পাঁচ শিক্ষার্থী বহিষ্কারের প্রক্রিয়া জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেত্রীসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে কোন প্রক্রিয়ায় বহিষ্কার করা হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দেন। লিখিত আকারে আগামী ২৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাতে বলা হয়েছে। আদেশে রিটকারী আইনজীবীকেও তাদের বক্তব্য লিখিতভাবে দাখিল করতে বলেছেন আদালত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের বহিষ্কার করা হয়। তাদের বহিষ্কার আদেশ উপস্থাপনের পর এই নিয়ে আদেশ দেন উচ্চ আদালত। এক বছরের জন্য এই পাঁচ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের তথ্য হাইকোর্টকে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) বিএম আবদুর রাফেল। সঙ্গে ছিলেন মোল্লা জীবন আহমেদ।
আদালত থেকে বের হওয়ার পর রিটকারী আইনজীবী গাজী মো. মহসিন বলেছেন, এ বহিষ্কার আদেশে বিধিসম্মত হয়নি। আইনগত ত্রুটি আছে। আর ডিএজি বলেছেন, বহিষ্কার আইন ও বিধিসম্মতভাবেই হয়েছে। সর্বোচ্চ শাস্তিই দেওয়া হয়েছে। তবে কোন প্রক্রিয়ায় তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে তা লিখিতভাবে জানাতে বলেছেন আদালত।
গাজী মো. মহসিন পরে সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী বলেছেন যথোপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আমি বলেছি উপযুক্ত শাস্তি হয়নি। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় আইনে বলা আছে, ভিসি প্রথম শাস্তি হিসেবে ৫০০ টাকা জরিমানা এবং এক বছরের জন্য বহিষ্কার করবেন। এরপর ভিসি যদি মনে করেন শাস্তি অপরাধের তুলনায় কম হয়েছে তা হলে তিনি এটা ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে পাঠাবেন। কিন্তু ভিসি নিজে শাস্তি না দিয়ে সরাসরি ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে পাঠিয়ে কমিটির মাধ্যমে শাস্তি দিয়েছেন। এতে আইনের ব্যত্যয় হয়েছে। তিনি বলেন, ভিসি ও কর্তৃপক্ষ দলীয় বিবেচনায় বহিষ্কার করেছেন। যাতে বহিষ্কার আদেশের বিরুদ্ধে বহিষ্কৃতরা আইনের আশ্রয় নিলে আদেশটা অকার্যকর হয়ে যায়। আদালত বলেছেন, এগুলো লিখিত আকারে দিতে। প্রসঙ্গত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফুলপরীকে নির্যাতনে জড়িত ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেত্রী সানজিদা চৌধুরীসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে চলতি বছরের ১৫ জুলাই এক বছরের জন্য বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সময় জানানো হয়, বহিষ্কৃতরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষাসহ কোনো কিছুতেই অংশ নিতে পারবেন না।
বহিষ্কৃত পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী ওরফে অন্তরা, চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার ঊর্মি, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মিম, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম ও একই বিভাগের মুয়াবিয়া জাহান। তাদের মধ্যে সানজিদা চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। আর অন্যরা ছাত্রলীগের কর্মী। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচজনকেই সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে।
উল্লেখ্য, গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের গণরুমে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ করেন ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুন। তার ভাষ্য, সানজিদা চৌধুরীর নেতৃত্বে তার অনুসারীরা তাকে নির্যাতন করেন।
এ সময় তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল ও ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। পরে ভুক্তভোগী ফুলপরী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হলের প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। এ ঘটনায় রিট হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের পাশাপাশি কিছু নির্দেশনা দেন উচ্চ আদালত।
এরপর তদন্ত প্রতিবেদনে নির্যাতনের সত্যতা মিললে অভিযুক্তদের হল থেকে বহিষ্কার করা হয়। একই প্রেক্ষিতে শাখা ছাত্রলীগ থেকেও তাদের বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া হাইকোর্টের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২০/০৭/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়