ফেসবুকে প্রতিবাদ জনগনের নাভিশ্বাস
নিজস্ব প্রতিনিধি।।
গত কয়েকদিন হলো সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য কেজি প্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধি করেছে । সেই সুত্র ধরে গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির জন্য গনপরিবহন বন্ধ রাখে গনপরিবহন মালিক সমিতি। সেই ধর্মঘটে আমজনতার ভোগান্তি ছিলো চোখে পড়ার মতো । গনপরিবহন মালিক সমিতি তাদের দাবি অনুযায়ি ভাড়া বাড়াতে সক্ষম হয়।
এর প্রতিবাদে জ্বালানি তেলের মূল্য ও গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। তারা বলেন, তেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ালেও বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
জামায়াত : দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মা’ছুম এক বিবৃতিতে বলেন, গত ৪ নভেম্বর থেকে সরকার প্রতি লিটার জ্বালানি তেলের মূল্য ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করেছে, যা শতকরা হিসাবে ২৩ শতাংশ। তারই ধারাবাহিকতায় এখন গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। গণপরিবহন তথা যাত্রীবাহী বাসে গড়ে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ২৭ শতাংশ এবং লঞ্চে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ৩৫.২৯ শতাংশ।
তেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ালেও বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ভাড়াবৃদ্ধির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষ। আমরা সরকারের এ অন্যায় ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) গত সাত বছরে জ্বালানি তেল থেকে মুনাফা করেছে ৪৩ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। বর্তমান বর্ধিত মূল্যে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিপিসির মুনাফা হবে বছরে প্রায় সাত হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। করোনাকালীন সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থায় তেলের দাম বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন ছিল না।
যেহেতু এ সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় তাই জনগণের প্রতি এ সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা না থাকায় একের পর এক গণবিরোধী সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে। তিনি অবিলম্বে তেলের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল এবং গণপরিবহনে বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ : সংগঠনের মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ জ্বালানি তেল ও পরিবহনের ভাড়া কমিয়ে জনসাধারণের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের দাবি জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে বলেন, দীর্ঘ ১৮ মাস করোনায় বিপর্যস্ত জনগণ যখন তা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছে, সে মুহূর্তে সরকার অযৌক্তিকভাবে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়িয়ে দিয়ে জনগণকে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
তিনি বলেন, তেলের দাম ও পরিবহন ভাড়া বাড়ানো গণবিরোধী সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, অবিলম্বে জ্বালানি ও ভাড়ার মূল্য কমিয়ে জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘব করুন। অন্যথায় দিন দিন যেভাবে জনরোষ সৃষ্টি হচ্ছে, একসময় তা গণবিস্ফোরণে রূপ নিতে পারে।
খেলাফত মজলিস : জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর নতুন করে বাস ও লঞ্চ ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে জনস্বার্থবিরোধী আখ্যায়িত করে অবিলম্বে জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্য এবং বর্ধিত বাস-লঞ্চ ভাড়া প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে খেলাফত মজলিস।
এক যৌথ বিবৃতিতে খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের যখন ত্রাহি অবস্থা এ সময় জ্বালানি তেল-গ্যাস এবং বাস-লঞ্চ ভাড়া বৃদ্ধি করে জনগণের ওপর জুলুম করা হয়েছে।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, গণপরিবহনের ভাড়া এক লাফে ২৭% ও ৩৫% বৃদ্ধি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এতে প্রান্তিক জনগণকেই বেশি ভোগান্তির শিকার হতে হবে। ভুল সময়ে সরকারের এই উচ্চাভিলাষী সিদ্ধান্ত সবাইকেই দগ্ধ করবে। খেলাফত মজলিসের নেতৃদ্বয় অবিলম্বে ডিজেল ও কেরোসিনের বর্ধিত মূল্য ও বর্ধিত বাস ও লঞ্চ ভাড়া প্রত্যাহারের দাবি জানান।
লেবার পার্টি : জ্বালানি তেল ও এলপি গ্যাসের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা: মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব লায়ন ফারুক রহমান বলেন, জনস্বার্থকে উপেক্ষা করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ দফায় দফায় বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এতে ধনী-গরিবের শ্রেণিবৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করছে। সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট ও অর্থপাচারের কারণে অর্থনীতি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় অবিলম্বে ডিজেল, কেরোসিন ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। তা না হলে জনদুর্ভোগে গণবিস্ফোরণ তৈরি হবে।
জাগপা : আন্তর্জাতিক বাজারে দর বৃদ্ধি ও তেল পাচার হয়ে যাওয়ার অজুহাতে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং পরবর্তী সময়ে পরিবহন ধর্মঘট এবং গণপরিবহন ও লঞ্চের ভাড়া বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকার লুটেরাদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লুৎফর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এস এম শাহাদাত। এক বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় এ কথা বলেন।
জাসদ : জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি সরকার কর্তৃক ডিজেলের দাম লিটার-প্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বাস-লঞ্চসহ গণপরিবহনের অযৌক্তিক ভাড়াবৃদ্ধির তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলেন, ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ২৩% বাড়লেও পরিবহনে আসন প্রতি ভাড়া কোনো যুক্তিতেই ২৭% বাড়তে পারে না। এভাবে ভাড়াবৃদ্ধি দিনেদুপুরে ডাকাতির শামিল।
জনগনের অনেকে মনে করেন রাজনৈতিক দলগুলোর এই ধরনের প্রতিবাদ আমজনতার সাথে তামাসা ছাড়া আর কিছু নয়। আবার অনেকেই বলছেন ফেসবুকে প্রতিবাদ জনগনের নাভিশ্বাস।