পদ না থাকলেও পদোন্নতি যোগ্যরা বাদ পড়ায় অসন্তোষ, হতাশা
নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
জনপ্রশাসনের ১৭৫ কর্মকর্তাকে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। নিয়মানুযায়ী পদোন্নতি দিয়ে কর্মকর্তাদের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে পরের দিন একই মন্ত্রণালয়/বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে। পদোন্নতিপ্রাপ্তদের মধ্যে ১৩ জন জেলা প্রশাসক রয়েছেন যাদের (ইনসিটু) আগের পদেই পদায়ন করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, এবারের পদোন্নতির পর যুগ্ম সচিবের সংখ্যা ৮৮৮ জনে দাঁড়িয়েছে।
তবে যুগ্ম সচিবের নিয়মিত পদসংখ্যা ৫০২টি। এর আগের দিন উপসচিব পদে ২৫৯ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়। পদোন্নতির পরে ৮৩০টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে উপসচিবের সংখ্যা দাঁড়ায় এক হাজার ৬৫২ জনে। স্থায়ী পদ না থাকায় এমনিতেই অনেক উপসচিব ও যুগ্ম সচিবকে নিচের পদে কাজ করতে হচ্ছে, এর ওপর নতুন করে পদোন্নতি দেয়া হলো। পদোন্নতিপ্রাপ্ত বেশির ভাগ যুগ্ম সচিবকে বর্তমান কর্মস্থলে (উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা স্থানে) থাকতে হবে। ফলে এক দশক ধরে সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকা সত্ত্বেও জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা ও গতিশীলতা আসছে না। প্রতিটি বিভাগেই অদক্ষতা ও মেধাহীনতার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি না পাওয়ায় কাজে আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেক মেধাবী কর্মকর্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রয়োজনীয় সংখ্যক পদ না থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনে চলছে গণপদোন্নতি। এমনি অবস্থায় প্রশাসনে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ ধরনের গণপদোন্নতি নিয়ে খোদ প্রশাসনেই বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ, অসন্তোষ ও হতাশা। বিশেষ করে পদবঞ্চিতদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বেশি। সচিবালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাথে আলাপে এসব তথ্য জানা গেছে।
জনপ্রশাসন সূত্র জানায়, ১১তম বিসিএস কর্মকর্তাদের কয়েকজন সচিব পদমর্যাদায় রয়েছেন। কিন্তু এ ব্যাচের অনেক কর্মকর্তাই এখনো উপসচিব রয়ে গেছেন। তাদের প্রায় সবাই হয় রাজনৈতিক, না হয় ব্যাচমেটদের ষড়যন্ত্রের শিকার। এরপর ২১তম বিসিএস পর্যন্ত যুগ্ম সচিব হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হলেও প্রতিটি ব্যাচেই সংখ্যাগরিষ্ঠ কর্মকর্তাই পদোন্নতিবঞ্চিত হয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে কর্মরত আছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ১১তম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রশাসনের নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না বিদ্যমান বিধিমালা। গুটিকয়েক কর্মকর্তার হাতে বন্দী হয়ে পড়েছে পুরো প্রশাসন। এমন পদোন্নতি দেয়ায় ব্যাচের অধিকতর জুনিয়র কর্মকর্তারা এখন নীতিনির্ধারক পর্যায়ে চলে গেছেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, আমার ব্যাচের কর্মকর্তারা সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেলেও আমি এখনো সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে কাজ করছি। আমি চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে সব জায়গাতেই সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। আমার বিরুদ্ধে কোনো বিভাগীয় মামলা বা অভিযোগ নেই। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি করিনি। এটাই আমার অপরাধ। আমার মতো অনেকেই মেধা ও যোগ্যতা থাকার পরও দলনিরপেক্ষ হওয়ায় পদোন্নতিবঞ্চিত হয়ে প্রশাসনের নিম্নস্তরেই কাজ করে যাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দীন আহমদ বলেন, পদোন্নতির মাধ্যমে কর্মকর্তাদের কাজে গতিশীলতা আসে। যোগ্যতা থাকার পরেও পদোন্নতি না পেলে উল্টো হতাশার সৃষ্টি হয়। এ জন্য কর্মকর্তাদের নিয়মিত পদোন্নতি হওয়া উচিত। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী পদ সৃষ্টি করা দরকার।