বগুড়ায় প্রধান শিক্ষক নাসিমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ
বগুড়াঃ স্কুলে হারমনিয়াম কেনা হয়েছিল ১৯৯২ সালে। তিন দশক কেটে গেছে। সেই জরাজীর্ণ হারমনিয়াম মেরামত করাতে দশ হাজার টাকার ভাউচার দেখানো হয়েছে। ছাদ বাগানও ভাউচারে আছে, বাস্তবে নেই। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের জন্য ধার করে বাঁশ নিয়ে আসার নজিরও রয়েছে। স্কুলের ল্যাপটপটি নষ্ট হয়েছে বলে বাসায় নিয়ে গেছে ২ বছর আগে। এখনো পর্যন্ত জমা দেননি। এ ছাড়া শহীদ মিনার তৈরি, টিউবওয়েল মেরামত, মা সমাবেশ, গ্রিলের গেট মেরামত, টাইলস ক্রয়সহ বিভিন্ন খাতে ভুয়া ভাউচার দেখি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন প্রধান শিক্ষক নাসিমা খানম। তিনি বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার শালিখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। সম্প্রতি ওই শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন অভিভাবকবৃন্দ ও এলাকার সচেতন মহল।
গেল ৮ই জুন সকালে ওই বিদ্যালয়ের মাঠে মানববন্ধনে অংশ নেয় এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা বলেন, অনিয়মিত উপস্থিতি, অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অসঙ্গতির কারণে শতোর্ধ্ব বছরের এই প্রতিষ্ঠানের লেখাপড়ার মান অবনতির চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
অত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাবেক দুই সভাপতি মো. মাসহাব মারুফ হোসেন ফয়সাল ও আব্দুর রশিদ ভুট্টো বলেন, বিগত দিনে আমরা এই বিদ্যালয়ের সভাপতি পদে থাকাকালীন সময়ে কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করা সম্ভব হয়নি। কারণ প্রধান শিক্ষক নাসিমা খানম বিভিন্ন ধরনের প্রভাব দেখিয়ে ব্যাংকের চেকে স্বাক্ষর নিয়ে অর্থ উত্তোলন করলেও উন্নয়নমূলক কোনো কাজ করেননি। বরং ভুয়া ভাউচার দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- হারমনিয়াম ক্রয় বাবদ ভাউচার দেখালেও কোনো হারমনিয়াম কেনা হয়নি, এখানে যে হারমনিয়ামটি রয়েছে সেটি ১৯৯২ সালের। এ ছাড়া শহীদ মিনার তৈরি, টিউবওয়েল মেরামত, ছাদবাগান, মা সমাবেশ, গ্রীল-গেট মেরামত, টাইলস ক্রয়সহ নানা ধরনের অসঙ্গতির কথা উল্লেখ করেন।
তারা আরও বলেন, এখানে গত কয়েক বছর ধরে তার নিজের অসৎ ইচ্ছা ও ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা হয়নি। বরং আমরা সরকার দলীয় নেতা হলেও তার প্রতিহিংসার কবলে পড়ে প্রাণে ফিরে বাঁচতে হয়েছে। কারণ আমি মাসহাব মারুফ হোসেন ফয়সাল অত্র ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক থাকাকলীন সময়েই আমাকে হত্যা করার জন্য শহর থেকে সন্ত্রাসী ভাড়া করে লেলিয়ে দিয়েছিল। ওই বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক মো. মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, আমি যখন এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছি তখন শিক্ষার মান খুবিই ভালো ছিল কিন্তু বর্তমানে কর্মরত প্রধান শিক্ষক নাসিমা খানম যোগদানের পর থেকে নানা ধরনের অনিয়ম অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে। এতে করে পাঠদানে চরম অবনতি হয়েছে।
বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক নাসিমা খানম তার নামে বিভিন্ন অভিযোগের কথা অস্বীকার করেন। তবে বিদ্যালয়ের স্লিপ ফান্ডের বরাদ্দকৃত খরচের বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
সরজমিন দেখা যায়, সেখানে জাতীয় পতাকার ফ্লাগ স্ট্যন্ডটি বাঁশের, শুধু তাই নয় এটিও স্থানীয় একটি ডেকোরেটরের বাঁশ। ঘটনাস্থলে থাকতেই খুঁটিটি খুলে নিয়ে যেতে দেখা গেছে ওই ডেকোরেটর মালিককে। এ ছাড়া টিউবওয়েলটির মাথা নেই, জীর্ণশীর্ণ রয়েছে শহীদ মিনারটি, বড় একটি বাজেটের তৈরিকৃত বাথরুম ও টয়লেটটিতে রয়েছে তালা ঝুলানো, গত কয়েক বছর ধরেই এটি বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা খোলা আকাশের নিচেই প্রসাব-পায়খানা করে থাকে। নেই কোনো ছাদবাগান, পাঠদানের পরিবেশ একেবারেই বিপন্ন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদা পারিভন বলেন, আমরা আপনাদের মাধ্যমে শালিখা সরকারি প্রথামিক বিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম ও অসঙ্গতির কথা জানতে পারলাম। বিষয়টি নিয়ে অতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।