ছিল অনুপস্থিত। নিয়ম অনুযায়ী প্রশিক্ষকগণ সিমুলেশন ক্লাস নেয়ার কথা।
সেখানে অনেক নতুন শিক্ষক ছিলেন, যাদের মধ্যে অনেকেই জানতেন না কীভাবে একটি অংশগ্রহণমূলক ক্লাস নিতে হয়? শিক্ষার্থীদের কীভাবে শ্রেণিপাঠে অংশগ্রহণ করানো যায়। কিন্তু আমাদের প্রশিক্ষকগণ কোনো পাঠদান করেননি। কোনো এক প্রশিক্ষণার্থী প্রায় ৪০ মিনিট ক্লাস নেন, যার পুরোটাই ছিল অনেক জ্ঞানগর্বপূর্ণ এবং জগ-মগ মেথডের। এই পাঠদানকেই অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে আখ্যায়িত করেছেন আমাদের বিজ্ঞ প্রশিক্ষকগণ। আমার প্রশ্ন হলো, কিসের ওপর ভিত্তি করে প্রশিক্ষকগণকে নির্বাচিত করা হয়েছিল? আমি যতটুকু জানি একজন প্রশিক্ষক হতে হয় বিচক্ষণ ও ধৈর্যশীল।
অবশেষে শিক্ষা কর্মকর্তা ও সবার সুদৃষ্টি কামনা করছি যাতে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা যথাযথ পরিপালনের ওপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়। কেননা কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে মাউশির ক্লাস রুটিনও অনুসরণ করা হচ্ছে না।
লেখক: শিক্ষক, কুমিল্লা।
মতামত ও সাক্ষাৎকার কলামে প্রকাশিত নিবন্ধ লেখকের নিজস্ব। শিক্ষাবার্তা’র সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে মতামত ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক ও আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের;- শিক্ষাবার্তা কর্তৃপক্ষের নয়।”
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৯/০২/২০২৪