ফেঁসে গেলেন মাদ্রাসা শিক্ষক
টাঙ্গাইলঃ জেলার সখীপুরে স্বামী-স্ত্রীর পাল্টা-পাল্টি মামলায় কাবিনের সঠিক নকল দিতে না পারায় ফেঁসে গেলেন স্থানীয় মাদ্রাসার শিক্ষক লোকমান হোসেন এবং রুহুল আমীন নামের এক কাজী। উপজেলার নলুয়া গ্রামের প্রায় ৩ বছর আগের এক বিয়ে নিকাহ রেজিস্ট্রির ঘটনায় তারা ফেঁসে গেছেন। আদালতের মামলা করায় দু’জনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়েছে সখীপুর থানা পুলিশ।
মামলা ও প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, প্রেম সংক্রান্ত ঘটনায় ২০২০ সালের ২৪শে আগস্ট উপজেলার নলুয়া গ্রামের মৃত আব্দুল হালিমের ছেলে হাফিজুর ইসলাম সানির সঙ্গে একই এলাকার জহিরুল ইসলামের মেয়ে শামছুন্নাহার পপি’র দ্বিতীয় বিয়ের নিকাহ রেজিস্ট্রি করতে তাৎক্ষণিক প্রথম স্বামী মোক্তাদিরকে ৩ মাস পূর্বে তালাক দেখিয়ে তাদের বিয়ে সম্পন্ন করেন এলাকায় কাজী হিসেবে পরিচিত লোকমান হোসেন খান। বিয়ের ২ বছর পর স্বামী সানির বিরুদ্ধে যৌতুক আইনে মামলা করেন স্ত্রী পপি। এ ঘটনায় কাবিনের নকল চাইলে মধুপুর উপজেলার ৮নং আউশনারা ইউনিয়নের কাজী মো. রুহুল আমিন ভূঁইয়া সিল-স্বাক্ষর দেয়া ৩৭/২০২০ইং বালাম নং০১/২০২০ পাতা নং-৩৭, কাবিনের একটি নকল দেন কাজী লোকমান হোসেন। বিষয়টি সন্দেহ হলে এ নিয়ে কাজী রুহুল আমিনের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, আমার বইয়ে হাফিজুর ইসলাম সানি ও শামছুন্নাহার পপি’র নামে কোনো কাবিন হয়নি। এই মর্মে একটি প্রত্যয়ন পত্রও দেন এবং এই বালামের এই পাতায় ঘাটাইল থানার বাঘারা গ্রামের শরিফ আহমেদ আমিরুল মেম্বার ও সাবিনা আক্তার সাথীর বিবাহ লিপিবদ্ধ হয়েছে বলে জানান তিনি। এ ঘটনায় ২০২৩ সালের ১৯শে জানুয়ারি হাফিজুর ইসলাম সানি বাদী হয়ে শামছুন্নাহার পপি, কাজী লোকমান হোসেন খান, জহিরুল ইসলাম, মরিয়ম আক্তারের নামে আদালতে একটি অভিযোগ করেন। পুলিশ অভিযোগ তদন্ত করে বালাম নং-০৩/২০১৮, ০১/২০১৯, ০১/২০২০, ০১/২০২১, ০১/২০২২, ১০০ পাতার নিকাহ রেজিস্ট্রারের বই জব্দ করে যার ১৩নং পাতা ছেড়াও নেই।
২নং পাতা থেকে ৬১নং পাতা পর্যন্ত বিভিন্ন জনের বিবাহ রেজিস্ট্রি করা আছে। এ ছাড়া ৩৭নং পাতায় হাফিজুর ইসলাম সানি ও শামছুন্নাহার পপি’র বিবাহ রেজিস্ট্রি করা আছে কিন্তু কোনো সাক্ষীর স্বাক্ষর নেই। তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, লোকমান হোসেন খান সোলাপ্রতিমা দাখিল মাদ্রাসার সহকারী প্রধান শিক্ষক। তিনি সরকারি সনদপ্রাপ্ত কোনো কাজী নন। কিন্তু এলাকায় বিভিন্ন জনের বিবাহ রেজিস্ট্রি করে থাকেন, সবাই তাকে কাজী হিসেবেই চিনে-জানে। তিনি মূলত সখীপুরের সোলাপ্রতিমা দাখিল মাদ্রাসার সহকারী প্রধান শিক্ষক। তিনি কাজী রুহুল আমিনের সহযোগিতায় এই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নিকাহ রেজিস্ট্রি করে আসছেন। সরকারকে ফি না দিয়ে সেই টাকা আত্মসাৎ করেন। এ মামলার বিবাদী মো. লোকমান হোসেন খান ও মামলার তদন্তে পাওয়া বিবাদী রুহুল আমিন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন এসআই মো. মাসুদ রানা।
হাফিজুর ইসলাম সানি বলেন, বিয়ের কাবিন ছিল ৫০ হাজার টাকা, সেখানে মেয়ের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত টাকা খেয়ে লোকমান কাজী সেই কাবিন পাঁচ লাখ টাকা বানিয়েছেন। মাদ্রাসার শিক্ষক হয়ে সে কীভাবে বিয়ের কাবিন করে বুঝি না। আমি এই ভুয়া কাজীর বিচার চাই। ওর কারণেই আমাদের জীবন নষ্ট।
কালিদাস গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, লোকমান কাজী ৩ বছর আগে আমার বিয়ের কাবিন করেছিল। আজ পর্যন্ত কাবিনের নকল দিতে পারেনি। তাই আবার অন্য কাজী দিয়ে কাবিন করিয়েছি। আমার জানা মতে, তার কাছে আরও ৪-৫ জন কাবিনের নকল নিতে হন্যে হয়ে ঘুরছেন।
শামছুন্নাহার পপি বলেন, আমাদের বিয়ের কাবিন করেছেন লোকমান হোসেন কাজী এবং আমরা তাকেই চিনি।
এ ব্যাপারে মো. লোকমান হোসেন খান বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে তা মিথ্যা। আমি এ বিয়ের কাবিনের সঙ্গে জড়িত না। এ বিয়ের কাবিন মূলত রুহুল আমিন কাজী করেছে।
তবে কাজী রুহুল আমিন বলেন, লোকমান নামের কাজীকে আমি একদিন দেখেছি মাত্র, মূলত তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দিয়েছে হাফিজুর রহমান সানি। সেখানে আমাকে জড়ানো হয়েছে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৫/০৫/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তা’য়