পল্লবী কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ
ঢাকাঃ রাজধানীর পল্লবী কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা জালিয়াতির অভিযোগ এনেছেন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ইসমাইল হোসেন ও শিক্ষকগণ। অভিযোগ রয়েছে- অধ্যক্ষ মো. মাহবুবুর রহমান নিয়ম লঙ্ঘন করে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রতিকার চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, পল্লবী কলেজে উপাধ্যক্ষ হিসাবে মো. মাহবুবুর রহমানকে ২০১৭ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর বিধি বহির্ভূত নিয়োগ কমিটি গঠন করে নিয়োগ প্রদান করেন। ফলে তৎকালীন গভর্নিং বডির সদস্য জাহাঙ্গীর এইচ সিকদার উক্ত নিয়োগ কমিটি পুনর্গঠন করার জন্য কলেজ সভাপতির বরাবর আবেদন করেন। সেইসঙ্গে তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর বরাবরও আবেদন করেন।
তিনি ওই বছরের অক্টোবরের ২৪ তারিখ হাইকোর্টে রিট পিটিশন মামলা করেন। যার নং ১৪৭১৪/২০১৭। বিষয়টি একই বছর ২৪শে অক্টোবর মহাপরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)কে ও ২৬শে অক্টোবর উপ-পরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা ঢাকা অঞ্চলকে জানান। তারা অভিযোগ করেন, রিটের বিষয়টি গোপন রেখে তাকে এমপিওভুক্ত করা হয়।
ওদিকে অধ্যক্ষ মর্জিনা রহমান ২০১৯ সালের ৯ই ডিসেম্বর অবসরে গেলে উপাধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে মাহবুবুর রহমান শূন্যপদে অধ্যক্ষের নিয়োগের ব্যবস্থা না করে তার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিধি মোতাবেক অধ্যক্ষ পদে আবেদনের যোগ্যতা অর্জনের জন্য সময় ক্ষেপণ করে দীর্ঘ ৩ বছর অবৈধভাবে কলেজ পরিচালনা করেন। এ বিষয়ে ১৫ই মার্চ ২০২২ আরেকটি রিট পিটিশন দায়ের করেন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ইসমাইল হোসেন। এই মামলায় রুল জারি হয়। গত ২০২২ সালের ২৯শে জুন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক প্রজ্ঞাপন জারি হয়, সেখানে অধ্যক্ষ পদ শূন্য হলে অধ্যক্ষের অবর্তমানে এক বছরের অধিক সময়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের সুযোগ নেই বলে জানানো হয়। এরপরও মাহবুবুর রহমান দায়িত্ব পালন করেন বিধায় কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ইসমাইল হোসেন গত বছরের ২০শে জুলাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর বরাবর আবেদন করেন। তখন ৩০শে জুলাই ৭ কার্য দিবসের মধ্যে বিধি অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে অবহিত করতে কলেজ সভাপতিকে পত্র প্রদান করা হয়।
সভাপতি ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে পুনরায় ৮ই নভেম্বর ২০২২ একই স্মারকে কলেজ সভাপতিকে পুনরায় পত্র প্রদান করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, গত বছরের ১৮ই নভেম্বর বিধি বহির্ভূতভাবে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক হোসনে জাহানের কোনো মতামত না নিয়েই ষষ্ঠতম কনিষ্ঠ শিক্ষক শেখ মোহসেনা মুক্তাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়। এ বিষয়ে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ইসমাইল হোসেন গত বছরের ১৫ই ডিসেম্বর জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হোসনে জাহান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর বরাবরে আবেদন করেন। এ আবেদনের পেরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ৭ই ফেব্রুয়ারি ৭ কার্য দিবসের মধ্যে বিধি মোতাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয়কে অবহিত করতে সভাপতিকে পত্র প্রদান করে। পত্র অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ না করে কলেজ গভর্নিং বডি পূর্বের সিদ্ধান্ত বহাল রাখায় পুনরায় কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ২২শে ফেব্রুয়ারি ও হোসনে জাহান জ্যেষ্ঠ সহকারী অধ্যাপক পহেলা মার্চ ভাইস চ্যান্সেলর বরাবর অভিযোগ প্রদান করেন। উক্ত অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন ১৮ই এপ্রিল দাখিল করেন।
প্রতিবেদন সঠিক হয়নি উল্লেখ করে ইসমাইল হোসেন ৫ই জুন না রাজি প্রদান করেন। বিধি মোতাবেক দুইটি জাতীয় পত্রিকায় অধ্যক্ষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের শর্ত থাকা সত্ত্বেও ২০২২ সালের ২২শে নভেম্বর শুধু একটি জাতীয় দৈনিকে অধ্যক্ষ শূন্যপদে আবশ্যক উল্লেখ করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হয়। উক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় পুনরায় ১৯শে জানুয়ারি দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি কলেজ নোটিশ বোর্ডে দেয়ার নিয়ম থাকলেও তা প্রকাশ করা হয়নি। উপাধ্যক্ষ নিজে অধ্যক্ষের প্রার্থী হন এবং কলেজের অপর এক সহকারী অধ্যাপক অধ্যক্ষ পদে আবেদন করলে তার আবেদন হাতে হাতে গ্রহণ না করায় তিনি ডাকযোগে পাঠালেও তা গ্রহণ করা হয়নি। চলতি বছরের ১৬শে মে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলেজকে অধ্যক্ষ নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি পত্র দেন।
অভিযোগ রয়েছে, অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মিথ্যাচার করে ছাত্রছাত্রী গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলে ১৮ই জুন কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে গোপনে ওইদিনই অধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণ করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকরির শর্তাবলী রেগুলেশন (সংশোধিত) ২০১৯ এর পরিপন্থি মাদ্রাসা পর্যায়ের পাঠদানের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন উপাধ্যক্ষ মো. মাহবুবুর রহমানকে অধ্যক্ষ হিসেবে বর্তমান সভাপতি নিয়োগ কমিটির মাধ্যমে সুপারিশ করান। আর উপাধ্যক্ষ এর নিয়োগ নিয়ে রিট চলমান থাকায় ১৮ই জুন একটি লিগ্যাল নোটিশসহ তাকে বিশ্ববিদ্যালয় ও মাউশিতে প্রেরণ করেন। এসব উপেক্ষা করে সভাপতি ২০শে জুন গভর্নিং বডির সভায় অধ্যক্ষ নিয়োগের সুপারিশ অনুমোদন করে অধ্যক্ষ নিয়োগের লক্ষ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বানুমতির জন্য পত্র প্রেরণ করেন।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, উপাধ্যক্ষের নিয়োগের বিষয়ে চলমান দুইটি রিটের নিষ্পত্তি না করে গভর্নিং বডির সভাপতি আবু মো. শায়খুল ইসলাম, মো. মাহবুবুর রহমানকে উপাধ্যক্ষ থেকে অধ্যক্ষ নিয়োগ অনুমোদন করেন।
তাই শিক্ষকগণ ও প্রতিষ্ঠাতা ইসমাইল হোসেন বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিব, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর, মাউশি’র মহাপরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ কামনাসহ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ইসমাইল হোসেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবরে অভিযোগ করে অনুসন্ধান দাবি করেন।
গভর্নিং বডির সভাপতি আবু মো. শায়খুল ইসলাম বলেন, আদালতের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবার কোনো সুযোগ নাই। রিটের বিষয়টি আমি অবহিতই না।
এ বিষয়ে মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ইসমাইল হোসেন যে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নিজেকে জাহির করছেন এটাইতো সঠিক নয়। তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, আমার নিয়োগ সঠিক প্রক্রিয়ায় হয়েছে। তিনি কলেজে প্রভাব বিস্তার করে রেখেছিলেন দীর্ঘদিন। এখন পারছেন না বিধায় ক্ষিপ্ত হয়ে এসব করছেন। সূত্রঃ মানবজমিন
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৫/০৮/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়