প্রধান শিক্ষক সহ ৩ পদে অবৈধ নিয়োগ বন্ধ করলেন ডিসি
অনলাইন ডেস্ক।।
চন্দ্রকলা এসআই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ তিনটি পদে অবৈধভাবে নিয়োগের চেষ্টা বন্ধ করেছেন নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ।
এই সময় শামীম আহমেদ জানিয়েছেন, তিনি নাটোরের জেলা প্রশাসক থাকা কালে সব ধরনের অনিয়ম কঠোরভাবে দমন করবেন।
জানা গেছে, ২০২০ সালে ২২ ডিসেম্বর চন্দ্রকলা এসআই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ তিনটি পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। গত ২১ জুন ওই বিজ্ঞপ্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির জোগসাজেশে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ২২ জুন এবং ২৭ জুন দু’বার বোর্ড বসিয়ে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ ওঠে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষক নিয়োগপ্রার্থী আনিছুর রহমান বলেন, প্রায় এক বছর আগে চন্দ্রকলা এসআই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং কম্পিউটার ও তথ্য বিজ্ঞান ট্রেডে একটি এবং জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস ট্রেডে একটি পদ শূন্য হয়। তারপর দুই দফা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বিদ্যালয় কমিটি। কিন্তু, সময়ের মধ্যে নিয়োগের কোনো উদ্যোগ নেয়নি ম্যানেজিং কমিটি।’ তিনি জানান, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তেবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ইটভাটার মালিক হওয়ায় খুবই ব্যস্ত থাকেন। তাকে বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছিল সময় মতো নিয়োগের বিষয়ে। কিন্তু, তিনি কোনো উদ্যোগ নেননি। দ্বিতীয় দফায় ২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর বিদ্যালয় কমিটি প্রধান শিক্ষক এবং কম্পিউটার এবং জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল পদে ল্যাব এ্যাসিসটেন্ট পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। গত ২১ জুন দ্বিতীয় দফা বিজ্ঞপ্তির ছয় মাস সময় শেষ হয়। তারপর তড়িঘড়ি করে ২২ জুন জেলা শিক্ষা অফিসার নিয়োগ বোর্ড বসিয়ে নিয়োগ দেওয়ার চিঠি দেয়।
প্রধান শিক্ষক নিয়োগপ্রার্থী আনিছুর রহমান বলেন, বিজ্ঞপ্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কীভাবে নিয়োগ বোর্ড করার চিঠি নিয়েছে তা আমি জানি না। জেলা শিক্ষা অফিসারকে কীভাবে ম্যানেজ করেছে তাও আমি বলতে পারব না। যেহেতু আমি প্রার্থী তাই এই অনিয়মে কোনো বাঁধা দেইনি। সভাপতি সাহেব এসবের উত্তর দিতে পারবেন। অনেকে দশ লাখ, ১২ লাখ টাকা দিয়েছে, আমি কোনো টাকা দেইনি। আমি বলেছি আমাকে নিয়োগ দিলে স্কুলের উন্নয়নের জন্য কিছু টাকা দেব।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রমজান আলী আকন্দ বলেন, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ছয় মাসের মধ্যে নিয়োগের সব কাজ শেষ করতে হবে। না হলে নিয়োগ দিলেও বেতন করা সম্ভব হবে না।
মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কীভাবে বোর্ড গঠনের চিঠি দিলেন এই প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এই জবাব কর্তৃপক্ষ জানতে চাইলে দেবেন। কিন্তু, সাংবাদিকের কাছে দেবেন না। তবে, তিনি দাবি করেছেন চন্দ্রকলা স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের চেষ্টায় কোনো অনিয়ম হয়নি।
নিয়োগ বোর্ডের ডিজির প্রতিনিধি এবং সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল মতিন এ প্রসঙ্গে বলেন, ২২ জুন জেলা শিক্ষা অফিসারের চিঠি পেয়ে চন্দ্রকলা এসআই উচ্চ বিদ্যালয়ে বিদ্যালয়ে যাই। চিঠিতে প্রধান শিক্ষকের নিয়োগের কথা থাকলেও সেখানে যেতেই কম্পিউটার এবং জেনারেল ট্রেডের আরও দু’জন ল্যাব এসিসট্যান্ট নিয়োগের কাগজ ধরিয়ে দেয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। কিন্তু, একই চিঠিতে প্রতিষ্ঠানের নাম চন্দ্রকলা এসআই উচ্চ বিদ্যালয় থাকলেও অনুলিপির স্থানে বড়াইগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি দেওয়া ছিল। এছাড়া, ওই চিঠিতে পদের নাম ‘ল্যাব এ্যাসিসটেন্ট’ না লিখে ‘ট্রেড এ্যাসিসটেন্ট’ লেখা দেখেছি। সেখানে ল্যাব এ্যাসিসটেন্ট পদে নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ নিলেও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের কোনো প্রতিনিধি বা ইনস্ট্রাক্টর ছিলেন না।
তিনি আরও বলেন, এছাড়া ২১ জুন বিজ্ঞপ্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এতগুলো অনিয়ম দেখে নিয়োগ না দিয়ে সেদিন ফিরে আসি। পরে আবারও চিঠি সংশোধন করে নিয়ে এলে ২৭ জুন ওই স্কুলে নিয়োগ বোর্ডে যাই। তখন জেলা প্রশাসক এবং ইউএনও সাহেবের ফোন পেয়ে নিয়োগ বন্ধ হয়।
এত অনিয়ম জেনেও কেন দুইবার সেখানে নিয়োগ দিতে গেলেন এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মতিন বলেন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার চিঠির প্রেক্ষিতে সেখানে যাই।
অবৈধভাবে নিয়োগ চেষ্টার বিষয়টি জানার পর গত ২৭ জুন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বিধি মোতাবেক আমরা নিয়োগ প্রক্রিয়া চালাচ্ছি। সব কিছু ঠিক আছে, কোনো অনিয়ম হচ্ছে না।
যদিও পরে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে নিয়োগ বন্ধ করেন তারা।
নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধের পর আবারও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্কুল কমিটি ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে নিয়োগ বোর্ড করেছিল। আমরা কাগজপত্র ভালোভাবে যাচাই করেছি। সমস্যা থাকায় নিয়োগ না দিয়ে ফিরে আসি।
তিনি আরও বলেন, স্কুল কমিটির অনেকেই প্রভাবশালী। তাই অনেক সময় কমিটির ইচ্ছার বাইরে কিছু করার সুযোগ থাকে না।
চন্দ্রকলা এসআই উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ওমর আলী প্রধান বলেন, ২২ জুন চিঠি দিয়ে ওই দিনই নিয়োগ বোর্ড গঠন করায় অনেক প্রার্থী পরীক্ষা দিতে আসতে পারবেন না বলে জানান। এ কারণে সেদিন নিয়োগ বোর্ড বাতিল করা হয়। পরে ২৭ তারিখ বোর্ড করেও একই সমস্যা হয়। প্রার্থীরা আমাকে ফোন করে বলে, অনেকে ঢাকায় আছেন তাই ওইদিনও নিয়োগ দেওয়া যায়নি। তবে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো অনিয়ম ছিল না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চন্দ্রকলা স্কুলে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানতে চাই। তিনি জানান, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নিয়োগ বোর্ড গঠন করে পরীক্ষা নিতে গেছেন। তখন বিজ্ঞপ্তির মেয়াদ আছে কিনা জানতে চাইলে মেয়াদ শেষ বলে জানান উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার। সব শুনে তাকে নিয়োগ বন্ধ করে চলে আসতে বলি।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, অনিয়মের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের চেষ্টার বিষয়টি জানার পর নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করা হয়েছে। আমার মেয়াদে কোনো ধরনের অনিয়ম হতে দেব না। কেউ যদি অনিয়মের চেষ্টা করে তাহলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সূত্র ঃ ভোরের পাাতা